ইডিএফ সংকোচনের আলোচনার মধ্যেই রপ্তানিমুখী শিল্পখাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠন
রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৭ বিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) সঙ্কুচিত হওয়ার আলোচনার মধ্যে নতুন করে ১০ হাজার কোটি টাকার এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন ফান্ড (ইএফএফ) নামে একটি তহবিল গঠন করেছে সরকার।
ইডিএফ এর সুবিধাভোগী শিল্পোদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন, এর মাধ্যমে ইডিএফ সঙ্কুচিত হতে পারে এবং টাকায় ঋণ নিয়ে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে ডলার কিনতে হলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হবে।
এর ফলে টেক্সটাইল সহ কয়েকটি খাতে 'বিপর্যয়' নেমে আসার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গত মাসে বলেছিলেন, যেহেতু ইডিএফ ঋণ রিজার্ভের অংশ কিনা তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে, তাই বাংলাদেশ ব্যাংক রপ্তানিকারকদের জন্য ঋণ প্রকল্পটি একটু ভিন্নভাবে সাজাতে চায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্রও সম্প্রতি টিবিএসকে জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ইডিএফ ফান্ড থেকে লোন দেওয়া সঙ্কুচিত করা হয়েছে।
"উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা এখন ১০ টাকা ফেরত পাই, তাহলে আমরা ইডিএফ থেকে সর্বোচ্চ ৮ টাকা ধার দিচ্ছি। অবশিষ্ট পরিমাণ রিজার্ভের সাথে সমন্বয় করা হচ্ছে।"
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন মনে করেন, ডলারের বদলে টাকায় ঋণ দেওয়া হলে ডলার কেনায় বাড়তি ব্যয়ের কারণে টেক্সটাইল খাতে 'ডিজাস্টার' হতে পারে।
টিবিএসকে তিনি বলেন, "আমরা আগে ডলারে ঋণ পেতাম (ইডিএফ লোন), আমদানির ব্যয় পরিশোধ করতাম ডলারে; কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে ঋণ পাবো টাকায়, এতে করে ডলারে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে হলে ৬ থেকে ৭% বাড়তি টাকা দিতে হবে।"
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, "ধরা যাক আমি একশ টাকা লোন পেলাম, কিন্তু ১ ডলার কিনতে আমাকে ব্যয় করতে হবে ১০৭ টাকা। কারো এ প্রক্রিয়ায় ১০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার কিনতে হলে ৭ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে।"
টাকা আর ডলারের এমন তারতম্যের কারণে টেক্সটাইল মিলগুলোকে (যারা মূলত ডলার ঋণ হিসেবে নিয়ে আমদানি করতো) শত শত কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে বলে মনে করেন সংশিষ্টরা।
বিটিএমএ'র অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারের নতুন এ সার্কুলার নিয়ে তারা পর্যালোচনা করছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) বলেন, "নতুন এই ফান্ড ভালো উদ্যোগ। কিন্তু ইডিএফ বন্ধ করে এই ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া হলে এবং ওই টাকায় ডলার কিনতে হলে ক্ষতি হবে।"
"ডলার কেনার ক্ষেত্রে কোন অবস্থায়ই যাতে বায়িং ও সেলিং এর পার্থক্য ১ টাকার বেশি না হয়। বর্তমানে বায়িং সেলিং এ যে পার্থক্য তাতে ব্যাংকগুলো বিপুল ব্যবসা করবে, আর লোকসান হবে উদ্যোক্তাদের।"
সম্ভাব্য ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বলা হয়েছিল, রিজার্ভ গণনায় যাতে ইডিএফ ঋণ গণনা না করা হয়।
আইএমএফের ব্যাখ্যার উদ্ধৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, ইডিএফ ঋণ পরিশোধের জন্য ২৭০ দিন সময় দেওয়ার অর্থ হচ্ছে সে সময়টাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ওই অর্থটা নেই।
অবশ্য এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে দেশের রপ্তানিকে আরও বৃদ্ধির জন্য। এর সঙ্গে ইডিএফ ঋণের কোন সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ইডিএফ ফান্ড কমাতে চায় তাহলে ভিন্ন সার্কুলার করেই করতে পারবে।"
এদিকে, রোববার (১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সার্কুলারে বলা হয়, দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পখাতে রপ্তানিকে আরও গতিশিল করতে উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি ও সংগ্রহের জন্য স্বল্প সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার এক্সপোর্ট ফ্যাসিলিটেশন ফান্ড গঠন করা হয়েছে।
এই ফান্ড থেকে দেশের সকল তফিসিলি ব্যাংকগুলো মাত্র ১.৫% সুদে সুবিধা নিতে পারবে তবে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ৪%।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, উন্নয়শীল দেশে উত্তরণে (এলডিসি উত্তরণ) ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পাশাপাশি বৈশ্বিক খারাপ অবস্থার বিপরীতে রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশে এই তহবিল গঠন করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানভেদে সর্বনিম্ন ৫ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত এই ফান্ড থেকে ঋণ পাওয়া যাবে।