শূন্য কার্বন নিঃসরণকারী হওয়ার লক্ষ্যে আকিজ-বশিরের নতুন পথচলা
আকিজ গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ বশির উদ্দিন সোমবার আকিজ বশির গ্রুপ তৈরির ঘোষণা দেন। এই শিল্পগোষ্ঠীতে আকিজ গ্রুপের কিছু ব্যবসার পাশাপাশি তার নিজস্ব উদ্যোগও আছে। নতুন যাত্রা শুরু করা গ্রুপটির শূন্য কার্বন নিঃসরণকারী হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। একইসঙ্গে, নিজেদের শিল্প কারখানায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও শূন্যে রাখতে চায়। বিদ্যুতের জন্যও সৌরশক্তির প্রতি আরো নির্ভরশীল হবে। কীভাবে বিশাল পরিসরের এই নতুন শিল্পগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজিয়েছেন – দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার খানের সাথে সাক্ষাৎকারে সে সম্পর্কে ধারণা দেন শেখ বশির উদ্দিন।
চলতি বছরের মধ্যেই আপনাদের আকিজ-বশির গ্রুপ বিভিন্ন শিল্প ইউনিটে ৪০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। আপনি নিজেও দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রুপে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। সিলেটে ১,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি গ্লাস ফ্যাক্টরিও চালু করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন এই ব্যবসায়িক সত্ত্বা, অর্থাৎ আকিজ-বশির গ্রুপ নিয়ে আপনার সার্বিক পরিকল্পনাগুলো কী কী?
১৯৫০'র দশকে আমার বাবা আকিজ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। সময়ের সাথে সাথে যথেষ্ট বড় হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায় যোগ হয়েছে অনেক বৈচিত্র্য। ব্যবসা পরিচালনায় আমরা দ্বিতীয় প্রজন্ম, আর তৃতীয় প্রজন্ম প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের ব্যবসার পরিধি ও বৈচিত্র্যের কারণেই কিছু শিল্প ইউনিটকে এক ছাতার অধীনে আনা দরকার; যাতে সেগুলো একেক জন নেতৃত্ব দিতে পারে।
২০০৬ সালে আমার বাবা মারা যান। তারপর গ্রুপকে নেতৃত্বদানের দায়িত্ব প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করেছি। এই সময়ে, আমার ভাইয়েরা বিভিন্ন ব্যবসাকে একত্র করে ক্লাস্টার গড়ে সেগুলোর নেতৃত্ব নিয়েছেন।
সেই ধারাবাহিকতা অনুসারেই, আমরাও একটি ক্লাস্টারের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করছি এবং ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারণ করতে চাইছি। মালিকানা কাঠামোয় পরিবর্তন আসায় আমাদের কাছে মনে হয়েছে একটি নির্দিষ্ট পরিচয় থাকাও দরকার। সেজন্যই নতুন নামকরণটা গুরুত্ব পায়। এসব বাস্তবতার মিলমিশে আমরা আকিজ-বশির গ্রুপ লঞ্চ করেছি।
আপনার ক্লাস্টারের অধীনে কোন ধরনের ব্যবসাগুলো রয়েছে?
আকিজ গ্রুপের অধীনে থাকা কিছু ঐতিহ্যগত ব্যবসা, যেমন পার্টিকেল বোর্ড তৈরি, সিরামিক ও ফ্লেক্সিবল ফিল্মের ব্যবসা। এছাড়া, (গ্রুপের বাইরে) আমি নিজের পথচলাও শুরু করেছি। আমরা তিনটি পাট কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছি। আর আপনি তো জানেনই, দেশের সীমা ছাড়িয়ে মালয়েশিয়াতেও আমরা একটি অধিগ্রহণ করেছি। সেখানে আমরা মিডিয়াম ডেনসিটি ফাইবার (এমডিএফ) বোর্ড উৎপাদন করছি, আমরা এমডিএফ ফ্লোরিং-ও প্রস্তুত করছি।
পরে আমরা পেইন্ট ও অ্যাডহেসিভের মতো কিছু ব্যবসাও শুরু করেছি। মালয়েশিয়ার মতোন বাংলাদেশেও একটি এমডিএফ উৎপাদনের প্রকল্প নিচ্ছি। আরো থাকছে বাথওয়্যার ও টেবিলওয়্যারের কারখানা। ফলে নতুন ও ঐতিহ্যগত ব্যবসার মিলিত প্রয়াস থাকছে বলতে পারেন।
আপনাদের পাটকলগুলো কেমন ব্যবসা করছে?
