থ্রিমাংকিস: গ্রাহকের স্বপ্নের কাস্টম বাইসাইকেল তৈরি করে দিচ্ছে যে প্রতিষ্ঠান
স্থানীয়ভাবে ও বিদেশ থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে সেগুলোকে জোড়া লাগিয়ে গ্রাহকের পছন্দমতো বাইসাইকেল তৈরি করে দেয় থ্রিমাংকিস কাস্টম বিল্ডস। ২০২১ সালে শাকের ইবনে আমিন এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। গ্রাহকের সাইকেল চালানোর বিভিন্ন বিষয় ও জ্যামিতিক হিসাবনিকাশ মাথায় রেখে কাস্টম সাইকেলগুলো তৈরি করে এ কারখানাটি।
তবে, এ প্রতিষ্ঠানটি তৈরির যাত্রা মূলত শুরু হয়েছিল করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে। রাস্তার অন্য গাড়ির তুলনায় বাইসাইকেলের প্রকৌশল হয়তো অনেক সাধারণ। তারপরও, এ দ্বিচক্রযানেরও এমন সব খটমটে ডিজাইন রয়েছে যেগুলোকে ঠিকভাবে করাটা ভীষণ জরুরি। এর মধ্যে আছে সাইকেলের জ্যামিতি যা আরোহীর উচ্চতা ও ভরের ওপর নির্ভর করে, টায়ারের প্রশস্ততা, চেইনের ধরন ইত্যাদি।
আর এ থেকেই উৎসাহ নিয়ে নিজের প্রথম সাইকেল তৈরি করেছিলেন শাকের।
নিজের প্রথম কাস্টম সাইকেল তৈরি করে অনেক প্রশংসা কুড়ান তিনি। বন্ধুদের সাইকেলও তৈরি করে দেন তিনি। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিজের প্যাশনকে 'থ্রিমাংকিস কাস্টম বিল্ডস' হিসেবে নামকরণ করেন তিনি। এভাবেই জন্ম হয় তার কারখানার।
ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ পরিচালনার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত শাকের। তার পরিবারের মালিকানায় রয়েছে থাই এমারেল্ড, কিয়োশি, রেড চেম্বার ইত্যাদি রেস্তোরাঁ।
টয়োটা ক্রাউন ওনার্স অ্যান্ড এনথুসিয়াস্টস ক্লাব-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শাকের। নিজের টয়োটা ক্রাউন অ্যাথলেট ফাইভ গাড়িতে করে প্রচুর ঘুরে বেড়াতেন তিনি। কিন্তু করোনার সময় ঘরবন্দি থাকাকালে বাইসাইকেল তৈরির নতুন এ প্যাশন খুঁজে পান তিনি।
'থ্রিমাংকিস কাস্টম বিল্ডস একদল চমৎকার গ্রাহক পেয়ে ধন্য। এদের বেশিরভাগই আমাদের ওপর সর্বদা তাদের বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছেন। সাইকেলের নকশার ক্ষেত্রে এ গ্রাহকেরা আমাদেরকে যথেষ্ট নমনীয়তা দেন,' থ্রিমাংকিস কাস্টম বিল্ডসের পক্ষ থেকে বলেন শাকের।
'অনেক গ্রাহক দ্বিতীয়বার সাইকেল অর্ডার করেছেন। এতে আমরা কাজে আরও বেশি উৎসাহ ও প্রেরণা পেয়েছি।'
এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ২৫টির বেশি ভিন্ন ভিন্ন কাস্টম সাইকেল নির্মাণ করেছে। তবে শাকেরে সবচেয়ে পছন্দের নির্মাণটির নাম 'সোল'। প্রতিষ্ঠানের কর্মযজ্ঞ শুরুর প্রথম দিকে তিনি এটি তৈরি করেছিলেন।
সম্প্রতি এ সাইকেলটি পুনরায় কিনে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন শাকের। নিজের জন্যই সাইকেলটি রাখবেন তিনি। গ্রামের রাস্তায় চলাচলের উপযুক্ত করতে সাইকেলটিকে নতুন করে উন্নতমানের উপাদান তিয়ে তৈরি করেছেন শাকের।
এ সাইকেলটির রয়েছে ১১-স্পিড শিমারো এসএলএক্স রিয়ার ডিরেইলিয়ার, শিমানো ডিওর এক্সটি শিফটার, এবং শিমানো ডিওর ১১-স্পিড চেইনসেট ও ক্র্যাংক।
ব্রেকিং ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে শিমানো এসএলএক্স এম৭০০০ ডুয়েল পিস্টন। এছাড়া আছে শিমানো ডিওর আরটি৫৬ ১৮০ মিলিমিটার ও এসআরএএম সেন্টারলাইন ১৮০ মিলিমিটার রোটর। এ সাইকেলে শাকের আরও সংযুক্ত করেছেন রকশক্স সাসপেন্সন এবং বনট্রেজার টিউবলেস টায়ার। রং হিসেবে সাইকেলটির জন্য লালকে পছন্দ করেছেন তিনি।
সাইকেল তৈরির কাজটা মজার হলেও সবচেয়ে বড় অসুবিধা যন্ত্রাংশ খুঁজে পাওয়া। এ কারণেই বোধহয় বাংলাদেশে কাস্টম বাইসাইকেল তৈরির খুব বেশি গ্যারেজ নেই। স্থানীয় বাজারে কেবল প্রাথমিক উপাংশগুলো মেলে।
উচ্চমানের যন্ত্রাংশগুলো সাধারণত স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সাইকেলগুলোতে পাওয়া যায় না। এগুলো বিদেশ থেকে আনাতে হয়, আর তার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করতে হয়।
করোনাভাইরাস মহামারি ও সাম্প্রতিককালে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শাকেরের কাজ আরও বেশি জটিল হয়ে উঠেছে। চীন থেকে যন্ত্রাংশ আনার খরচও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সাইকেলের দামও আকাশ ছুঁয়েছে।
'ভবিষ্যতে আমদানি করা বাইসাইকেল কাঠামো ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ দিয়ে কারখানা বাড়াতে চাই। ইচ্ছে আছে একটি পুরোদস্তুর অ্যাসেম্বলিং প্ল্যান্ট তৈরি করা যেখানে সাইকেল রং করারও ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া থ্রিমাংকিসের জন্য একটি বিটুসি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরিরও পরিকল্পনা আছে,' বলেন তিনি।