ফুটবল না সকার? নামকরণের ইতিহাস...
'
গোলাপকে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তা সুগন্ধ ছড়াবেই'- আটলান্টিকের দুপাড়ে ফুটবল আর সকার নিয়ে রেষারেষির মধ্যে কথাগুলো যে একদম খাপে খাপ মিলে যাবে সেই আন্দাজ বোধ করি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারেরও ছিল না।
ফুটবল বা সকার যে নামেই ডাকা হোক না কেন খেলাটির উৎপত্তি আজ থেকে আরও দুই হাজার বছর আগে। তবে ১৮৬৩ সালে ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) প্রথমবারের মতো খেলার নিয়মগুলো নির্ধারণ করে। সেই সময় এর আনুষ্ঠানিকভাবে এর নাম হয় 'অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল'।
ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও আধুনিক ফুটবলের অন্যতম পুরোধা ইংল্যান্ডের ইবেনজার মোরলে প্রথম ফুটবলকে ক্রিকেটের মতো সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মের আওতায় নিয়ে আসার কথা ভাবেন।
কিন্তু ফুটবলের নামের আগে এই অ্যাসোসিয়েশন শব্দ যোগ করার কী দরকার পড়েছিল? আসলে ফুটবলের আরেকটি জনপ্রিয় ধারা ছিল রাগবি, যাকে রাগবি ফুটবলও বলা হতো। দুটো খেলার পার্থক্য নির্দেশ করতেই ফুটবল পরিচিত ছিল অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল নামে।
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, ১৮৮০-র দশকে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাগবি ফুটবলকে 'রগার' এবং অ্যাসোসিয়েশন ফুটবলকে 'অ্যাসকার' বলার চল দেখা দেয়।
সময়ের সঙ্গে অ্যাসকার শব্দটি আরও সংক্ষিপ্ত হয়ে 'সকার' নাম ধারণ করে। দ্রুত তরুণদের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্যাম্পাসে সকার নাম জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসের বাইরেও।
গোলাকার বলের অ্যাসোসিয়েশন ফুটবল যতদিনে আটলান্টিক পাড়ি দেয়, ততদিনে আমেরিকায় ডিম্বাকৃতির হাতে ধরা আমেরিকান ফুটবল তুমুল জনপ্রিয়।
১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস সকার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএসএফএ) নিজেদের নাম থেকে ফুটবল অপসারণ করে ইউনাইটেড স্টেটস সকার ফেডারেশন (ইউএসএসেফ) নাম ধারণ করে।
ওদিকে সকার নামের উৎপত্তি ইউরোপে হলেও ১৯৮০-র দশকে নামটি ব্রিটিশদের কাছে ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ও আন্তর্জাতিক আয়োজনেও ফুটবল সর্বাধিক ব্যবহৃত নাম হয়ে ওঠে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো আমেরিকা বা কানাডায় সকার নাম কীভাবে টিকে গেল?
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, যেসব দেশে সকার নাম বহুল ব্যবহৃত, তাদের দেশে আগে থেকেই ফুটবলের বিকল্প বা কাছাকাছি অন্য কোনো খেলার প্রচলন রয়েছে।
যেমন, কানাডার আছে নিজস্ব গ্রিডিরন ফুটবল, আয়ারল্যান্ডের আছে গ্যালিক ফুটবল। আবার অস্ট্রেলিয়ানরা রাগবি থেকে উদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান রীতির ফুটবল নিয়েই বেশি মাতামাতি করে। তাই এসব দেশে ফুটবলকে নির্দিষ্ট করতে সকার শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার সঙ্গে আবারও 'সকার' নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। রয়টার্সের মতে, সে বছর বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে গড়ে ৬৮ হাজার ৯৯১ জন দর্শক উপস্থিত ছিল। প্রায় ৩০ বছরেও সেই রেকর্ড ভাঙেনি।
যুক্তরাষ্ট্রে অবশ্য ফুটবল শব্দের ব্যবহারও দেখা যায়। বিশেষ করে ক্লাব ফুটবলগুলোর নামের সঙ্গে সকারের পরিবর্তে ফুটবল শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। যেমন, নিউইয়র্ক সিটি এফসি (ফুটবল ক্লাব)।
ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি)-র মতে, 'সব মহাদেশে, সব দেশে, সব পর্যায়ে ফুটবল খেলার প্রচলন দেখা যায়। ফুটবলই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলা।'। একেক দেশে একেক নাম হলেও ফুটবল কিংবা সকার ভক্তরা আইএবএবির এই বক্তব্যের সঙ্গে যে একমত পোষণ করবেন তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
সূত্র: সিএনএন