বগুড়ার ২ আসনেই হিরো আলমের মনোনয়ন বাতিল
বগুড়ার দুই আসনের উপনির্বাচনে হলফনামায় গড়মিল পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন বগুড়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
রোববার দুপুর একটার দিকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দিনে এই আদেশ দেন তিনি।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলমের ১ শতাংশ ভোটার তালিকায় গড়মিল পাওয়া গেছে। সেখানে কয়েকজন ভোটারের সমর্থন না পাওয়ায় মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
এর আগে, বিএনপির দুই সংসদ সদস্য পদত্যাগ করার পর বগুড়ার দুটি আসন থেকেই উপনির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম।
গত সোমবার দুপুরে বগুড়ার নির্বাচন অফিস থেকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হাসানের কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি।
ওই সময় হিরো আলম সাংবাদিকদের বলেন, 'নির্বাচন ও অভিনয় জগত দুটি আলাদা। আমরা যখন অভিনয় করি, তখন অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আর যখন জনসেবায় কাজ করি তখন জনসেবা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। অভিনেতা হিসেবে জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণকে কিছুই দিব না, তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়াও আমি জনগণকে নিয়ে কাজ করি, সবসময় জনগণের পাশে থাকতে চাই। এ কারণে জনগণ আমাকে ভোট দিবেন।'
বগুড়া-৬ আসন (সদর) ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) দুটি আসন থেকেই সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন তিনি। কোনো আসন থেকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়েছিলেন হিরো আলম।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আলোচিত হিরো আলম বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (সিংহ মার্কা) হয়েছিলেন। ওই সময় তিনি ৬৩৮ ভোট ভোট পান। এতে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
তবে ভোটের মাঝমাঠে গিয়ে অবশ্য তিনি নির্বাচন বর্জন করেন। বগুড়ার একটি হোটেলে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে ভোট বর্জনের ঘোষণার সময় হিরো আলম বলেন, 'সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকজন ভোটারদের বের করে দিয়েছে। নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দিয়েছে। নির্বাচনে নন্দীগ্রামে তার উপর হামলা হয়েছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে কোনো সহায়তা করেনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে দেখে ভয় পায়। ওরা আমার মতো প্রার্থী দেখে ভয় পায়। কেন্দ্র দখল আর হামলার ভোট আমি মানি না। ভোট বর্জন করলাম।'
২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনেই হিরো আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। আপিল করলে নির্বাচন কমিশন শুনানির পর তা বাতিল করে। মনোনয়নপত্রে ভোটারের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ তুলে আপিলেও তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে উচ্চ আদালতে তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। পরে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বগুড়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের হাতে পছন্দের 'সিংহ' প্রতীক তুলে দেন।
বগুড়া সদরের এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করতেন। পরে তিনি সিডি বিক্রি এবং ডিশ সংযোগের ব্যবসা করেন। নিজেই মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ডিশ লাইনে সম্প্রচার শুরু করেন। এভাবে হিরো আলমের তৈরি মিউজিক ভিডিও এবং ইউটিউব সিনেমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ ও বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করেন। ফলে আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, উপনির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ৫ জানুয়ারি। আর ৮ জানুয়ারি মনোনয়ন বাছাই ও ১৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।