ফের ‘এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি মিললো’ তরল দুধে
বাজার থেকে সংগ্রহ করা পাস্তুরিত তরল দুধের ১০টি নমুনা নিয়ে পুনরায় পরীক্ষা চালিয়ে ১০টি তেই এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের এই সদ্য-সাবেক পরিচালক গত ২৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন তারা।
এরপরই অধ্যাপক ফারুকের এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
তাদের ওই গবেষণার সঙ্গে ফার্মেসি বিভাগের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন ঐ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ‘নিরাপদ তরল দুধ উৎপাদন: দেশীয় দুগ্ধশিল্প রক্ষা ও বিকাশে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।
এর প্রেক্ষাপটে শনিবার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একই নমুনা নিয়ে, একই গবেষক দ্বারা নিজেদের চালানো দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার ফলাফল জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের এই অধ্যাপক তার নামে স্বাক্ষরিত এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “গত সপ্তাহে আমরা এই পরীক্ষাটি পুনরায় সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও পূর্বোক্ত ৫টি কোম্পানির ৭টি পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত ৩টি নমুনা, অর্থাৎ সর্বমোট ১০টি নতুন নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এর ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে। অ্যান্টিবায়োটিকের মোট সংখ্যা ছিল ৪টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন)। এর মধ্যে আগের বারে ছিল না এমন অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে ২টি (অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন)।
এতে বলা হয়, ১০টি নমুনার মধ্যে তিনটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে চারটি, ছয়টিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে তিনটি এবং একটিতে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে দুটি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “আমরা ভবিষ্যতেও এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশ করার চেষ্টা করব।”
ষড়যন্ত্রের অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, “জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগজনক এই সমস্যাটি সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে বিশেষ কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে আর বিদেশি চক্রান্ত খুঁজতে হবে না।”
এর আগে গত ২ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের লেকচার থিয়েটারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বায়োমেডিকেল সেন্টারের পরিচালক এবং ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেছিলেন, তার নেতৃত্বে চালানো এই গবেষণার জন্য বাজার থেকে পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এগুলো হলো মিল্ক ভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ইগলু, ইগলু চকোলেট ও ইগলু ম্যাংগো। পাস্তুরিত দুধের তিনটি নমুনা সংগ্রহ করা হয় রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে।
তিনি বলেছিলেন, “আমরা যে ফলাফল দিয়েছি, তা নমুনা ফলাফল। তার মানে এই নয় যে ওই সব কোম্পানির সব পণ্যই এ রকম। তবে এভাবে যেখানে-সেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হলে আমরা কিন্তু থাকব না, মরে যাব। অ্যান্টিবায়োটিক যে গরুকে খাওয়ানো হলো, ওই গরুর দুধ ও মাংস আমরা খেলে তা আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে। মানুষকে বাঁচাতে এখনই গরুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে।”