আমদানি স্বাভাবিক, বেড়েছে ইউরিয়ার মজুদ
ডলার সংকটের কারণে ইউরিয়া সার আমদানিতে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা কেটে গেছে এবং আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) সূত্রে জানা যায়। ফলে বর্তমান সময়ে চাহিদার তুলনায় স্থানীয় বাজারে ইউরিয়া সারের সরবরাহ বেড়েছে এবং একইসঙ্গে মজুদও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিসিআইসি সূত্র জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের জিটুজি পদ্ধতিতে ১৬টি লটে ৪.৮০ লাখ টন সার আমদানির চুক্তি রয়েছে। যেখানে প্রতি লটে ৩০ হাজার টন করে ইউরিয়া আমদানি হচ্ছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে সেপ্টেম্বর মাসে পেমেন্ট নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। সময়মত পেমেন্ট করতে না পারায় সৌদি আরবের দুটি ব্যাংক ৬ ও ৭তম লটের এলসি বাতিল করে।
এই এলসি বাতিলের প্রভাব পড়ে পরবর্তী লটের সার আমদানির উপর। সে সময় বিসিআইসি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্রুত আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করে চিঠি দেয়। তখন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
বিসিআিইসি বলছে, বর্তমানে ১৬তম লটের ইউরিয়ার সারও আমদানি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। আমদানিতে জটিলতা তৈরি হওয়ায় বোরোতে সরবরাহ সংকটের যে আশংকা করা হয়েছিল সেটা কেটে গেছে।
এই বাইরে সরকার সৌদি আরব থেকে আরও ১.২০ লাখ টন সহ মোট ৬ লাখ টন ইউরিয়া আমদানি করবে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, চলতি ডিসেম্বর মাসে ৩ লাখ টনের ইউরিয়া সারের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে সরকারের কাছে এখন ৯.৬৩ লাখ টন ইউরিয়ার মজুদ রয়েছে।
গত আমন মৌসুমে ইউরিয়ার সংকট ও বাড়তি দামের কারণে সারাদেশের কৃষকদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। আবার সরকারও ইউরিয়ার কেজিতে ৬ টাকা করে দাম বাড়িয়ে দেয়। যেখানে সরকার সারাদেশে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশনা প্রদান করছে। ফলে সরকার ধানের সবচেয়ে বড় উৎপাদন মৌসুম বোরোতে যাতে ইউরিয়ার সংকট না হয় সে বিষয়ে সতর্ক হতে শুরু করে।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে স্থানীয় ইউরিয়া উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ থাকায় আমদানির উপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। আমদানি যখন বাড়তি গুরুত্ব পায় তখনই ডলার সংকটের কারণে সরবরাহ পরিস্থিতি ভঙ্গুর হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।
বিসিআইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'ঐ সময়টাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটু গাফিলতির কারণে সমস্যাটা হয়েছিল। এখন সেটা কেটেছে এবং আমদানিও স্বাভাবিক হয়েছে।'
সরকার প্রতি বছর সৌদি আরব, কাতার ও দুবাই থেকে ১২ লাখ টন ইউরিয়া আমদানি করে। সবগুলোই জিটুজি প্রক্রিয়ায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করে থাকে সৌদি আরব থেকে। এ বছর ইউরিয়ার মোট চাহিদা রয়েছে ২৬ লাখ টন। এর সঙ্গে নিরাপত্তা মজুদ গড়তে হবে আরও ৮ লাখ টনের। সবমিলে সরকারকে ৩৪ লাখ টন ইউরিয়ার যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
ইউরিয়ার এই যোগান নিশ্চিত করতে সরকার এবার ১০.৫ লাখ টন ইউরিয়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কারখানাগুলো ক'দিন পরপরই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এটা ৫ লাখ টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
বিসিআইসির সরবরাহ ও বিতরণ পরিস্থিতির সর্বশেষ আপডেট তথ্য বলছে, গ্যাস সংকট ও মেইনটেইন্যান্স এর কারণে এখনো তিনটি সার কারখানা বন্ধ রয়েছে।
বিসিআইসি বলছে, বর্তমানে মার্কেটে আড়াই লাখ টনের বেশি ইউরিয়া রয়েছে। গুদামে রয়েছে ৫.৮২ হাজার টন ইউরিয়া। এর সঙ্গে ৩.৮০ হাজার টন ইউরিয়া বন্দরে রয়েছে খালাসের অপেক্ষায়। সবমিলে সরকারের কাছে মোট ৯.৬৩ লাখ টন ইউরিয়ার মজুদ তৈরি হয়েছে।
ইউরিয়ার এই মজুদ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। গত অর্থবছরের এই সময়ে সরকারের স্টকে ছিল ৮.২৮ লাখ টন ইউরিয়া। এই সময়ের মধ্যে উৎপাদন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে স্থানীয় উৎপাদন ছিল ৩.৭৫ লাখ টন, যেটা এবারে ৩.৫১ লাখ টনে নেমে এসেছে। কারখানা বন্ধ থাকায় এই উৎপাদন সামনের দিনগুলোতে আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ কারণে আমদানিতে বাড়তি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে সরকার। যার প্রমাণ মেলে আমদানির চিত্র থেকে। এই অর্থবছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সরকার ১০.৪৪ লাখ টন ইউরিয়া আমদানি করেছে। যেটা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭.৮৭ লাখ টন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিআইসি ইউরিয়ার আমদানি ও উৎপাদনের দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় সারা বছর কী পরিমাণ ইউরিয়ার প্রয়োজন সেই চাহিদা তৈরি করে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরা টিবিএসকে বলেন, 'আমরা চাহিদা অনুযায়ী ইউরিয়া সার পাচ্ছি। বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী স্টক ও বাজারে ইউরিয়ার সরবরাহে কোন সমস্যা নেই।'
ইউরিয়ার পাশাপাশি সরকার এমওপি সারের মজুদের উপরও গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বেলগ্রেড এবং দুবাইভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ লাখ টন এমওপি সার আমদানির চুক্তি করেছে। যা এখন এলসি খোলার পর্যায়ে রয়েছে।