‘ভাগ্য আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে, আমি সেখানে যাব’
'উসমান আসছে'- বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরুর আগে ছবিসহ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের দেওয়া ফেসবুক পোস্টে হাহা রিঅ্যাক্টের (হাসির ইমোজি) বন্যা হয়ে যায়। প্রায় ৮ হাজার রিঅ্যাক্টের মধ্যে হাহা ছিল চার হাজারের উপরে। অখ্যাত এক ক্রিকেটার, বলতে পারেন না ইংরেজি; রীতিমতো উপহাসের পাত্রে পরিণত হন সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার।
বিপিএলের আগে মাত্র সাতটি টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা ছিল উসমানের। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দেওয়া ওই পোস্টের কারণে বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের মান নিয়ে পর্যন্ত প্রশ্ন তুলে ফেলেন কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বহুদূরে থাকা উসমান পর্যন্ত অবশ্য এসব পৌঁছায়নি। কেবল নিজের খেলাতেই মনোযোগ দিয়ে রাখা এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ম্যাচেই তুলে নেন সেঞ্চুরি। ১০ ম্যাচে একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩২.৬৬ গড় ও ১৩৮.৬৭ স্ট্রাইক রেটে ২৯৪ রান করে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই।
বিপিএলে খেললেন উসমান, খেলেছেন পিএসএল ও টি-টেনেও। তার অপেক্ষা এবার আমিরাতের হয়ে ক্যারিয়ারের নতুন মিশন শুরু করার। কয়েক মাসের মধ্যেই তার অপেক্ষা পুরাবে। যদিও স্বপ্ন ছিল পাকিস্তানের হয়ে খেলার। কিন্তু ক্রিকেট খেলতে দেশটির বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়ানো উসমান সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার তেমন সুযোগ পাননি। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে করাচিতে থাকার জায়গা ছিল না তার, থাকতেন ক্লাব গ্রাউন্ডের একটি ঘরে। নিজেই রান্না করে খেতে হতো তাকে।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় ক্রিকেট স্বপ্নই থমকে যায় তার। পাড়ি জমান আরব আমিরাতে, চাকরি নেন একটি গ্যাস সরবরাহ কোম্পানিতে। তাদের ক্রিকেট ক্লাবে খেলার সুযোগও পান উসমান। একইসঙ্গে চলতে থাকে চাকরি ও ক্রিকেট খেলা। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাত মাসের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে করেন ১৮ সেঞ্চুরি, ওখান থেকেই নজরে পড়া উসমান এখন তারকা হয়ে ওঠার পথে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় পাকিস্তানে তার ক্রিকেট সংগ্রাম, বাংলাদেশে অভিজ্ঞতা, নিজের ক্রিকেট দর্শন, জীবনের লক্ষ্য এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকের সম্ভাবনাসহ অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন উসমান খান।
টিবিএস: বিপিএলে আপনার দল ভালো করতে পারেনি, ইতোমধ্যে প্লে-অফের রেস থেকে বাদ পড়েছে। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, কতোটা উপভোগ করেছেন?
উসমান খান: টুর্নামেন্টের একটা পর্যায়ে আমরা শীর্ষ চারে ছিলাম এবং আমাদের বিশ্বাস ছিল যে আমরা প্লে-অফ খেলতে পারব। কিন্তু তা হয়নি। আমাদের বোলিং কিছুটা দুর্বল ছিল। চট্টগ্রামে আমরা আমাদের বেশিরভাগ খেলাই হেরেছি। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখানকার উইকেট পাকিস্তান বা অস্ট্রেলিয়ার মতো নয়। এখানে বল থেমে আসে, স্কিড করে। আমি অনেক কিছু শিখেছি এবং উপভোগ করেছি।
টিবিএস: প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসেছেন। এখানে আসার আগে পাকিস্তানের কোনো খেলোয়াড়ের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছিলেন?
