সেনেগাল এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে দুর্দান্ত প্রতিপক্ষ!
কাতার বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের দ্বিতীয় দিনের ম্যাচে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড ও সেনেগাল। বাংলাদেশ সময় আজ রাত একটায় শুরু হবে এ ম্যাচ।
একে অপরের কাছে একেবারেই অচেনা দল দুটি। কারণ আগে কখনও মুখোমুখি হয়নি তারা।
ফিফা র্যাংকিং কিংবা দলীয় শক্তিমত্তা-সব দিক থেকেই এগিয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড। কিন্তু আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন সেনেগালের আছে দৃঢ় মানসিকতা। এই আত্মবিশ্বাসের জোরেই ইকুয়েডরকে হারিয়ে শেষ ষোলোতে জায়াগা করে নিয়েছে আলিয়ু সিসের দল। তাই ইংল্যান্ডের জন্য আফকনজয়ী সেনেগালকে বেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবেই মনে করেন ক্রীড়া কলামিস্ট জারমেইন জেনাস। বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রদিবেদনে উঠে এসেছে তার এমন অভিমত।
দীর্ঘ ২০ বছর পর বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের টিকেট পেয়েছে সেনেগাল। এর আগে ২০০২ সালের দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান আসরে শেষ ষোলোয় স্থান পেয়েছিল আফ্রিকার এই দেশটি, যা ছিল তাদের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ। সে আসরে দলটির অধিনায়ক ছিলেন বর্তমান কোচ আলিউ সিসে।
সেবছর প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে এক বড় চমক দেখিয়েছিল সিসের দল। হারিয়ে দিয়েছিল তখনকার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। নকআউট পর্ব টপকে কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছে গিয়েছিল সেনেগাল। কিন্তু পরের বিশ্বকাপ আসরগুলোতে তাদের চমকের আর দেখা মিলেনি।
হার না মানা মানসিকতা
সেনেগালে কয়েকজন দক্ষ ফুটবলার রয়েছেন। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এনে দিতে এই আফ্রিকান চ্যাম্পিয়নদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হবে তাদের হার না মানা মানসিকতা।
দেশের জন্য সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চলেছে আলিউ সিসের দল। এ বছর দুটো বড় আসরে বড়সড় বিজয় পেয়েছে তার দল।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে মোহাম্মদ সালাহর মিসরকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আফ্রিকা কাপ অব নেশনস (আফকন) চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। এর কয়েক সপ্তাহ পর বিশ্বকাপে খেলতে একই দলকে হারিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে বাছাই পর্বে।
সেনেগালের এমন এক কোচ রয়েছেন যিনি সকলের ভালোবাসায় সিক্ত! তার হাত ধরেই বিশ্বকাপের মঞ্চে আবার পদচিহ্ন পড়েছে লায়ন অব তেরাঙ্গাদের। তার নির্দেশনার বলেই আত্মবিশ্বাসী একটি দল সেনেগাল।
কেবল একজন সুপারস্টারের ওপর নির্ভরশীল নয় সেনেগাল
চলতি বছরের শুরুতে বিবিসির জন্য আফকন টুর্নামেন্ট কভার করার সুবাদে আফ্রিকান দলগুলোকে বুঝে ওঠার সুযোগ হয়েছিল আমার।
খেলা বিশ্লেষণ করে বোঝা গেল, উত্তর আফ্রিকান দল মিসর, মরক্কো, তিউনিশিয়ার বিপক্ষে জয় পেতে বেগ পেতে হয় আইভরি কোস্ট কিংবা নাইজেরিয়ার মতো তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী দলগুলোর। কারণ তাদের দলের ব্যাবস্থাপনা এক নয়; গুটিকয়েক খেলাওয়াড়ের ওপর নির্ভরশীলতা ছিল না উত্তর আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে।
