১৯০০ সালে মাত্র ১ ডলারে এ ১৭টি পণ্য কিনতে পারতেন আমেরিকানরা, পরিমাণেও জুটত ঢের
বিশ্বব্যাপী নিত্যপণ্যের দাম ক্রমশ বাড়ছে। করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বর্তমানে অনেক দেশই মুদ্রাস্ফীতিতে ভুগছে। এমন পরিস্থিতিতে এখন কোনো কিছু কিনতে গিয়ে অনেকেই 'আগে এক টাকায় কত কিছু কিনতে পারতেন' বলে আফসোস করেন।
পৃথিবীর সব দেশেই অর্থ ও পণ্যের মধ্যকার সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। আজ থেকে আরও এক শতক আগে কেবল এক ডলার দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কী কী কেনা যেত, তার একটি ধারণা দিয়েছে মিডিয়াফিড।
১৯০০ থেকে ১৯১০ সালের মধ্যে এক ডলার দিয়ে খুব সহজেই কেনা যেত এমন ১৭টি পণ্যের কথা এখানে উল্লেখ করা হলো। এর বাইরেও এক ডলারে কেনার মতো যুক্তরাষ্ট্রে অনেক পণ্য ছিল তখন।
পুরুষের ড্রেস শার্ট
১৯০০ সালের দিকে এক ডলার দিয়ে একটি আনকোরা শার্ট কিনতে পারতেন মানুষ। বর্তমানে গ্যাপ-এর একটি বেসিক শার্ট কিনতেই খরচ পড়ে ৬০ ডলারের মতো।
চাল
১৪ পাউন্ড বা ৬.৩৫ কেজি চালের দাম ১৯০০ সালে ছিল এক ডলার। বর্তমানে আমেরিকানরা এক ডলার দিয়ে কেবল দেড় পাউন্ডের (০.৬৮ কেজি) মতো চাল কিনতে পারবেন।
দুধ
১৯০০ সালে ৩৫ সেন্ট দিয়েই এক গ্যালন দুধ পাওয়া যেত। অর্থাৎ এক ডলারে মিলত তিন গ্যালন দুধ। বর্তমানে এক গ্যালনের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ ডলারে।
গ্যাস
বর্তমানে এক ডলার দিয়ে কেবল ০.৩ গ্যালন গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু বিশ শতকের গোড়ার দিকে এক ডলার ব্যয়ে গড়ে ১৪.৩ গ্যালন গ্যাস কিনতে পারতেন মার্কিনীরা।
কফি
কেবল এক ডলারে এক পাউন্ড কফি কিনতে পারা আজকের যুগে অসম্ভব। কিন্তু ১৯০০ সালে এক ডলারে এক পাউন্ড কফিই কেনা যেত। এখন আট ডলারে এক পাউন্ড কফি পাওয়া যায়।
তবে মুদ্রাস্ফীতির হিসাব করলে, সে সময়ে কফির দাম এখনকার মুদিদোকানের কফির চেয়ে তুলনামূলক বেশি ছিল। কারণ তখন কফি একটি বিলাসবহুল পণ্য ছিল। আর ১০০ বছর আগে কফি পরিবহনও অনেক ঝক্কির কাজ ছিল।
লেবু
১৯০০-এর দশকে এক ডলার দিয়ে কুড়ি হালি তথা ৮০টি লেবু কেনা গেলেও এখন একই অর্থ ব্যয় করে কেবল দেড়টি লেবু কেনা সম্ভব।
মাখন
১৯০০-১৯১০ সালে এক ডলারে চার পাউন্ড (১.৮১ কেজি) মাখন পাওয়া যেত। এখন এ দামে কেবল ০.১১ কেজি মাখন পাওয়া যাবে।
বাচ্চাদের খেলার ট্রাই-সাইকেল
এখন এ ধরনের খেলনা ট্রাই-সাইকেল কিনতে লাগবে ৫০-৫০০ ডলারের মতো। সেদিক থেকে মাত্র এক ডলার বেশ কম দামই ছিল তখন।
