চট্টগ্রামে মার্কেটে আগুন: লাইসেন্স ছাড়াই চলছিলো ক্যামিকেল বিক্রি
চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লায় সমবায় মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানী ঢাকার নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো ট্রাজেডি ঘটতে পারত বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তার সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, 'যে দোকানে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সেটি ছিলো একটি ফ্রিজ-এয়ার কন্ডিশন তৈরীর কারখানা। সেখানে কোনো ফায়ার সেফটি ইকুইপমেন্ট ছিলো না। এছাড়া পাশেই এবি সার্জিক্যাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ক্যামিক্যাল মজুদ করে বিক্রি করছিলো। অন্য একটি দোকানে ছিলো গ্যাস সিলিন্ডার।'
'চট্টগ্রামবাসী অনেক ভাগ্যবান যে ক্যামিকেলে আগুন ছড়িয়ে পড়েনি বা সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়নি। যদি এমনটা ঘটতো তাহলে শুধু একজন নয়; এখানে নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো ট্রাজেডি ঘটার সম্ভাবনা ছিলো,' বলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
জেলা প্রশাসকের বক্তব্য চলাকালেই আবারও অগ্নিদুর্গত ওই মার্কেট থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় দোকানদার ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে আন্দরকিল্লা জেমিসন রেডক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল সংলগ্ন সমবায় মার্কেটে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। আগুনে একটি ফ্রিজ-এয়ারকন্ডিশন মেরামতের দোকান, একটি লেদ মেশিনের দোকান, একটি সার্জিক্যাল শপসহ ছয়টি দোকান আগুনে পুড়ে যায়। এর মধ্যে আলম ইঞ্জিনিয়ারিং নামে লেদ মেশিনের দোকান থেকে মো. ইদ্রিস নামে (৪০) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, 'আমরা পুরো এলাকাটি ঘুরে দেখেছি। এখানে যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলো পুরোপুরি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। যেখানে আগুন লেগেছে তার পাশেই ক্যামিকেল মজুদ করা হয়েছে। অথচ ভবনটিতে ওঠার সিঁড়িটি এত সরু, যে দুইজন মানুষ চলাচলও করা যায় না। আগুন লাগলেও এখানে নেভানোর কোনো সুযোগ নেই।'
লাইসেন্স ছাড়াই ক্যামিকেল মজুদ ও বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে এবি সার্জিক্যালের মালিক দিদারুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা
আন্দরকিল্লায় সমবায় মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন দোকান মালিকরা। তারা বলছেন, মূলত জায়গা জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে মার্কেটে।
নিহত মো. ইদ্রিসের ভাতিজা ও আলম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্তাধিকারী খোরশেদুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এটি একটি লেদ মেশিনের দোকান। এখানে আগুনের কোনো কাজ নেই। গত ৬০ বছর ধরে আমাদের পরিবার এই দোকৎগুলো পরিচালনা করছে। জায়গার মালিক ইসলামাবাদ টাউন প্রপার্টিজের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এটা নিয়ে হাইকোর্টর স্টে-অর্ডারও আছে। এসবের জেরে উচ্ছেদের লক্ষ্যে আগুন দেওয়া হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।'
চট্টগ্রাম ফায়ায় সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, 'দুর্ঘটনাকবলিত দোকানগুলোর একটিতেও অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। যিনি মারা গেছেন তিনি দোকানেই থাকতেন। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়েছে যে তিনি দরজা খুলে বেড়িয়ে আসতে পারেননি। আমরা এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এদিকে দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই ইসলামাবাদ টাউন প্রপার্টিজের অফিসের অবস্থান হলেও সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, নিহতের দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিসকে সঙ্গে নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।