ডিইপিজেড কারখানায় কর্মরত ৭৫% নারীশ্রমিক মানসিক ও মৌখিক হয়রানির শিকার: গবেষণা
ঢাকা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ডিইপিজেড) এর কারখানায় কাজ করতে গিয়ে ৭৫ শতাংশ নারীশ্রমিক মানসিক ও মৌখিকভাবে হয়রানির শিকার হন। কর্মজীবী নারী'র গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
'ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শ্রমিকদের অধিকার: বর্তমান পরিস্থিতি এবং উদ্যোগের উপর জাতীয় সংলাপ' বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন কর্মজীবী নারী'র গবেষণা অফিসার ফারহানা জোবাইদা ঊর্মি।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডায়লগে এ প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার।
ডিইপিজেড এলাকার নারীশ্রমিকদের বাসস্থান সাভারের আশুলিয়ার ভাদাইল এবং শ্রীপুর গ্রামের ৩০০ জন নারীশ্রমিককে নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। গত বছর জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এ গবেষণা শেষ হয় চলতি বছরের জুনে।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিইপিজেড সাভারের আশুলিয়া ধামসোনা ইউনিয়নের ভাদাইল গ্রামে অবস্থিত। ফারহানা জোবায়দা জানান, এখানে বর্তমানে ৫ লাখ ১৬ হাজার ৫৮৮ জন শ্রমিকের মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী।
গবেষণায় উঠে এসেছে, যে কোন ধরনের হয়রানি শিকার হলে ৫৭% নারীশ্রমিক বেপজা বা সংশ্লিষ্ট কারখানায় অভিযোগ করতে ভয় পায়। ৩২% নারীশ্রমিক যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলে কোন ধরনের অভিযোগ করে না।
সভাপতির বক্তব্যে কর্মজীবী নারী'র ভাইস প্রেসিডেন্ট উম্মে হাসান ঝলমল বলেন, "একজন সুস্থ শ্রমিক সুস্থ উৎপাদন দিতে পারে। এজন্যে নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।"
টিবিএস'কে তিনি বলেন, "নারীরা যে হয়রানির শিকার হন, তার ৮০% ঘটনা ঘটে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ যারা ওখানে দেখাশোনার জন্য থাকে অর্থাৎ সুপারভাইজার, লাইন ম্যানেজার দ্বারা।"
তিনি বলেন, "এখন শ্রমিকদের ডাটাবেজ ডিজিলালাইজ হওয়ার পরে একটি অসুবিধা হয়েছে। কাউকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার পর তাদের আইডি নাম্বার সব কিছু অনলাইনের দিয়ে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে অন্য প্রতিষ্ঠানেও নতুন করে তাকে আর চাকরিতে নিতে চায় না।"
প্রতিবেদনে উঠে আসে, ২২% নারীশ্রমিক বলছেন তাদের কারখনায় এন্টি-হ্যারাসমেন্ট কমিটি আছে, তবে এই কমিটি থেকে কোন হয়রানি ঘটনায় তত্ত্বাবধায়ন করতে তারা দেখেনি।
নাম প্রকাশ না করে এক নারীশ্রমিকের বক্তব্য তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, "আমাদের কারখানায় কোন বিচার নেই, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি মালিকের পক্ষে কাজ করে, যিনি অভিযোগ করেন তাকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।"
এক নারীশ্রমিক বলেছেন, কাজ করার সময় তার লাইনের সুপারভাইজার তার হাত ধরে অশালীন মন্তব্য করার পরেও, চাকরি হারানোর ভয়ে তিনি এর প্রতিবাদ করতে পারেন নি।
এমপি শিরীন আক্তার বলেন, "আন্তর্জাাতিক পর্যায়ে ইপিজেড নিয়ে কথা বলতে হবে, ইপিজেড এর বায়ারদের সাথে শ্রমিক অধিকার নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। গার্মেন্টস ও ইপিজেডসহ সকল শ্রম খাতকে একসাথে করে সুপারিশমালা তৈরি করা যেতে পারে।"
"শ্রম অধিকার রক্ষায় নারী শ্রমিকসহ সকল শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলোকে মাঠের আন্দোলন শক্তিশালী করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেডিকেল অ্যান্ড লেবার ওয়েলফেয়ার সেকশন ডিপার্টমেন্ট অব লেবারের পরিচালক ড. আলপনা সরকার বলেন, "ইপিজেড এ এক ধরনের শ্রম আইন ও ইপিজেড এলাকার বাইরে আরেক ধরনের শ্রমআইন থাকতে পারে না। একই দেশে দুই শ্রম আইন থাকা উচিত নয়।"
নারী শ্রমিকরা যে সুপারিশ দিয়েছেন
সব কারখানায় কার্যকর ও পক্ষপাতবিহীন এন্টি-হ্যারেসমেন্ট কমিটি গঠন করতে হবে। কারখানার বিভিন্ন কমিটিকে ( যেমন শ্রমিক কল্যাণ সমিতি, এন্টি-হ্যারেসমেন্ট কমিটি, সেফটি কমিটি, পার্টিসিপেশন কমিটি) নূন্যতম তিন মাস পরপর শ্রমিকদের সাথে সাধারণ সভা করতে হবে। অভিযোগ বক্সে জমা পড়া অভিযোগসমূহের সটিক বিচার করতে হবে।
বেপজা বর্তমানে চট্টগ্রাম ইপিজেড, ঢাকা ইপিজেড, মোংলা ইপিজেড, ঈশ্বরদী ইপিজেড, কুমিল্লা ইপিজেড, উত্তরা ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড এবং আদমজী ইপিজেডসহ ৮টি অপারেশনাল এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) তত্ত্বাবধান করছে।