চ্যাটজিপিটি নিয়ে নোয়াম চমস্কি: এটা মূলত ‘অত্যাধুনিক চৌর্যবৃত্তি’ এবং ‘না শিখতে চাওয়ার রাস্তা’
ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ বুঝতে পারা এবং সেভাবেই প্রত্যুত্তর দেওয়া চ্যাটজিপিটি সিস্টেম ইতোমধ্যেই আলোড়ন তৈরি করেছে। যদি আপনি ইতোমধ্যেই এটি ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই ভেবেছেন, এই প্রযুক্তি আগামী দিনগুলোতে কী বিপ্লব করতে যাচ্ছে, অথবা কী কী জিনিস ধ্বংস করতে যাচ্ছে। চ্যাটজিপিটির প্রথম শিকার হিসেবে অনেকেই মনে করছেন আগামীদিনের শিক্ষাব্যবস্থাকে। 'বিশেষ করে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে যে রচনা লেখা হয়, তা দীর্ঘদিন ধরেই মানবীয় শিক্ষাব্যবস্থার মূলভিত্তি' বলে দ্য আটলান্টিক-এর এক লেখায় দাবি করেন স্টিফেন মার্শে। তার মতে, "এটা এমন এক সংস্কৃতি যার মাধ্যমে আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে গবেষণা করতে শেখাই, চিন্তা করতে শেখাই, লিখতে শেখাই। এই পুরো ব্যবস্থাটির ভিত্তিই নড়ে গেল এর ফলে।"
যদি চ্যাটজিপিটি মুহূর্তের মধ্যেই যেকোনো বিষয়ে অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ হওয়ার মতো রচনা লিখে ফেলতে পারে, তবে এই অ্যাকাডেমিক রচনার ভবিষ্যৎ কী? ইউটিউব চ্যানেল এডুকিচেনের উপস্থাপক এ ধরনেরই কিছু প্রশ্ন করেন নোয়াম চমস্কিকে। চমস্কির উত্তর ছিল, "দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপকদের কাছে শিক্ষার্থীরা চুরি করছে কি-না তা পরীক্ষা করার প্রোগ্রাম ছিল। এখন এটা আরও কঠিন হয়ে পড়বে, কারণ চুরি করা এখন আরও সহজ হয়ে গিয়েছে। এটাই শিক্ষাক্ষেত্রে এই প্রোগ্রামের একমাত্র অবদান।" নোয়াম চমস্কি বিশ্বাস করেন, এটা হয়তো অন্যান্য ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে, তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে নয়।
চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকে নোয়াম চমস্কি স্রেফ 'অত্যাধুনিক চৌর্যবৃত্তি' এবং 'না শিখতে চাওয়ার রাস্তা' হিসেবে মনে করেন। তিনি এর সাথে স্মার্টফোনের উত্থানকে তুলনা করেন। তার মতে, অনেক শিক্ষার্থীই আছে, যারা ক্লাসরুমে বসেই তাদের আইফোনে অন্যদের সাথে চ্যাটিং করে। এটি থামানোর একটি উপায় ক্লাসরুমে আইফোন নিষিদ্ধ করা। আরেকটি উপায় ক্লাসকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। শিক্ষার্থীদের না শিখতে চাওয়ার আগ্রহ এবং নিজেদের শেখার বদলে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার 'শিক্ষাব্যবস্থা পতন'-এর একটি চিহ্ন। শিক্ষা যদি শিক্ষার্থীদের কাছে "আকর্ষণীয় না হয়, তাদেরকে আগ্রহী না করে তোলে, তাদেরকে চ্যালেঞ্জ না করে, তাদেরকে শেখার কাজে উদ্বুদ্ধ না করে, তারা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দূরে চলে যাবে।" তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন, যখন এক বিরক্তিকর রসায়ন কোর্সে পাশ করার জন্য তিনি এক বন্ধুর নোটখাতার সাহায্য নিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় এমআইটিতে শিক্ষকতা করে কাটানোর পর চমস্কি এখন পুরোদমে বুদ্ধিজীবি হিসেবে কাজ করছেন।
ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টনের শিক্ষক রবার্ট জারেৎস্কি অবশ্য চ্যাটজিপিটি এবং শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আরও হতাশাজনক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তার মতে, "কলেজের রচনা লেখা অনেক আগেই মারা গেছে। এটা এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে একজন শিক্ষার্থী আমাকে একটি ইলেকট্রনিক ফাইল পাঠায়। যখন সেটা খোলা হয়, সেটা কিছু শব্দ বের করে দেখায়, যেটা একটি 'শেষ হওয়া অ্যাকাডেমিক পেপার' হিসেবে দাবি করে নিজেকে।" এরচেয়ে মেশিন-লার্নিং সিস্টেমের লেখা পেপার শিক্ষকের কাছে আরও আকর্ষণীয় মনে হবে। বেশিরভাগ প্রযুক্তিগত 'ডিজরাপশন' ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ধরনের প্রভাবই ফেলে। যদি কলেজের রচনা মৃতই হয়, তবে হয়তো চ্যাটজিপিটি আরও আকর্ষণীয় কিছু বের করবে।
সূত্র: ওপেনকালচার