২০৩০ সালের মধ্যে শিপিং করপোরেশনের বহরে যুক্ত হবে আরো ২০ জাহাজ
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের বিদ্যমান ৮টি জাহাজসমৃদ্ধ বহরে বাল্ক কন্টেইনার এবং কন্টেইনার ক্যারিয়ারসহ আরও ২০টি জাহাজ যুক্ত করবে।
রোববার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) পরিচালনা পরিষদের ৪৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এ তথ্য জানান নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে সভাপতি নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেন।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "বিএসসি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২২৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জন করেছে। সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। বিএসসির প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি থাকায় ভবিষ্যতে জাতীয় পতাকাবাহি রাষ্ট্রীয় এই সংস্থা আরো অধিক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হবে।"
সভায় ২০২১-২২ অর্থ বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিএসসি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এস এম মনিরুজ্জামান।
তিনি জানান, ২০২১-২২ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা। গত হিসাব বছরের ইপিএস ছিল ৪ টাকা ৭২ পয়সা। এ হিসাবে এক বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা ২১৩ শতাংশ বেড়েছে।
সভায় উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিএসসির আয়ের পরিমাণ ৪৪৯ কোটি ৫৭ লাখ ৩০ হাজার ৪৫০ টাকা; যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬৩.৯১% বেশি। পরিচালনা ব্যয়ের পরিমাণ ১৭১ কোটি ২৮ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩০ টাকা যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ৬.৯১% বেশি।
এবার বিএসসির নিট লাভের পরিমাণ ২২৫ কোটি ৮০ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৪ টাকা, যা গত অর্থ বছরের নিট লাভের তুলনায় ২১৩.৫২%। সবমিলিয়ে বর্তমানে বিএসসির মোট সম্পদের পরিমাণ ৩১০৫ কোটি ৩৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬২২ টাকা যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ৯.৫৪% বেশি।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সচিব মো. মোস্তফা কামাল শেয়ার হোল্ডারদের উদ্দেশ্যে বলেন, "বিএসসি তার অংশীজনদের স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা দেখাতে চায়। ইতোমধ্যেই চীন থেকে নতুন ৪টি জাহাজ কেনার সকল কার্যক্রম শেষ করে ফেলেছি এবং চুক্তি সাক্ষর হলেই জাহাজ বানানোর কাজ শুরু হবে। বড় আকৃতির এমন জাহাজ বিএসসির কাছে এখন পর্যন্ত একটাও নেই।"'
"দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে জাহাজের জন্য আলোচনা এগিয়ে গেছে; এছাড়াও আরও একটি কোম্পানির সঙ্গে আমরা মেমোরেন্ডাম সাক্ষর করেছি। সুতরাং চারটির ডিপিপি এখন আমাদের হাতে, অন্য দুটির এমওইউ সাক্ষর হয়েছে,"
"আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের আগেই বড় বাল্ক ক্যারিয়ার ও কন্টেইনার ক্যারিয়ারসহ কমপক্ষে ২০টি জাহাজ বিএসসির বহরে যুক্ত করা," বলেন তিনি।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি) মোহাম্মদ ইউসুফ টিবিএসকে জানান, নতুন ৬ জাহাজের মধ্যে রয়েছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি মাদার ট্যাংকার, ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও ৮০ হাজার টন ধারণক্ষমতার দুটি বাল্ক ক্যারিয়ারও কেনা হচ্ছে।
১৯৭২ সালে 'বাংলার দূত' ও ১৯৭৩ সালে 'বাংলার সম্পদ' জাহাজ দিয়ে যাত্রা শুরু করে বিএসসি। তাদের বহরে ছিল সর্বোচ্চ ৪৪টি জাহাজ। ১৯৮০ সালে সেই সংখ্যা নেমে আসে ২৬-এ। সেই ধারা অব্যাহত থেকে একপর্যায়ে মাত্র দুটি জাহাজ নিয়ে ধুঁকতে থাকে বিএসসি।
দীর্ঘদিন পর ২০১৮ সালে বিএসসির বহরে নতুন ছয়টি জাহাজ যুক্ত করা হয়। যার একটি (বাংলার সমৃদ্ধি) বর্তমানে রকেট হামলায় পরিত্যাক্ত হয়ে ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বনির্ভর উল্লেখ করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, "যেই বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ছোট্ট একটি কালভার্ট নির্মাণ করতে অনুদানের জন্য বছরের নয়টি মাস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করতেন, সেই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।"
নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, "দক্ষ নাবিক তৈরিকল্পে দেশে একটি মাত্র মেরিন একাডেমি ছিল। বর্তমানে দেশে পাঁচটি মেরিন একাডেমি রয়েছে। আরো তিনটি প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনায় সমুদ্র পথেও আমাদের সুনাম অব্যাহত থাকবে। এসডিজি গোল ২০৩০ এবং রূপকল্প ২০৪১ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি শিপিং সংস্থা গড়ে তুলতে বিএসসিকে একটি মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহরে পরিণত করা হচ্ছে।"
ইউক্রেনে বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে রকেট হামলার ঘটনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, "ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরের অসহযোগীতার কারণেই বাংলার সমৃদ্ধি হামলার মুখে পড়েছিলো। তবে প্রধানমন্ত্রী কূটনৈতিক দুরদর্শিতার কারণে আমাদের নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এছাড়া নিহত নাবিক হাদিসুরের পরিবারের জন্য সরকার যা যা করার সব করেছে।"
সভায় শেয়ার হোল্ডারদের পক্ষ থেকে চারজন বক্তব্য রাখেন। সভায় বিএসসির সচিব মোহাম্মদ লাল মিয়াসহ শেয়ারহোল্ডার, বিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।