পেলে: কী বলেছেন, কারা বলেছেন
ফুটবল কিংবদন্তি পেলে গতকাল বৃহস্পতিবার ৮২ বছর বয়সে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, যাকে ধরা হয় ফুটবল ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে। এএফপি স্পোর্টস তার সেরা বচন এবং তাকে নিয়ে সেরা বচনগুলো একত্র করে প্রকাশ করেছে।
পেলের বচন
"জনগণ পেলে আর ম্যারাডোনাকে নিয়ে তর্ক করে। তবে ডি স্টেফানো ছিলেন সেরা, আরও বেশি সম্পূর্ণ।" – ২০০৯ সালে 'কে সেরা খেলোয়াড়' বিতর্কে আর্জেন্টাইন ও রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি ডি স্টেফানোকে তাদের দুজনের চেয়ে ভালো খেলোয়াড় হিসেবে মন্তব্য করেন পেলে।
"আমি ফুটবল খেলতেই জন্ম নিয়েছি, যেমনটা বিঠোফেন সংগীত রচনা করতে জন্ম নিয়েছে কিংবা মাইকেল্যাঞ্জেলো ভাস্কর্য তৈরি করতে জন্ম নিয়েছে।" – ফিফা.কমের সাথে সাক্ষাৎকারে পেলে।
"পৃথিবীর সব বাচ্চারা যারা ফুটবলার হতে চায়, তারা পেলের মতো হতে চায়। তাদেরকে কেবল ফুটবলার হওয়াই নয়, বরং কীভাবে একজন মানুষ হতে হয় সেটা দেখানোও আমার ওপর বেশ বড় দায়িত্ব।" – ১৯৯৯ সালে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের সাথে সাক্ষাৎকারে খ্যাতির সাথে অতিরিক্ত চাপ নিয়ে বলার সময়।
"আমার মনে হয় এটা প্রায় কাছাকাছিই। এই আবেগ প্রায় একইরকমই ছিল। যখন ব্রাজিল হারে, তখন মনে হচ্ছিলো কিছু মারা গিয়েছে, পুরো দেশ মারা গিয়েছে, যেমনটা কেনেডি [মারা যাওয়ার সময়] হয়েছিল। আমার তখন ৯ বছর বয়স। আমি আমার বাবাকে প্রথম কাঁদতে দেখেছিলাম।" – ২০১৪ সালে ব্রাজিল নিজের মাটিতে হেরে যাওয়ার পর ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালের বিষয়ে পেলে।
"পেনাল্টিতে গোল করা কাপুরুষের মতো কাজ।" – 'পেলে: দ্য অটোবায়োগ্রাফি'তে পেলে।
"পৃথিবীর ওপরে হওয়া সবকিছুই একটি খেলা। পাসের মতো ব্যাপার। আমরা সবাই একসময় মারা যাবো। সবার অবস্থাই একইরকম হবে, তাই না?" – ১৯৭৭ সালে পেলে
"যখন তাকে দেখতে পেলাম, তার মুখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ডাক্তার তার হাতটা ছেড়ে দিলো। আমার শরীর প্রচণ্ড খারাপ লাগছিলো। বহুদিন ধরে আমি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে জেগে উঠতাম।" – ২০১২ সালে জিকিউয়ের সাথে সাক্ষাৎকারে পেলে তার জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্তের কথা বলছিলেন যখন একজন মৃত গ্লাইডার পাইলটকে দেখে তার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যায়।
"আমি আমার জীবনে এক হাজারেরও বেশি গোল করেছি আর মানুষজন কথা বলে যে গোলটি আমি করতে পারিনি সেটা নিয়ে।" – ১৯৭০ বিশ্বকাপ ম্যাচে ইংল্যান্ড গোলকিপার গর্ডন ব্যাংকস তার করা শট অসাধারণভাবে ঠেকিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে।
