ভাড়ার বাইরেও যেসব খাত থেকে আসবে মেট্রোরেলের আয়
রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাটে অসহনীয় যাত্রী দুর্ভোগ কমানোর প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হতে চলেছে বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল।
আপাতত রাজধানীর আগারগাঁও-উত্তরা রুটে এই ট্রেন সেবা চালু হচ্ছে। আর ২০২৪ সাল নাগাদ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬ লাইনের বাকি অংশ চালুর আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক প্রক্ষেপণ অনুসারে, পুরোপুরি চালু হলে দৈনিক ট্রেন পরিচালনায় ব্যয় হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। এই প্রেক্ষপটে, বিপুল ব্যয় নির্বাহ করে কীভাবে মেট্রোরেল সেবা যাত্রীদের জন্যও সুলভ ভাড়া রাখবে সে প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে।
এবিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অন্তত ৩০ ভাগ আয় তারা যাত্রী আয়বহির্ভূত (ভাড়াব্যতীত) খাত থেকে করার পরিকল্পনা করেছেন।
মেট্রোরেলের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কর্তৃপক্ষ– ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, 'শুধু ভাড়ার ওপর নির্ভর করে মেট্রোরেল লাভজনক করা যায় না। ৭০ শতাংশ ব্যয় আমরা ভাড়ার মাধ্যমে নির্বাহ করব, বাকিটার জন্য আমাদের অন্যান্য আয়ের উৎসের দরকার হবে'।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'স্টেশনগুলোতে কমার্শিয়াল স্পেসের মতো আমাদের অন্যান্য আয়ের উৎস থাকবে'। বিশ্বব্যাপী মেট্রোরেল সেবাকে এভাবেই লাভজনকভাবে করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এই লক্ষ্যে মেট্রোরেলের অধীন বাণিজ্যিক স্পেস ভাড়া ও ইজারা দেওয়ার একটি খসড়া নীতি প্রণয়ন করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি। এতে ভাড়ার বাইরে আয়ের ছয়টি উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে।
বেশিরভাগ আয় আসার আশা করা হচ্ছে, স্টেশন এলাকায় নির্মিত– স্থায়ী/অস্থায়ী অবকাঠামো যেমন খুচরা পণ্যের দোকান, ফুড কোর্ট, এটিএম বুথ ইত্যাদি থেকে।
এর বাইরে বিজ্ঞাপন; নাটক, সিনেমা, প্রামাণ্য চিত্র ইত্যাদির শুটিং; কার পার্কিং; স্বল্প সময়ের কোনো সংস্থার ক্যাম্পেইন বা প্রচারণা; প্রদর্শণী এবং অনুরূপ বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি– ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১ কিলমিটার দৈর্ঘ্যের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।
এরপর মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত আরও ১.১৬ কিলোমিটার অংশ যুক্ত করার পরিকল্পনা হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়।
এই লাইনে দৈনিক পাঁচ লাখের বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে।
সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতির ট্রেনে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে লাগবে মাত্র ৪০ মিনিট, বর্তমানে যেখানে লাগে আড়াই ঘণ্টা। আগারগাঁও থেকে মাত্র ১৭ মিনিটেই উত্তরায় পৌঁছাবে ট্রেন।
প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে মধ্যরাত্রি ১টা পর্যন্ত ট্রেন সেবা চালু থাকবে বলেও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।