আমরা যেসব পাটকল অধিগ্রহণ করেছি তার সবগুলোই ছিল বেসরকারি মালিকানার। সরকার থেকে কোনো মিল কেনা হয়নি। আমি বলব, আমরা খুবই ভালো করছি। যেমন ধরেন, এই তিনটি কোম্পানি কেনার সময় তাদের সামষ্টিক উৎপাদন ছিল ৩৯ হাজার টন। আশা করছি, চলতি বছরে তা ৯০ হাজার টনে পৌঁছাবে। সামগ্রিকভাবে এটা আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ উৎপাদক কোম্পানিতে পরিণত করেছে। পাটপণ্যে বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ নিয়ে বর্তমানে আমরাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যসম্পন্ন কোম্পানি।
পাটকলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন?
এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবরসায়ন বিভাগের সাথে একটি চুক্তি সই করেছি। পাঁচজন পিএইচডি স্কলার আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। পাটের বীজ, রেটিং বা পচন, প্রক্রিয়াকরণ ও মাইক্রোবায়োলজিক্যাল কম্পোনেন্টে বড় বিনিয়োগ করছি, এসবের মাধ্যমে পাটের আঁশ আরো মজবুত করা যায়, ফলে তা আরো হালকা ও সাশ্রয়ী হয়।
পাট নিয়ে আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য কী?
৭৫ বছর ধরে আমার পরিবার পাটের ব্যবসায় আছে। অথচ এটাই ছিল এমন একটা ব্যবসা যাতে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না। বলতে পারেন এখানে আমি বেশ নবীন। মাত্র দুই বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ ব্যবসায় নেমেছি। আমার মতে, পাট এক সোনার খনি। তবে এ শিল্পে সঠিক বোঝাপড়ার অভাবটা আছে। প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় ধরে পাটের অনেক বেশি উপেক্ষা রয়েছে।
তাই আমি এ শিল্পে রুপান্তর আনার চেষ্টা করছি। টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও গ্রাজুয়েটদের সাথে পার্টনারশিপে যাচ্ছি। প্রক্রিয়াকরণের ধারণাটাই আমরা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছি।
বাবার সাথে ১৭ বছর কাজ করেছি, আমার প্রশিক্ষকও তিনিই। বাবা প্রযুক্তিতে আস্থা রাখতেন। যে কয়টি শিল্পে তিনি বিনিয়োগ করেছেন, তার সবকটিতেই প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির অগ্রদূত ছিলেন।
বাবার কাজ থেকে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা নিয়েই আমি নতুন সম্ভাবনা ও ক্ষেত্র খুঁজছি। আর আমি দেখতে পাচ্ছি, এপথ সোনায় মোড়ানো (অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে)। পাটশিল্প নিয়ে একটা সর্বজনীন ধারণা যে এর সূর্য অস্তগামী, অর্থাৎ এটি পড়তির দিকে। আসলে বাস্তবতা হবে উল্টোটাই।
কিন্তু, ভুল হচ্ছে দুই জায়গায়। পাট একইসাথে টেক্সটাইল ফাইবার ও একটি কাঁচামাল/পণ্য। তাই স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে, কিন্তু পণ্য শিল্পের বাস্তবতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। এই উপলদ্ধিকে মাথায় রেখেই পাট শিল্পের পরিকল্পনা করা দরকার।
আর ঠিক এই কাজটাই আমরা করছি, এক্ষেত্রে টেক্সটাইল মিল গড়ার অভিজ্ঞতা আমার জন্য খুবই সহায়ক হচ্ছে। কারণ, বাবা যখন আমাকে টেক্সটাইল কোম্পানি গড়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেসময় আমাদেরটাই ছিল অন্যতম আধুনিক কারখানা। এটা আমাকে পাট শিল্পকে রুপান্তরে সাহায্য করেছে।
এজন্য প্রথমে আমি কুমিল্লায় পরীক্ষামূলক একটা পাটকল করি। সেখানে কম জ্বালানি ও জনবল ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর আপনি যদি পণ্য শিল্পের কেউ হন, তাহলে আপনি জানেন, পণ্য শিল্পের 'বেসিক সায়েন্স' হচ্ছে- উৎপাদন খরচকে যতটা সম্ভব কম রাখতে হবে। বাংলাদেশের পাট শিল্পের প্রধান সমস্যা হলো- পাটকলগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট। অন্যদিকে, স্বাধীনতাপূর্ব পাটকলগুলোর দিকে তাকালে দেখবেন, শুরু থেকেই সেগুলো বৃহৎ আকারে করা হয়েছিল।
তাই পণ্য/ কাঁচামাল শিল্পের নির্দিষ্ট খরচ কমাতে হলে, আপনাকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। এতে সার্বিক বা মাথাপিছু খরচ কমবে। কেউ যদি এটা করতে পারেন, তাহলে এই শিল্পের সামনে এখনও উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।
আপনার নতুন ব্যবসাগুলোর হালচাল কেমন?
