২০২৮ সাল পর্যন্ত ৭২.৫০ কি.মি. যাবে মেট্রোরেল, পুরোদমে চালু হলে সেবা পাবে সাড়ে ৫২ লাখ যাত্রী
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হওয়া মেট্রোরেলের ১১ কিলোমিটার অংশের প্রায় অর্ধেকই অপেক্ষাকৃত কম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত।
মেট্রোরেলের প্রথম অংশের উদ্বোধনের সময় ঢাকার মানুষ এখন মতিঝিল পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মেট্রো পরিষেবা কবে নাগাদ চালু হবে তা জানতে উৎসুক।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ডিএমটিসিএল-এর মেট্রোরেল বিষয়ক অগ্রগতি প্রতিবেদনে, আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে এমআরটির ভৌত কাজের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ বলে জানা গেছে।
আগামী বছরের মধ্যে মেট্রোরেলের ২০.১ কি.মি. পর্যন্ত পরিষেবা চালু হবে। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কি.মি. মেট্রোপথের কাজ শেষ হলে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে ২১.২৬ কিলোমিটারের পরিষেবা চালু হবে।
কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালুর আগেই ডিএমটিসিএল আগামী বছর মোট ৫১.২৪ কি.মি. দীর্ঘ আরও দুটি মেট্রোরেল নির্মাণ শুরু করবে, যার কাজ ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে।
ডিএমটিসিএল ঢাকায় সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ ১২৮.৭৪ কিলোমিটার মেট্রোরেলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যার মধ্যে ২০২৮ সালের ভেতর ৭২.৫০ কিলোমিটারের কাজ শেষ হবে। ছয়টি লাইন পুরোদমে চালু হলে গড়ে প্রতিদিন ৫২.৬৬ লাখ যাত্রী এমআরটি পরিষেবা পাবেন।
৫৬.২৪ কিলোমিটার সম্মিলিত দৈর্ঘ্যের আরও তিনটি লাইনের প্রকল্প প্রণয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি বিনিয়োগের সন্ধান করা হচ্ছে।
আগামী বছরের মধ্যে মতিঝিল পৌঁছে যাবে মেট্রোরেল
আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজের অগ্রগতি ৯০.২৪ শতাংশ। অন্যদিকে কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৯০.৭৪ শতাংশ।
এমএএন সিদ্দিক বলেন, আগামী বছরের মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিস চালু করা হবে। তিনি বলেন, মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ পরিষেবার জন্য মোট ২৪ সেট ট্রেনের প্রয়োজন। এর মধ্যে ২১টি আগেই দেশে পৌঁছেছে।
তিনি আরও বলেন, আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের মোট ১৬.১৯ কিলোমিটার রেললাইন ও ওভারহেড ক্যাটেনারি সিস্টেম (ওসিএস) পোর্টালের কাজ শেষ করা হয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬৯.৩ শতাংশ ওসিএস ওয়্যারিং সম্পন্ন হয়েছে।
আগামী মাস থেকে শুরু হবে প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের কাজ
ডিএমটিসিএল বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রথম ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেলের কাজ শুরু করার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন করেছে। নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত একটি এলিভেটেড লাইন নিয়ে এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ৩১.২৪ কিলোমিটার।
প্রকল্পের মোট ১২টি প্যাকেজের নির্মাণ তদারকির জন্য চার পরামর্শক সংস্থার একটি কনসোর্টিয়াম নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নে প্রথম প্যাকেজ পরিচালনার জন্য দুটি কোম্পানির কনসোর্টিয়াম নিয়োগ করা হয়েছে।
ডিএমটিসিএল-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় সাতটি প্যাকেজের জন্য প্রাক-যোগ্যতার আবেদন আহ্বান করা হয়েছে । এছাড়া চুক্তি প্রদানের প্রক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।
২০২৬ সালের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা দিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৯ সালে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকার এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়।
জুনের মধ্যে লাইন ৫-এর কাজ শুরু
হেমায়েতপুর থেকে দারুস সালাম - মিরপুর ১ - মিরপুর ১০ কচুক্ষেত - বনানী - গুলশান ২ - নতুন বাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কি.মি. মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন- ১ প্রকল্পের সাথে এমআরটি লাইন ৫ (উত্তর রুট) এর জন্য ডিপোর কাজ পেতে ডিএমটিসিএল-এর কাছে আন্তর্জাতিক দরপত্র জমা পড়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১০০ একর জমি অধিগ্রহণে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ৯৩৪.৮৪ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। ডিএমটিসিএলের এমডি এম এ এন সিদ্দিক বলেন, আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হবে।
গাবতলী থেকে শ্যামলী-আসাদ গেট-সোনারগাঁ-হাতিরঝিল-আফতাব নগর হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ২০ কি.মি. মেট্রোরেলের জন্য এডিবির সম্ভাব্যতা জরিপের পর ডিএমটিসিএল এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করছে।
২০৩০ সালের মধ্যে বেশ কিছু জরিপ ও কারিগরি নকশার কাজ শেষ হবে।
আরও দুই প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছে সরকার
সরকার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) তালিকা থেকে এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ দুটি প্রকল্প বাদ দিয়ে অর্থায়নের বিকল্প উৎস খুঁজছে।
গাবতলী থেকে কমলাপুর হয়ে চিটাগাং রোড পর্যন্ত এমআরটি লাইন-২-এর মূল লাইনের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। এখন এটি নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করছে ডিএমটিসিএল।
এমআরটি লাইন-৪ প্রকল্পের লাইন মদনপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে যা মূল পরিকল্পনায় কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ছিল।
পরিকল্পনা পর্যায়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে অর্থায়নের জন্য সরকার জাইকাসহ বেশ কয়েকটি ঋণদাতাকে প্রস্তাব করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য কোরিয়া সরকার ও কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।