ইউক্রেনজুড়ে বৃষ্টির মতো মিসাইল ছুড়ল রাশিয়া
হাইলাইটস
- ইউক্রেনের বড় শহরগুলোতে ১২০টি মিসাইল নিক্ষেপ রাশিয়ার
- লাভিভের ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
- ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করবে রাশিয়া: লাভরভের হুঁশিয়ারি
ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো মিসাইল নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এত ব্যাপক পরিসরে মিসাইল হামলা খুব কমই চালিয়েছে রুশ বাহিনী। খবর বিবিসি, সিএনএন ও আল জাজিরার।
ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে রাশিয়া বেশ কয়েকটি শহর লক্ষ্য করে ১২০টির বেশি মিসাইল ছোড়ে।
ইউক্রেনের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর লাভিভের মেয়র আন্দ্রেই সাদোভি বলেছেন, রুশ আক্রমণে পশ্চিমাঞ্চলের শহরটির ৯০ শতাংশই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে শহরটিতে ট্রাম ও ট্রলি পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়া বৃহস্পতিবারের আক্রমণের ফলে পানি সরবরাহও বিঘ্নিত হতে পারে সতর্ক করেন লাভিভের মেয়র। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য তারা এখন ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার করছেন।
রাজধানী কিয়েভে রুশ হামলায় আহত অন্তত তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরটির মেয়র ভিটালি ক্লিশকো। এছাড়া রাজধানীর ৪০ শতাংশ এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।
খারকিভ, ওডেসা, ঝিতোমিরেও আক্রমণ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ওডেসা ও নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলেও অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, রাশিয়ার ছোড়া ৬৯টি মিসাইলের মধ্যে ৫৪টি তারা প্রতিহত করেছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে এই হামলাগুলো চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী বলেছে, রাশিয়া বিমান ও সমুদ্রভিত্তিক ক্রুজ মিসাইল দিয়ে নানা দিক থেকে আক্রমণ করেছে।
গত অক্টোবরে রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। এরপর থেকেই ইউক্রেন বিদ্যুৎ ঘাটতিতে ভুগছে।
ইউক্রেনের জ্বালানিমন্ত্রী জেরমান গালুশচেনকো গত সপ্তাহেই জানিয়েছেন, দেশটির বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে ফের 'স্থিতিশীল' করতে ছয় মাস লেগে যাবে। তা-ও যদি রাশিয়া হামলা বন্ধ করে, তবেই।
ইউক্রেনে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করবে রাশিয়া: লাভরভের হুঁশিয়ারি
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, বিদেশ থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য পাঠানো অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ বন্ধ করার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করছে তার দেশের সেনাবাহিনী।
রুশ টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাভরভ বলেন, পশ্চিম থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহে বাধা তৈরির জন্য সামরিক বিশেষজ্ঞরা আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমরা লক্ষ করেছি, ইউক্রেনে আরও বেশি বেশি উন্নত মানের পশ্চিমা অস্ত্র আসছে।' রেললাইন, সেতু ও টানেল নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
লাভরভ আরও বলেন, 'আমি মনে করি এই সরবরাহগুলো কীভাবে আরও কঠিন করে তোলা যায়—কিংবা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া যায়—তা নিয়ে তারা পেশাদার সিদ্ধান্ত নেবে।'
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন, ইউক্রেনের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গ্রিডের মতো অবকাঠামোগুলোতে রুশ হামলার ফলে ইতিমধ্যে দেশটিতে নতুন অস্ত্র পাঠানো কঠিন হয়ে উঠেছে।
লাভরভ বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাশিয়া সময় নেবে।
'আমাদের কোনো তাড়াহুড়ো নেই,' বলেন তিনি। 'আমরা ধৈর্যশীল মানুষ।'
লাভরভ আরও বলেন, ইউক্রেনে আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমের সঙ্গে রাশিয়ার প্রক্সি যুদ্ধ চলছে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা ফের চালু করতে হলে ইউক্রেনের অধিকৃত চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ বলে স্বীকৃতি দিতে হবে কিয়েভের। রাশিয়া ভলোদিমির জেলেনস্কির দেওয়া 'শান্তি ফর্মুলা' মেনে ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না বলে জানান তিনি।