ডাকটিকিট
টেলিফোন-ইন্টারনেট আসার আগে প্রিয়জনের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান উপায় ছিল চিঠি। আর চিঠি পাঠানোর জন্য প্রয়োজন হতো ডাকটিকিটের।
সেজন্যই বোধহয় তখন ডাকটিকিটের দামও কম ছিল। এক ডলারে পাওয়া যেত ১০০টি ডাকটিকিট।
পাউরুটি
পাউরুটি পশ্চিমাদেশগুলোর একটি অন্যতম প্রধান খাবার। বর্তমানে এক ডলারে কেবল পাউরুটির একটি লোফ কেনা সম্ভব। তাও সব দোকানে এত কম দামে পাওয়া যায় না।
কিন্তু ১৯০০-১০১০ সালে এক ডলারেই আমেরিকার যেকোনো জায়গায় ১৪.২ লোফ পাউরুটি কিনতে পাওয়া যেত।
কোকা-কোলা
২০ শতকের প্রথম অর্ধেক সময়ে কোকের ৬.৫ আউন্স বোতলের দাম ৫ সেন্ট ছিল। তখন এক ডলারে ২০ বোতল কোকা-কোলা কিনতে পারতেন মানুষ। বর্তমানে কোকা-কোলার ২০ আউন্সের বোতল কিনতে ১.২৫ ডলারের মতো খরচ করতে হয়।
কোডাক ব্রাউনি ক্যামেরা
স্মার্টফোন আসার আগে ছবি তোলার একমাত্র উপায় ছিল ক্যামেরা। আর ক্যামেরা তখন বিলাসিতার সমার্থক হয়ে উঠেছিল। কেবল বিশেষ অনুষ্ঠানেই ক্যামেরা ব্যবহার করা হতো।
কোডাক ব্রাউনি ছিল দামের দিক থেকে সাধারণের নাগালে থাকা প্রথম হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা। এটি বাজারে আনা হয় ১৯০০ সালে। কেবল এক ডলারে দুটো ক্যামেরা কিনতে পারতেন মানুষ।
ওয়াইন
১৯০০'র দশকের গোড়ার দিকে ওয়াইনের দাম নির্ভর করত ব্র্যান্ডের ওপর। তবে গড় হিসাব ধরলে, তখন এক ডলারে নয় বোতল ওয়াইন পাওয়া যেত।
ময়দা
তখন প্রতি বাড়িতেই ময়দা একটি অপরিহার্য খাদ্য উপাদান হিসেবে থাকত। তাই তখন মানুষ বস্তায় করে ময়দা কিনতেন। আর পাঁচ পাউন্ডের একটা ব্যাগের দাম পড়ত এক ডলার।
ম্যাগাজিন
এখনকার আমেরিকায় ম্যাগাজিনের কথা শুনলে কারও বন্দুকের ম্যাগাজিনের কথা সবার আগে মনে পড়তে পারে। কারণ টিকটক আর ইনস্টাগ্রামের যুগে মানুষের কাগজের ম্যাগাজিন পড়ার সময় কোথায়!
কিন্তু তখন বিনোদন ও তথ্যের অন্যতম উৎস ছিল ম্যাগাজিনগুলো। মোটামুটি পাঁচ থেকে ১০ সেন্টেই ম্যাগাজিন কেনা যেত। অর্থাৎ এক ডলারে ২০টির মতো ম্যাগাজিন কিনতে পারতেন যে কেউ।
আলু
আলু বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় খাবার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক শতক আগে এক ডলারে ৭০ পাউন্ড বা প্রায় ৩১ কেজির বেশি আলু মিলত।
লন্ড্রি সাবান
১৯০০ সালে একটি মার্কিন পরিবারের এক ব্যক্তির জন্য দুই বছরের লন্ড্রি সাবান এক ডলারেই কেনা যেত। তখন এ অর্থে ২০টি লন্ড্রি সাবান পাওয়া যেত।