জিততে হলে এই দলগত নীতিটি প্রয়োজন; এমন একটি সংগঠিত দল হতে হবে যেটি কেবল একজন সুপারস্টারের ওপর নয়, বরং পুরো দলের ওপর নির্ভরশীল।
স্পষ্টতই সেনেগাল এতে নীতিতে সফল। সাদিও মানে বিহীন সেনেগাল এবারের বিশ্বকাপে কত দূর যেতে পারবে, তা নিয়ে ছিল ঘোর সংশয়। কিন্তু দলের বাকিরা প্রথম রাউন্ড পার করে জানিয়ে দিলেন, 'আমরাও আছি।'
বায়ার্ন মিউনখের তারকা সাদিও মানে এ টুর্নামেন্টে খেলতে পারলে এবং আসন্ন ম্যাচটিতে ইদ্রিসা গুয়ে নিষিদ্ধ না হলে তারা আরও শক্তিশালী দল হতে পারত বটে, তবে বাকিরা অবশ্যই খেলা কিংবা দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
দলটির মেরুদণ্ডের দিকে তাকালেই তা বোঝা যাবে। এডওয়ার্ড মেন্ডি রয়েছেন গোলরক্ষক হিসেবে, তার চেলসি সতীর্থ কালিদু কুলিবালি আছেন রক্ষণভাগের প্রাণকেন্দ্রে। তাদের দক্ষতার পাশাপাশি আছে অভিজ্ঞতাও।
তবে তা সত্ত্বেও আমি মনে করি ম্যাচটিতে আধিপত্য থাকবে ইংল্যান্ডের, বল তাদেরই দখলে বেশি থাকবে। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে এই পর্যন্ত সেনেগাল হবে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় দুর্দান্ত প্রতিপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রও যথেষ্ট 'বিপজ্জনক' ছিল, কারণ সে ম্যাচে ইংল্যান্ড খুব একটা ভালো খেলতে পারেনি। কিন্তু সেনেগাল ইরান এবং ওয়েলসের মতো ইংল্যান্ডকে কেবল হতাশ করেই ছাড়বে না, কাউন্টার অ্যাটাক করে গ্যারেথ সাউথগেটের দলকে চাপের মধ্যেও রাখতে পারে।
তাই ইংল্যান্ডকে নিজেদের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে তারা ওয়েলসের বিপক্ষে সত্যিই ইতিবাচক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। সেনেগাল অবশ্যই সমস্ত প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের কীভাবে থামানো যায় সেদিকে খেয়াল রাখবে। তাই গ্যারেথ সাউথগেটকে তার গতি বজায় রাখতেই হবে।
আমার মনে হচ্ছে যেভাবেই হোক আমাদের এখন গতি বাড়াতে হবে। কারণ এ ম্যাচ জিতে গেলে কোয়ার্টার ফাইনালে সম্ভবত ফ্রান্সের মুখোমুখি হতে হবে ইংল্যান্ডকে। গ্রুপপর্বে হয়তো কোনো কোনো ম্যাচে তেমন ভালো খেলা হয়নি কিংবা প্রথমার্ধে সর্বোচ্চটা দেওয়া হয়নি, এরকমটা ঘটেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সেই সময় শেষ। এটা নকআউট পর্ব, ভালো খেলতেই হবে!
প্রথমার্ধে খারাপ খেললেও, দ্বিতিয়ার্ধে দ্বিগুণ তেজি হয়ে ফিরে আসার মতো দল ইংল্যান্ড। বিশেষ করে অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের সুবাদে এমনটা সম্ভব। কিন্তু ওয়েলসের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধ যেভাবে শুরু করেছিল-প্রথম মিনিট থেকেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার আপ্রাণ চেষ্টা নিয়ে, সেনেগালের বিপক্ষে সেভাবেই খেলতে হবে ইংল্যান্ডকে।
হ্যারি কেনদের পরাজিত করে বিশ্বকাপে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারবে কি কুলিবালিরা? আল বায়েত স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়তে পারবে সেনেগাল? নাকি শেষ আটে জায়গা করে নেবে গ্যারেথ সাউথগেটের ইংল্যান্ড?
তবে এই টুর্নামেন্টে ফলাফল যা-ই আসুক, লায়ন্স অব তেরাঙ্গাদের নিয়ে উদযাপন হবেই! দেশের জন্য দলের হয়ে সর্বোচ্চটা দিচ্ছেন তারা। সুতরাং শেষ ষোলোদের ম্যাচে তারা যাচ্ছে ব্যর্থতার ভয় ছাড়াই। তাই চাপের পুরোটাই রয়েছে ইংল্যান্ডের ওপর।