হুড়মুড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে মরক্কোর জার্সি
বিশ্বকাপে মরক্কোর অভূতপূর্ব সাফল্য দোহার সৌক ওয়াকিফের দোকানদারদের জন্য এক মধুর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তর আফ্রিকান দলটির সবগুলো রেপ্লিকা জার্সি বিক্রি হয়ে গেছে এবং এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই এই মার্কেটের সরু সরু গলিগুলোর আপাদমস্তক পরিবর্ত নহয়ে গিয়েছে। আরব পোশাকের বদলে সেখানে জায়গা নিয়েছে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর জার্সি, পতাকা, স্কার্ফসহ অন্যান্য জিনিস। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং স্বাগতিক কাতারের জার্সি। তবে প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠা মরক্কো বাকি সব দলকে সরিয়ে জায়গা করে নিয়েছে।
"নভেম্বর মাসে, আমরা অর্ডার করা কয়েক ডজন জার্সি থেকে প্রতিদিন হাতেগোনা কিছু মরক্কোর জার্সি বিক্রি করতাম," মরোক্কো পর্তুগালকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান এবং প্রথম আরব সেমিফাইনালিস্ট হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর আল জাজিরাকে জানিয়েছিলেন দোকানদার মুহাম্মদ সাদিক।
গ্রুপ পর্বে মরক্কো পয়েন্ট সংগ্রহ শুরু করার সাথে সাথে দলের জার্সি এবং অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়তে থাকে। নকআউট পর্বে অ্যাটলাস লায়ন্সরা স্পেন ও পর্তুগালকে হারানোর পর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
"প্রতিবার মরক্কো জিতলে, আমরা সেদিনই আরও কয়েকশ শার্টের অর্ডার দিতাম এবং পরের ম্যাচের দিনে দুপুরের মধ্যেই সেগুলো বিক্রি হয়ে যেত," সাদিক যোগ করলেন।
দলটি সেমিফাইনালে ওঠার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মরোক্কান সমর্থক দোহায় উড়ে আসছেন। দোহায় পৌঁছানোর পর তাদের প্রথম গন্তব্য হলো সৌক ওয়াকিফ, এবং তাদের কেনাকাটার তালিকায় প্রথম আইটেমটি হলো একটি মরক্কোর জার্সি, পতাকা, অথবা দুটোই।
পর্তুগালের বিপক্ষে মরক্কোর জয়ের একদিন পর আনাস এল করিম বার্লিন থেকে এসেছিলেন। "আমাকে বলা হয়েছিল যে আমি এখানে আমার দলের জার্সি খুঁজে পাবো, কিন্তু মনে হচ্ছে সবগুলো বিক্রি হয়ে গেছে," হতাশার নিয়ে জানালেন তিনি। তবে সাদিক জার্সির স্তূপের মধ্য থেকে তার নতুন গ্রাহকের জন্য একটি জার্সি টেনে বের করলেন।
কেবল মরোক্কানরাই নয়, বরং দোহায় থাকা অনেক স্থানীয় সমর্থকরাও মরক্কোকে সমর্থন জানানো শুরু করেছেন।
সাদিকের দোকানে একটি মরক্কোর জার্সি খুঁজতে গিয়ে ইউসুফ আহমেদ নামের এক ভারতীয় ফুটবল দর্শক আল জাজিরাকে জানালেন, "আমি মরক্কো সমর্থন শুরু করিনি যতক্ষণ না দেখলাম তারা বড় ইউরোপীয় দলগুলোকে হারাতে শুরু করেছে। আমি অনেক দিন ধরেই তাদের জার্সি খুঁজছি। কিন্তু যতবারই আমি এখানে আসি, জানতে পারি তা বিক্রি হয়ে গেছে। তাই এখন আমাকে পতাকা দিয়েই কাজ সারতে হবে।"
আয়োজক দেশ কাতারের রাস্তাঘাঁট দখল করেছে মাঝখানে সবুজ তারা খচিত উজ্জ্বল লাল রঙের পতাকাটি। আরব বিশ্বের সমর্থকরা স্টেডিয়াম এবং ফ্যানজোনে গর্বনিয়ে মরক্কোর পতাকা ওড়াচ্ছেন। বড় বড় স্কাইস্ক্র্যাপার থেকে, অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে লালরঙা পতাকা। কাতারে ফিলিস্তিনের পতাকার পরেই সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে মরক্কোর পতাকা।
শরফুদ্দিন নামের এক নেপালি কাপড়ের দোকানদার জানান, 'এমনকি পাকিস্তানি, ভারতীয় আর বাংলাদেশিরাও মরক্কোর পতাকা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন।' 'একদল পাকিস্তানি আর বাংলাদেশি লোক লাল রঙের কাপড় কিনে নিয়ে গিয়ে বাসায় গিয়ে এই পতাকা বানিয়েছেন। মাঝকাহ্নের সবুজ তারা খুব একটা ভালো হয়নি। কিন্তু তারপরেও ক্রেতারা এটাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।' কাতার আর ফিলিস্তিনের পতাকার পাশে থাকা মরক্কোর পতাকাগুলোর দিকে নির্দেশ করে ফলেন শরফুদ্দিন।
সাদিক, যিনি ৩০ রিয়াল বা ৮ ডলারের বিনিময়ে একেকটি মরক্কোর জার্সি বিক্রি শুরু করেছিলেন, জানান যে, এখন বাজে কোয়ালিটির জার্সিও তিনি অনায়াসে ৫০ রিয়াল বা ১৪ ডলারে বিক্রি করতে পারছেন।
"আমাদের সাপ্লাইয়াররা জানিয়েছেন বাংলাদেশ আর চীনে কোনো জার্সি আর বাকি নেই। তাই আমাদের হাতে যা আছে, তা-ই দিয়েই লাভ করতে হচ্ছে।"
দোকানগুলো গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দারুণ ব্যবসা জমিয়েছে, এবং আগামী কয়েকদিনের জন্যও যা লাভ করা যায়, তার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
মরক্কো যদি সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে দেয়, সাদিকের মতো দোকানদারদেরকে তখন ভাবতে হবে কীভাবে তারা মরক্কোর জার্সির চাহিদা মেটাবেন, যারা পুরো দেশকে লাল রঙে রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য কাতারে ভিড় জমাবেন।
সূত্র: আল জাজিরা