উসমান: আসলে তেমন নয়, ওভাবে কথা হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের উইকেট সম্পর্কে জানতে স্থানীয় খেলোয়াড়দের আমি সব সময় প্রশ্ন করেছি। প্রথম ম্যাচে ভুল বল বেছে নিয়ে আমি আউট হয়ে যাই। দ্বিতীয় ম্যাচে আমি আমার নিজের শটগুলোতে বিশ্বাস রাখি এবং সেঞ্চুরি পাই। ছয়-সাত ম্যাচ পর রিজওয়ান (মোহাম্মদ রিজওয়ান) ভাইয়ের সাথে আমি দেখা করি। তিনি আমাকে বলেন, "তুমি টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে সেঞ্চুরি পেয়েছো। তোমার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের মধ্যে থাকা উচিত ছিল।" বোলারদের ওপর চড়াও হওয়ার আগে তিনি আমাকে সময় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি দশম ম্যাচে এটা প্রয়োগ করি এবং হাফ সেঞ্চুরি পাই। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের কাছ থেকে প্রতিদিন শিখছি।
টিবিএস: সেঞ্চুরির পর পাকিস্তানের কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল?
উসমান: ইফতিখার (ইফতিখার আহমেদ) ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিয়েছিলাম কিন্তু আমরা ক্রিকেট নিয়ে বেশি কথা বলিনি। রিজওয়ান ভাইয়ের সাথে আমার ভালো আলোচনা হয়। এর বাইরে অন্যদের সাথে বেশি কথা হয়নি আমার।
টিবিএস: লক্ষ্য বড় ছিল, সেঞ্চুরি করে দলকে জেতান আপনি। ১৭৯ রান তাড়া করতে পারবেন, এমন বিশ্বাস ব্যাটিং করার সময়েই ছিল?
উসমান: খুলনা টাইগার্স পাওয়ার প্লেতে খুব একটা ভালো করতে পারেনি ওই ম্যাচে, ধীর গতির উইকেট ছিল। আমরা ভেবেছিলাম, তাদের আমরা ১৬০-৭০ রানের মধ্যে আটকে দেব। কিন্তু আজম খান সত্যিই অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। তাই আমার চিন্তা ছিল সে যদি এভাবে খেলতে পারে, আমরাও কাছাকাছি যেতে পারব। ম্যাচের আগে আমি আমার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে ইনিংসকে তিনভাগে ভাগ করতে বলেন। ১-৩ ওভার, ৩-৬ ওভার এবং ৭-১৫ ওভার; এই তিনভাগে ভাগ করতে বলেন, আমি এটা মেনেছি। ১৪ বলে ১১ রান করি আমি এবং এরপর ভালো ব্যাটিং শুরু করি আমি। আমার পরিকল্পনা ছিল ভালো বলকে সম্মান করা, খারাপ বলকে সীমানা ছাড়া করা। পাশাপাশি একজন স্পিনার বা পেসারকে নির্দিষ্ট সময়ে টার্গেট করে আক্রমন করার পরিকল্পনা ছিল আমার।
টিবিএস: আপনি এবং আজম খান একই শহর ও ক্লাবের। তিনি ইতোমধ্যে তারকা, কিন্তু আপনার কেবল শুরু হচ্ছে…
উসমান: দেখুন, এটা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি এসব তারকাখ্যাতি বিশ্বাস করি না। নাম দিয়ে আপনি ক্রিকেট খেলতে পারবেন না। আপনি অনুশীলনে যে কঠোর পরিশ্রম করছেন, সেটার সদ্যবহার করে আপনি দলকে জেতাতে পারছেন কিনা, তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি সব সময় মাথায় রেখেছি যে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকে হারাতে পারে। নিজের দিনে যে কেউ জিততে পারে। ভাগ্যের সহায়তা পেলে আমি পাকিস্তান বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে খেলতে পারব। কিন্তু যদি আমি এটা করতে না পারি, আমি কাউকে দোষ দেব না।
টিবিএস: আপনি আগে বলেছেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করতে পারেন। এই ফরম্যাটে ভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করতে ভিন্ন ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন। এর জন্য কি আলাদা অনুশীলন করেন?
উসমান: আসলে তেমন নয়, প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের নিজ্ত্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। কেউ কেউ বাবর আজম এবং বিরাট কোহলির মতো তাদের ইনিংস গড়তে ক্রিকেটিং শট খেলে। কেউ গিয়েই মারতে পারে। আমি জানি মাঝখানে যদি কিছু সময় কাটাতে পারি, তাহলে আমি ইনিংস বড় করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, সেট হতে পারলে বড় ইনিংস খেলতে পারব। নিজের সামর্থ্যে বিশ্বাস আছে আমার। আমি বিশ্বাস করি না যে বিশ্বে এমন কোনো উইকেট আছে, যেখানে গিয়েই আপনি সব বল মারতে পারবেন। তাই আমি মনে করি একটু সময় নিয়ে চোখকে যদি মানিয়ে নিতে পারি, তাহলে আমি ভালো করব।
টিবিএস: ২২ বছর বয়সে আপনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান। পাকিস্তানে আপনার শৈশব কেমন ছিল?