দুই সপ্তাহ আগে ফ্রাঙ্কফুর্টে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেবিলওয়্যার মেলায় যোগ দিয়ে দেশে ফিরেছি। মাত্র এক বছর পুরোনো কোম্পানি হিসেবে মেলায় আমরা প্রত্যাশাতীত সাড়া পেয়েছি। সেখানে আমরা ১৪ মিলিয়ন ইউরোর একটি চুক্তি নিয়েও আলোচনা করেছি।
এখাতে আমরাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। কোম্পানির কর্মী এবং প্রযুক্তির কল্যাণে মাত্র এক বছরেই আমাদের দেশের সর্ববৃহৎ টেবিলওয়্যার কোম্পানি হয়ে ওঠা।
ফলে দেখা যাচ্ছে, আমরা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়- যেমন পাট একটা পণ্য/কাঁচামাল; আবার টেবিলওয়্যার একটি আর্টিসান প্রোডাক্ট- উভয়কে সমন্বয় করতে পেরেছি।
টাইলসেও আমরা যথেষ্ট উদ্ভাবনা এনেছি, নিত্যনতুন উদ্ভাবনার চেষ্টাও থেমে নেই। বাংলাদেশের প্রথম কোম্পানি হিসেবে আমরা তিন বছর ধরে ইংল্যান্ডে স্যানিটারিওয়্যার রপ্তানি করছি।
আপনার ভিশন কী?
একটা হলো প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা গড়ে তোলা। এজন্য সঠিক জায়গায় সঠিক মেধাসম্পন্নদের দরকার। আর যেমনটা বলেছি, আমার দীক্ষাগুরু ছিলেন বাবা, আর তিনি সব সময় চৌকস মানুষদের সাথে কাজ করেছেন। আমিও ভাগ্যবান, কারণ এই কোম্পানিতে অনেক অসাধারণ কর্মী আছেন।
পাট ও টেবিলওয়্যার নিয়ে আমাদের সার্বিক চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। উভয় শিল্পের চাহিদা আলাদা হলেও উভয় ক্ষেত্রেই (সাফল্যের জন্য) সঠিক জায়গায় সঠিক ব্যক্তিদের প্রয়োজন।
দেশের সবচেয়ে সম্মানীয় কোম্পানি হওয়ার লক্ষ্য আমাদের। এটাই আমাকে চালিত করে। বস্তুগত সম্পদ অর্জন দিয়ে কখনোই আমি সাফল্যকে মাপি না। মানুষের জীবনে অবদান রেখে, তাদের সমস্যা সমাধান করে সমাজ থেকে আমি যে স্বীকৃতি ও সম্মান পাব তা দিয়েই আমি সাফল্যকে মাপব।
আকিজ-বশির গ্রুপের অধীনে কতজন কর্মী রয়েছেন?
