নভেম্বরে আগের বছরের তুলনায় কমেছে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছরে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি কমছে। নভেম্বরে এই হার ৯ শতাংশ বাড়লেও গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এই হার ছিল গড়ে প্রায় ১৬ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, নভেম্বরে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি অক্টোবরের তুলনায় কিছুটা কম।
এছাড়া নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এনবিআরের ১২ শতাংশ আদায় কম হয়েছে প্রায়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরে ২৮ হাজার ২৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংস্থাটি ২৪ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
একই মাসে আমদানি পর্যায়ে কাস্টমস ডিউটি ও ট্যাক্স আদায় বেড়েছে গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় ৯ শতাংশের কম। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরের নভেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি ছিলো প্রায় ২৬ শতাংশ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের শুল্ক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'বেশ কিছু পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এনবিআর নিয়ন্ত্রক শুল্ক বাড়িয়েছে এবং ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলা [এলসি] কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে শুল্ক আদায় কমে গেছে'।
আগামী মাসে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে আমদানি বাড়তে পারে। আমরাও সেটার ওপর ভরসা করে বসে আছি'।
তবে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চলতি মাসেও এলসি খোলার ক্ষেত্রে জটিলতা কাটেনি।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু টিবিএসকে বলেন, 'এলসি খোলা এখনও সহজ নয়। ৩০ হাজার ডলারের একটি এলসি খুলতে হলে আপনাকে ব্যাংকের হেড অফিসের অনুমোদন নিতে হবে। অফিস। সম্প্রতি, আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, প্রয়োজনে ডেফার্ড পেমেন্টের মাধ্যমে আমদানি করা যেতে পারে। কিন্তু ভাবমূর্তি সংকটের কারণে তাও সম্ভব হবে না'।
আমদানি না বাড়লে রাজস্ব আদায় বাড়বে না। বর্তমানে যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে তা মূলত আমদানি পণ্যের উচ্চমূল্য এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একজন ব্যবসায়ী নেতা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অর্থনীতির গতি কিছুটা স্লথ হওয়ায় রাজস্ব আদায় কমতির দিকে। এছাড়া আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের রাজস্ব প্রদান প্রক্রিয়া এখনো জটিল। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের হয়রানিও রয়েছে।'
কোনো কোনো অফিসার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়ে নিজের পকেট ভারি করে, যা সরকারের এক্সচেকারে যায় না বলে দাবি করেন তিনি।
এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, নভেম্বরে আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধি এক শতাংশেরও কম। ইমপোর্ট স্টেজ এ ট্যাক্স আদায় বেড়েছে ৯ শতাংশের কম আর লোকাল স্টেজে ভ্যাট আদায় বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
আয়কর আদায়ে গ্রোথ এত কম হওয়ার কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এনবিআর সদস্য শাহীন আখতার টিবিএসকে বলেন, আয়করের বড় অংশই আসে কোম্পানির কাছ থেকে। নভেম্বরে ট্যাক্স রিটার্ন দেওয়ার সময় এক মাস বাড়ানোর কারণে অনেক রিটার্ন জমা হয়নি, ফলে ট্যাক্সও আলোচ্য সময়ে আসেনি। তবে ডিসেম্বরে এই গ্রোথ বাড়বে বলে আশার কথা জানান তিনি।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে এক লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৬২১ কোটি টাকা, যার প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশের কিছু বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ শতাংশের বেশি।