উসমান: শেখুপুরায় আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা এবং সেখানেই আমি ক্রিকেট খেলেছি। সেখানে আমি উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাইনি। কিন্তু সহজেই আমি আমার সমস্ত পরিশ্রম নষ্ট হতে দিইনি। তাই বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। যেহেতু আমাদের নবী মুহাম্মদ (স:) আমাদেরকে হিজরত নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাই আমি আমার জীবিকার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে শুরু করি। আমার বড় ভাই নাদিম প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ছিলেন। তিনি পাকিস্তানের হয়ে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেন এবং পরে করাচিতে চলে যান। আমি তাকে অনুসরণ করি, কিন্তু বড় ক্লাব খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
তখন আমার এক বন্ধু আমাকে করাচি জোন ৬-এ যেতে বলে। কিন্তু দলটি ছিল সরফরাজ আহমেদ, আনোয়ার আলী, সৌদ শাকিল এবং দানিশ আজিজের মতো তারকাদের নিয়ে সাজানো। তাই ব্রেকথ্রু পাওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত এবং দলগত অনুশীলনে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা ধরে রাখি। অবশেষে আমি সুযোগ পাই এবং কয়েকটি টুর্নামেন্টে ভালো খেলেছি। এরপর আমি জেলা ক্রিকেট এবং কায়েদ-ই-আজম ট্রফি খেলেছি, কিন্তু এখনও টপ লেভেলে পর্যাপ্ত সুযোগ পাইনি। পরে আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে আসি। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি এবং বেশ ভালো পারফর্ম করেছি।
টিবিএস: ক্রিকেট খেলার ক্ষেত্রে পরিবার থেকে কতোটা সমর্থন পেয়েছেন?
উসমান: ক্রিকেট সম্পর্কে আমার বাবার কোনো ধারণা নেই। আমার মা ২০১৩ সালে মারা যান। আমি ক্রিকেটের জন্য লাহোর, করাচি, শেখুপুরাসহ বিভিন্ন শহরে যেতে থাকি। করাচিতে রাতে ঘুমানোর জায়গা ছিল না আমার। ক্লাব গ্রাউন্ডের একটা ঘরে থাকতাম এবং রান্না করে খেতাম। আমি ২০ বছর বয়সে বিয়ে করি, বিয়ের পর পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়। আমার স্ত্রী যমজ সন্তানের জন্ম দেয়, এখন আমার তিনটি বাচ্চা। আমি আমার বিভাগের হয়ে ক্রিকেট খেলতাম এবং ভালো বেতন পেতাম। কিন্তু কোভিডের সময় কঠিন অবস্থায় পড়ে যাই। তখন আমাদের কাছে ভাড়া দেওয়ার মতো টাকা ছিল না। আমি টাকার জন্য টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলতে থাকি এবং পার্ট-টাইম চাকরি খুঁজতে থাকি।
টিবিএস: পাকিস্তান ছাড়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?
উসমান: আমি আমার পরিবারের উন্নতির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাকিস্তানে টিকে থাকার মতো পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না আমাদের। ক্লাব ক্রিকেট খেলে যে টাকা পেতাম, তা যথেষ্ট ছিল না। আমি একজন 'ফ্যামিলি ম্যান'। আমরা আমাদের পরিবার এবং সন্তানদের জন্য বাঁচি, তাই তো? তাই আমি নিজেই নিজেকে বলেছিলাম, আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ক্রিকেট খেলব এবং একই সাথে কাজ করব। আমি বিশ্বাস করি, আমার পরিশ্রম দেখলে যে কেউ আমাকে সমর্থন করবে।
টিবিএস: সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি গ্যাস কোম্পানিতে কাজ নেন আপনি, যাদের একটি ক্রিকেট দলও ছিল। তখন কি ভেবেছিলেন আবার পেশাদার ক্রিকেট খেলতে পারবেন?