বর্তমানে আমাদের সাড়ে ২৩ থেকে ২৪ হাজার কর্মী রয়েছে। আমাদের পাট শিল্পেই বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে – ফরিদপুর, ঘোড়াশাল ও কুমিল্লার মতো বিভিন্ন লোকেশন মিলিয়ে তা প্রায় ১০ হাজার জন। এখাতে আমাদের বিকাশও হচ্ছে। টেবিলওয়্যার খাতেও অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে, যেহেতু এটা কর্মী-নির্ভর শিল্প।
আমাদের কিছু উচ্চ মাত্রায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে চালিত (অটোমেটেড) কারখানা রয়েছে, আমাদের ফ্লেক্সিবল ফিল্ম কারখানায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার থাকায়- সেখানে খুব কমই জনবল দরকার হয়। আমাদের কার্যক্রম প্রযুক্তিগত দিক থেকে বেশ অগ্রসর।
নতুন এই গ্রুপের অধীনে নতুন কোনো উদ্যোগ কী অচিরেই আসার সম্ভাবনা আছে?
আপনাকে তো পেইন্ট আর অ্যাডহেসিভ ব্যবসার কথা বলেছি। আপাতত আমরা ঘরটাকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। কারণ, আপনি বুঝতেই পারছেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানও আমার বাবারই উত্তরাধিকার সূত্রে। তবে আমরা নতুন পরিচয় তৈরি করেছি এবং নতুন জায়গায় নতুন একটা অফিসও করেছি। আপাতত মনে করি, আগামী বছর দুয়েক আমরা একটু ধীর গতিতেই এগোব, যাতে যথেষ্ট পুঁজি জমা করে উপযুক্ত বিনিয়োগ করতে পারি।
তাই যদি আপনি জানতে চান আর কী আসছে, তাহলে আমাদের আসন্ন গ্লাস ফ্যাক্টরির কথাই বলব। হবিগঞ্জে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার এটা বেশ বড় একটা বিনিয়োগ। এখানে ভবনে ব্যবহৃত আর্কিটেকচারাল গ্লাস উৎপাদন করা হবে।
কারখানা নির্মাণের ক্ষেত্রে সব সময় আমরা বিশেষ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করি। যেমন আমরা সার্কুলার ও বিদ্যুৎ/জ্বালানি সাশ্রয়ী ভবন পছন্দ করি। আপনি যদি আমাদের প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখেন, দেখবেন আমাদের কিছু কর্মী রয়েছেন যারা জ্বালানি, বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও নবায়নযোগ্য উৎস ব্যবহারের বিষয়ে ভীষণ আগ্রহী।
আমার বাবা এবিষয়ে জোর দিতেন, আর আমরাও সব সময় এটা করেছি। এসব প্রযুক্তি হয়তো আমার বাবার সময়ে ছিল না। কিন্তু, আমরা আরো প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছি।
সৌরশক্তির দিক থেকে আমরা সেখানে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করব; এর পাশাপাশি কাচ গলানোর প্রক্রিয়ার জন্য তিন মেগাওয়াটের একটি প্ল্যান্ট থাকবে। কাচ উৎপাদনে এর কাঁচামালকে ১৬০০ ডিগ্রী তাপমাত্রায় গলাতে হয়, চিমনি দিয়ে বের হওয়া ধোঁয়ার উত্তাপই থাকে ৬০০ ডিগ্রী। অর্থাৎ, এতে বিপুল শক্তির অপচয় হয়।
তাই আমরা চিমনির নির্গত ধোঁয়া দিয়ে বাষ্প উৎপাদন করব, তা দিয়ে টার্বাইন চালিয়ে ৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব।
ফার্নেস বা চুল্লির জন্য আমরা গ্যাসও ব্যবহার করব। এটা একটা বাড়তি ব্যবস্থা। চুল্লি কখনো বন্ধ রাখা যায় না তাই আমরা গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলসহ সব ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা রাখছি।
কাচ উৎপাদনের কার্যক্রম ২৪/৭ বা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। কখনো এটা বন্ধ রাখা যায় না। এমনকী যদি ১০ মিনিটও বন্ধ রাখেন, তাহলে চুল্লির ভেতর কাঁচ জমে শক্ত হয়ে যাবে।
আমাদের চুল্লিটির আয়ুষ্কাল ১২ বছর। এই সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও এটা বন্ধ রাখা যাবে না। ১২ বছর পর করা যাবে, তারপর এটি পুনঃনির্মাণে আরেক বছর সময় লাগবে।
আপনাদের পরিবেশগত লক্ষ্যগুলো কী?
