৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে জামায়াতের বড় শো-ডাউনের প্রস্তুতি
আগামী ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে যুগপৎ আন্দোলনের গণমিছিলে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীরও বড় ধরণের শো-ডাউনের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে দলটির ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের জেলার নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি মিটিং ও বিভিন্ন জেলা-মহানগরের নেতাকর্মীদের ঢাকামুখী হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্র শিবিরের সাবেক এক কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান ঢাকা মহানগরের জামায়াতের এক নেতা টিবিএসকে বলেন, '৩০ ডিসেম্বর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জামায়াত স্মরণকালের সেরা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকবে। গত ২৪ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম গণমিছিলে সারাদেশের জামায়াত সরকারের সকল বাধা উপেক্ষা করে অনেক বড় বড় শো-ডাউন করেছে, যার ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি চাঙ্গা মনোভাব দেখা যাচ্ছে, আর তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এখন সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো কর্মসূচি চাচ্ছে।'
রোববার ঢাকা জেলা দক্ষিণ জামায়াতের ভার্চুয়ালি এক মিটিংয়ের প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল মান্নান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, 'জুলুম-নির্যাতন অনিবার্য পরিণতি। সকল প্রকার ভয়-ভীতি, জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলা করেই ময়দানে সকলকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।'
তিনি নেতাকর্মীদের বলেন, 'এ অবৈধ সরকারের পতনের লক্ষ্যে চলমান গণআন্দোলনকে বেগবান করতে সকলকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে।'
৩০ ডিসেম্বর ছাত্র শিবির মাঠে থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বর্তমান ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের এক সদস্য টিবিএসকে বলেন, 'ছাত্রশিবির পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকবে, তবে ছাত্র সংগঠনের ব্যানারে নয়, জামায়াতের ব্যানারে কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
বিরোধী দল ঘোষিত ১০-দফা দাবির ভিত্তিতে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের মুক্তির দাবিতে ইতোমধ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত প্রথম দিনের যুগপৎ আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন মহানগর-জেলায় গণমিছিলে বড় ধরণের শো-ডাউন দেখিয়েছে দলটি। খুলনা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশি বাধায় বিএনপি ঠিকমতো কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও জামায়াত মহাসড়কে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বড় শো-ডাউন করে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম গত শনিবার এক বিবৃতিতে দাবি করেন, 'নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলি ও হামলা চালায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত এবং প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বিনা উস্কানিতে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ মিছিলে পৈশাচিকভাবে গুলি চালিয়ে নেতাকর্মীকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। যুগপৎ আন্দোলনের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আজ গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে মাঠে নেমেছে।'
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় ১৬ জন, জয়পুরহাটে ১২ জন, নোয়াখালীতে ১২ জন, দিনাজপুরে ১১ জন, নাটোরে ৮ জন এবং কুমিল্লায় ২৪ জন জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
২৪ তারিখের ঘটনায় লক্ষীপুরে জামায়াতের ২৭১ নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় জামায়াত নেতাদের পুলিশি হয়রানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের প্রথম সারির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দেয়ায় সময় দলটি সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া দেখায়, সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরে জামায়াতও বিএনপির সাথে মাঠে আন্দোলন গড়ে তুলে, সেই আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে ২০২২ পর্যন্ত তেমন বড় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মাঠে দেখা যায়নি জামায়াতকে, সরকারের কঠোর দমননীতির কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও রাজনীতির মাঠে খুব একটি সুবিধা করতে পারেনি দলটি।
জামায়াত নেতারা জানায়, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জামায়াত সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকলেও সেই সময় বিএনপি মাঠে থাকতে পারেনি, যার ফলে ঐ সময় সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হয়, কিন্ত বিগত কয়েক মাস ধরে বিএনপি মাঠের আন্দোলনে বেশ সক্রিয় সাড়া ফেলেছে, যার কারণে জামায়াত এখন বিএনপির প্রতি আন্দোলন নিয়ে আশাবাদী হচ্ছে, তারাও এখন বিএনপির সাথে পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে আন্দোলন গড়ে তুলে সফল হতে চায়।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, 'আমরা সরকারের সব অনিয়ম, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সকল অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে মাঠে সক্রিয় রয়েছি।'
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য ও খুলনা মহানগরীর আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, 'বর্তমানের অবৈধ সরকার দেশটাকে একনায়কতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। আমরা এখনো মাঠে আছি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আশা করিগণ আন্দোলনের মুখে এই সরকারের পতন হবে।'