দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৩ শিশু মারা যায়
দেশে গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ শতাংশই ছিল শিশু। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে তিনজনের বেশি শিশু সড়কে প্রাণ হারিয়েছে। সড়কে শিশু মৃত্যু ঠেকাতে গাড়িতে সিট বেল্ট বাঁধা, যানবাহনে শিশুদের উপযোগী সিটের ব্যবস্থা করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭৭১৩ জন। এর মধ্যে ৩ মাস থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ১১৪৩।
বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী হিসেবে নিহত হয়েছে ৩২.১৯% শিশু, রাস্তা পারাপার ও রাস্তা ধরে হাঁটার সময় যানবাহনের চাপায় বা ধাক্কায় নিহত হয়েছে ৪১.৯০%, ট্রাক-পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রাক, থ্রি-হুইলার ইত্যাদি যানবাহনের চালক ও সহকারী হিসেবে নিহত হয়েছে ৭.৩৪% এবং মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী হিসেবে নিহত হয়েছে ১৮.৫৪% শিশু।
দেশে ২০১৯ সালে ৬০০ এর বেশি শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। পরের দুই বছরে এ সংখ্যা বেড়েছে। তবে গত বছর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। নয়টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
'নিরাপদ সড়ক চাই' এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গাড়িতে শিশুদের বয়স, উচ্চতা অনুযায়ী শিশুবান্ধব সিট গাড়ির সিটের সাথে যুক্ত করা হয়। এতে দুর্ঘটনা ঘটলে শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি কমে।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, যানবাহনে শিশুবান্ধব আসনের ব্যবহার শিশুদের সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের ঝুঁকি ৭১%-৮২% হ্রাস করে।
দুর্ঘটনায় শিশু নিহত হওয়া সড়কের ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মহাসড়কে নিহত হয়েছে ১৬.০৯%, আঞ্চলিক সড়কে নিহত হয়েছে ২৭.৯০%, গ্রামীণ সড়কে নিহত হয়েছে ৪১.৭৩%, শহরের সড়কে নিহত হয়েছে ১৩.০৩% এবং অন্যান্য স্থানে নিহত হয়েছে ১.২২%।
১৩ বছর থেকে ১৭ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি শিশু নিহত হয়েছে ৪৯.৯৫%। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসার সময় নিহত হয়েছে ৪২৭ শিশু (৩৭.৩৫%) এবং বসতবাড়ির আশেপাশের সড়কে খেলাধুলার সময় নিহত হয়েছে ১১৯ শিশু (১০.৪১%)।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, 'দেশের সড়ক ও সড়ক পরিবহন শিশুবান্ধব নয়। শিশুদের জন্য উপযোগী যানবাহন নেই। আবার শিশুরা সড়ক ব্যবহারের কোনো নিয়ম-নীতি জানে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে যেমন কোনো উদ্বেগ নেই, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোনো প্রকার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অথচ এই অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নীরবে আমাদের শিশুরা নিহত হচ্ছে, পঙ্গু হচ্ছে। এটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।'
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, 'শিশুদের বসার আলাদা ব্যবস্থা করার জন্য আমাদের বিধিতে উল্লেখ আছে। বিআরটিএ এটি নিয়ে কাজ করছে। দেশের কোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি যাতে সিট তৈরির সময় শিশুদের বিষয়টি লক্ষ্য রাখে। এছাড়া বাইরে থেকে যারা সিট আনে তারাও যেন শিশুদের বিষয়টি গুরুত্ব দেয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যানবাহন চালক ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আমরা কাজ করছি।'