শীর্ষ নেতাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তবে বিকল্প ভেন্যুর বিষয়ে ইতিবাচক বিএনপি
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সাথে তীব্র সংঘর্ষের জেরে অন্তত পাঁচটি মামলায় শীর্ষ নেতাসহ বিএনপির ৪৪৫ কর্মীকে বৃহস্পতিবার (ডিসেম্বর) গ্রেপ্তারের পর জেলে নেওয়া হয়েছে।
এসব মামলায় আরও ২৩ বিএনপি নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মামলাগুলোয় সহিংসতা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাংচুর ও অন্যান্য অভিযোগে– বেনামে আরও কয়েক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
এই গ্রেপ্তার ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতের আলোচনায় দলটির বিভাগীয় গণসমাবেশ– কমলাপুর স্টেডিয়াম অথবা মিরপুর বাঙলা কলেজের মাঠ– এ দুই বিকল্প ভেন্যুতে আয়োজনের প্রস্তাব এসেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সাথে আলোচনা শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যন বরকত উল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশের প্রস্তাব করেছি, কিন্তু পুলিশ বাঙলা কলেজের মাঠে আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে।
'আজ রাতে দুটি ভেন্যু পরিদর্শনের পর আমরা তাদের (পুলিশকে) জানাব' বলেন তিনি।
এর আগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজনের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল বিএনপি।
এদিন বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করব। সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক সমাবেশ অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।"
তবে ডিসেম্বরের ১০ তারিখে নয়াপল্টনে সমাবেশ আয়োজনের বিষয়ে বিএনপিকে হুঁশিয়ার করেছেন স্বরাষ্ট্র-প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, 'সমাবেশের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না, রাস্তায় কোনো সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না'। বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে রাজি হলে তাদের পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে সেখানে বিরোধী দলটিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল ডিএমপি।
বুধবারে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়। এরপর বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। এপ্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপিকে দায়ী করে বলেছেন, পুলিশ শুধু আত্মরক্ষার্থে টিয়ারশেল ছোঁড়ে।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, কোনোপ্রকার উস্কানি ছাড়াই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হঠাৎ করে হামলে পড়ে পুলিশ। গণসমাবেশ ভণ্ডুল করতে দলীয় কার্যালয়ে পুলিশ বোমা উদ্ধারের নাটক করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দলটির শীর্ষ এই নেতা বলেছেন, 'আমাদের অফিস থেকে বোমা উদ্ধার, পুলিশের সাজানো নাটক ব্যতীত আর কিছুই নয়'।
নয়াপল্টন 'মুক্ত'
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলামত সংগ্রহ ও ককটেল উদ্ধারের" পর পুলিস নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তা চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এসময় বিএনপি অফিসের প্রধান ফটকের তালাও খোলা হয়।
বুধবারের সংঘর্ষের পর রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কের ৯০০ মিটার জায়গা 'ক্রাইম সিন' হিসেবে হিসেবে চিহ্নিত করে, কর্ডন করে রাখে পুলিশ।
এপ্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, "একাধিক ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় ক্রাইম সিনে সিআইডির আলামত সংগ্রহ ও তদন্তের পর ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।"
এদিকে বৃহস্পতিবারেও নয়াপল্টনে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সরকার-বিরোধী স্লোগান দেওয়ায় এসময় ৪-৫ জনকে আটক করে পুলিশ।
মহাসড়কে পুলিশের চেকপোস্ট
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের জেলা প্রতিনিধিরা- দেশের বিভিন্ন এলাকার মহাসড়কে স্বাভাবিকের চেয়ে দূরপাল্লার বাস কম চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন।
বিরোধী দলের গণসমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে চেকপয়েন্ট বসিয়ে ঢাকাগামী যাত্রীদের তল্লাশি করছে বলেও জানান তারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সকল প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে তল্লাশি তৎপরতা বাড়ায় পুলিশ। র্যাব জানায়, বিএনপির সমাবেশের আগে তারাও নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।
গাবতলী, সায়েদাবাদ ও টঙ্গীতে ঢাকায় আসা সকল বাস, সিএনজি-চালিত অটোরিকশা, কার তল্লাশি করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশ যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তাদের মোবাইল পরীক্ষা করছে, আর সাথে 'বডি সার্চ' তো আছেই।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের কর্মীরা যেন রাজধানীতে আসতে না পারে– সেজন্যই এসব চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেবেন না: আসক
এদিকে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থা- আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, "নাগরিকদের বিভিন্ন অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠান। এক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বা শক্তিপ্রয়োগ করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মূল্যবোধের পরিপন্থী। আসক শান্তিপূর্ণভাবে সভা সমাবেশ করে মত প্রকাশের অধিকার যাতে খর্ব না হয় এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের যেন ব্যত্যয় না ঘটে তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানায়।"