আমাদের লক্ষ্য হলো শূন্য কার্বন নিঃসরণকারী বা নেট জিরো প্রতিষ্ঠান হওয়া। কীভাবে তা অর্জিত হবে সেটা আপনাকে বুঝিয়ে বলার মতো যথেষ্ট যোগ্যতা বা জ্ঞান আমার নেই। নেট জিরো অর্জনের রাস্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমি ও আমার চার সহকর্মী আগামী সপ্তাহে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত সেমিনারে অংশ নেব। তাই এটা পুরোপুরি বুঝে ওঠার আগে আপাতত আমরা শূন্য ডিসচার্জ এর উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থাৎ আমরা কোনো ধরনের বর্জ্য নির্গমন করব না।
আমাদের বর্জ্য নির্গমন শুন্য কোম্পানি হওয়ার লক্ষ্যও আছে, ভুগর্ভস্থ পানি ব্যবহারও শূন্যে নামাতে চাই। চলতি বছরের জন্য আমাদের লক্ষ্য হলো ৪০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্ল্যান্ট স্থাপন। বর্তমানে আমরা সাড়ে ৩ মেগাওয়াট সক্ষমতার নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। এছাড়া, ১২ মেগাওয়াট সক্ষমতা স্থাপন পর্যায়ে রয়েছে।
এসব স্থাপন করা হচ্ছে আমাদের বর্তমান কারখানাগুলোয়। (বাংলাদেশের) শিল্পখাতে আমরাই হব নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎচালিত শিল্পগোষ্ঠী। নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশা করছি।
এরমধ্যেই আমাদের পাটকলগুলো শূন্য বর্জ্য নির্গমন অর্জন করেছে। আমাদের যথাযথ ইটিপি, ডব্লিউটিপি রয়েছে, আর সেটা যথেষ্ট বড়। আমাদের ডায়িং কারখানাও যথেষ্ট বড়। সেখানে আমাদের বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করতে হয়, এজন্য আমরা একপ্রকার দায়বদ্ধতা অনুভব করি। তাই সেখানেও 'জিরো ডিসচার্জ' অর্জন করেছি।
এখনও আমরা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করি, তবে একটি জলাশয় তৈরির চেষ্টা আছে। সেখানে আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করব, যা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে (ডব্লিউটিপি) পরিশোধন করা হবে। আপাতত এসব উদ্যোগই বলতে পারেন।
সবুজ উদ্যোগে বিনিয়োগের পরও কী লাভ করতে পারবেন?
এসব প্রচেষ্টা যখন শুরু করি, তখন আমাদের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবসা দেখতাম। আমার মতে, এতে ভালো সুফল পাওয়া যায়। এসব উদ্যোগ নিজে থেকেই আপনাকে প্রতিদান দেয়।
যেমন ধরুন ২০০৭-০৮ সালে আমি এজন্য ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করি, এসময়ে পানি নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সের একটি বিখ্যাত কোম্পানি এভিয়েন আমাদের সঙ্গী হয়েছিল। আমরা দেখেছি, এতে দারুণ ফল পাওয়া যায়।
প্রধানত দুটি কারণে এসব সবুজ উদ্যোগে আমি আগ্রহী। প্রথমত, আমরা একটি সম্মানীয় কোম্পানি হতে চাই এবং দ্বিতীয়ত, যে সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছি, তার সুরক্ষায় আমরা দায়িত্ব অনুভব করি।
তাছাড়া, পরিবেশ সুরক্ষার বিদ্যমান যেসব বিধিমালা আছে, দিনে দিনে সেগুলো আরো কঠোর হবে। তারই প্রস্তুতি হিসেবে আমরা আরো এগিয়ে থাকতে চাই, যাতে বিধিমালা কঠোর হলে তার সাথে মান্যতা রক্ষা করা যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে যারা ব্যবসা করেন তাদের দরকার ভালো গ্রাহক, আর ভালো গ্রাহকরা চান মানসম্মত সরবরাহ। তাই এটা পারস্পরিকভাবেও লাভজনক একটা ব্যবস্থা।