উসমান: কোম্পানির ভারতীয় মালিক আমাকে প্রথম কয়েক মাস চিনতেন না। পরিচয় হওয়ার পর আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, আমার ক্রিকেট সামর্থ্য অুনযায়ী আমার বেতন খুব কম। কিছুদিন পর আমি ৯০ বলের ম্যাচে ৩৮ বা ৩৯ বলে ১৪০ রান করি। এরপর তিনি আমাকে অনেক সাপোর্ট দেন এবং শুধু ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে বলেন। বিপিএল শুরুর এক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এর আগে আমি একইসঙ্গে কাজ করতাম এবং ক্রিকেট খেলতাম।
টিবিএস: আপনি যখন পাকিস্তানে ছিলেন এবং পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন করতেন না, তখন কে আপনার পরিবারের দেখাশোনা করতেন?
উসমান: আমি পড়াশোনায় ভালো ছিলাম না, কিন্তু আমার ক্রিকেটীয় দক্ষতার জন্য একটি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাই। পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি, প্রথম বর্ষ শেষ করি। কলেজের ছাত্র হলে ক্লাস এড়িয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ খুঁজতাম। ভালো খেলতাম বলে ছাড় পেতাম। আমার বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী এবং তার পেনশন পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। যখন আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতে নজরে পড়ি, তখন আমি অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে শুরু করি। তারপর আমি আমার কষ্টে থাকা পরিবারকে টাকা পাঠাতে শুরু করি।
টিবিএস: টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আপনি সাত মাসে ১৮টি সেঞ্চুরি করেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
উসমান: পাকিস্তানে আমি এমন একটি ক্লাবের হয়ে খেলেছি, যেখানে জাতীয় দলের খেলোয়াড়ে ভরা ছিল। ওই দলে সুযোগ পাওয়াটা ছিল জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার মতো। ওখানে সুযোগ পাওয়ার পর আমি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছু দলের খেলোয়াড়রা খুব একটা দক্ষ নয়। আমি বিশ্বাস করতাম যে আমি সেখানে সেরা ছিলাম এবং আমি যদি ২০ ওভার খেলতে পারি, তাহলে এমনিতেই ১০০ করে ফেলতে পারব। এখানকার চেয়ে সেখানকার বোলিং লাইন আপ অপেক্ষাকৃত দুর্বল।
টিবিএস: পিএসএলে ডাক পান, কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স দলে ভেড়ায় আপনােকে। দলে ডাক পাওয়ার পর তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল?
উসমান: সংযুক্ত আরব আমিরাতের পারফরম্যান্সের জন্য পিএসএলে ডাক পাই, এমন নয়। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি পাকিস্তানে রমজান ক্রিকেট খেলেছি এবং একাধিক মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলাম। এরপর নয়া নাজিমাবাদে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে করা আরেকটি টুর্নামেন্টে আমি সাতটি ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতি। আমার ক্লাবের মালিক ২০১৮ সালে বলেছিলেন, তিনি আমাকে পিএসএলে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তা হয়নি এবং আমার আর্থিক অবস্থা আমাকে পাকিস্তানে থাকতে দেয়নি। এরপর তিনি আমার সংযুক্ত আরব আমিরাতের পারফরম্যান্স দেখেন এবং অবশেষে আমাকে দলে নেন। আমি আমার পিএসএল অভিষেকে ৮১ রান করি। এটা আমার দুর্ভাগ্য যে কোভিডের কারণে টুর্নামেন্টটি বন্ধ হয়ে যায়।
টিবিএস: পাকিস্তানের হয়ে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। এখন আপনার স্বপ্ন কী?
উসমান: আমি আগেই বলেছি যে আমার ভাগ্য আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে, আমি সেখানে যাব। আমি যদি আরও সামনে যেতে না পারি, তবে আমি এখন পর্যন্ত যা করেছি তার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। আমি যা করতে পারি, তা হলো আরও কঠোর পরিশ্রম করা। কয়েক মাসের মধ্যে আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করব এবং আশা করি শিগগিরই আমার অভিষেক হবে।
টিবিএস: বিপিএলের পারফরম্যান্স আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে কতোটা সাহায্য করবে বলে মনে করেন?
উসমান: আসলে আমি কখনই জানতাম না যে আমি টি-১০, পিএসএল বা বিপিএল খেলব। আপনি ভালো পারফর্ম করলে বিশ্ব আপনাকে খুঁজে নেবে। আপনি যদি ভালো খেলেন, মানুষ আপনাকে সমর্থন দেবে। এই সমর্থন নিয়ে আমি আরও এগিয়ে যেতে চাই এবং নিজের জন্য নাম কামাতে চাই।