"পেলে মরবে না। পেলে কখনো মারা যাবে না। পেলে চিরজীবন চলতে থাকবে। কিন্তু এডসন একজন সাধারণ মানুষের মতোই স্বাভাবিকভাবে একদিন মারা যাবে, আর জনগণ তাকে ভুলে যাবে।" – ফুটবল অমরত্ব এবং মানুষের মরশীলতা নিয়ে ২০০৩ সালে গার্ডিয়ানের সাথে পেলে।
পেলেকে নিয়ে বচন
"সর্বকালের সেরা পেলেই। সে কেবল মেসির চেয়ে এগিয়ে। আমি কখনোই পেলের মতো কাউকে খেলতে দেখিনি। আমি ওর সাথে নিউ ইয়র্ক কসমসে একসাথে খেলেছি। আর আপনি যখন ওকে বল দেবেন, তারপর ওকে আর দেখতে পাবেন না, কারণ ও খুবই দ্রুত।" – ফ্রাঞ্জ ব্যাকেনবাওয়ের
"পেলে ফুটবলের সবকিছুকেই প্রতিনিধিত্ব করে কারণ ফুটবল মাঠে ও সবকিছুই করে দেখিয়েছে" – পেলের সাথে ১৯৫৮ ও ১৯৬২ বিশ্বকাপ জয়ী মারিও জাগালো, যিনি ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জেতেন, যে দলে পেলেও ছিল।
"পেলে একমাত্র খেলোয়াড় যে যুক্তির সীমা ছাড়িয়ে গেছে।" – ইয়োহান ক্রুয়েফ
"পেলে বলেছে ও ফুটবলের বিঠোফেন। আমি কখনোই ফুটবল মাঠে বিঠোফেনের সংগীত বাজাতে শুনিনি। এবং আমি আবারো বলছি, এর আগেও যা বলেছি, ও যখনই ভুল পিল মুখে দেয়, তখনই অদ্ভুত সব কথা বলে।" – ২০১২ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনা নিজেকে ফুটবলের 'রকস্টার' খেতাব দেওয়ার সময়।
"আমি ম্যাচ শুরুর আগে নিজেকে বলছিলাম, ও অন্যদের মতোই চামড়া আর হাড় দিয়ে তৈরি, কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।" – ১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে পেলেকে মার্কিং করার দায়িত্বে থাকা ইতালির ডিফেন্ডার টারকিসিও বুর্গনিখ। ম্যাচের ২৭ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন তিনি এবং ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে নেয় ব্রাজিল, যাতে পেলেরও গোল ছিল।
"আমার চোখে একজন শিল্পী হলো তিনিই, যিনি একটি অন্ধকার ঘরে আলো জ্বালাতে পারেন। আমি এর আগে কখনোই এবং ভবিষ্যতেও ১৯৭০ বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লোস আলবার্তোর কাছে বাড়িয়ে দেওয়া পেলের বলের মতো কিছু দেখবো না, যার সাথে তরুণ রিম্বঁ (একজন ফরাসি কবি)-এর কবিতার কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। দুটোর মধ্যেই সৌন্দর্য্যের এমন এক ছোঁয়া আছে যা অমরত্বের অনুভব করায়।" – এরিক ক্যান্টোনা।
"আমি এখনো স্টুডিও ৫৪-এ তার সাথে মোলাকাতের কথা মনে করতে পারি। তার দুইপাশে দুই হাত ধরে দু'জন সোনালী চুলের নারী দাঁড়িয়ে আছে। তাকে অএঙ্কটা রোমান সম্রাটদের মতো দকেহাচ্ছে। আমরা তখন তার স্মৃকথা নিয়ে কাজ করছিলাম। আমাদের চোখে চোখ পড়লো এবং সাথে সাথেই ও বলে উঠলো: বইটার জন্য নয়, বন্ধু, আমার বইটার জন্য নয়।" - সাংবাদিক ডেভিড হার্শি যিনি নিউ ইয়র্ক কসমসে পেলের খেলতে যাওয়ার কথা প্রথমবার প্রকাশ করেন এবং পেলের সাথে সহযোগী লেখক হিসেবে 'পেলে'স নিউ ওয়ার্ল্ড' বইটি লেখেন।