প্রিয়া সাহার ‘ভয়ংকর মিথ্যা’ বিশ্বাস করার মতো বোকা নন ট্রাম্পঃ জয়
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার সরকার প্রিয়া সাহার এই ধরণের ‘ভয়ংকর মিথ্যা দাবি’ বিশ্বাস করার মতন বোকা নন।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার দুইদিন পর রোববার নিজের ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে এ মত দেন তিনি।
তিনি বলেন, “সৌভাগ্যবশত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সরকার অন্যান্য দেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার নীতিতে বিশ্বাসী নন। তারা এই ধরণের ভয়ংকর মিথ্যা দাবি বিশ্বাস করার মতন বোকাও নন।”
ট্রাম্পের বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা দিলেও বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী পুত্র।
প্রিয়া সাহার এই বক্তব্যের পেছনে মার্কিন দূতাবাসের ‘দুরভিসন্ধিও’ দেখেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “প্রিয়া সাহাকে আমেরিকায় পাঠানো হয় বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের মনোনয়নে। অনেক সমালোচনার পর আজ তারা একটি বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তারা বলেছেন তারা অংশগ্রহণকারীদের কথাবার্তার উপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেন না। কিন্তু যখন তাদের একজন মনোনীত অংশগ্রহণকারী তাদেরই রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে কোনো ভয়ংকর মিথ্যা বক্তব্য দিলেন, তাদের উচিত ছিল তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিবাদ জানানো, যা তারা করেননি। এই বিষয়টি থেকে কিন্তু মার্কিন দূতাবাসেরই দুরভিসন্ধি প্রকাশ পায়।”
মানবিকতার দোহাই দিয়ে এই অঞ্চলে যেন মার্কিন সেনা অভিযানের ক্ষেত্র তৈরি করা যায় সেজন্যই জেনেশুনে মার্কিন দূতাবাস প্রিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের ঐ সম্মেলনে যাওয়ার জন্য বাছাই করেছে বলে স্ট্যাটাসে লেখেন জয়।
“তারা জেনেশুনেই প্রিয়া সাহাকে বাছাই করে কারণ তারা জানতো উনি এই ধরণের ভয়ংকর মিথ্যা মন্তব্য করবেন। এই ধরণের কাজের পিছে একটাই কারণ চিন্তা করা যায়: মানবিকতার দোহাই দিয়ে আমাদের এই অঞ্চলে সেনা অভিযানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। মনে রাখা ভালো কয়েকদিন আগেই মার্কিন এক কংগ্রেসম্যান একটি বক্তব্যে বলেছিলেন বাংলাদেশের মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য দখল করা উচিত।”
মার্কিন দূতাবাস যে ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী’ তা ‘নতুন কিছু নয়’ উল্লেখ করে জয় বলেন, “তাদের সকল অনুষ্ঠানেই জামাত নেতাকর্মীরা ও যুদ্ধাপরাধীরা নিয়মিত আমন্ত্রিত হতেন। প্রিয়া সাহার মিথ্যা বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে তাদের সরাসরি আধিপত্য বিস্তারের ষড়যন্ত্র পরিষ্কারভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।”
ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা যে তিন কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ গুম হওয়ার অভিযোগ দিয়েছেন সে সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জয়।
তিনি বলেন, “উনি বলেছেন বাংলাদেশ থেকে নাকি ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা 'গায়েব' বা 'গুম' হয়ে গেছেন। প্রায় ৪ কোটির কাছাকাছি যে সংখ্যাটি উনি বলছেন তা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যার ১০ গুণেরও বেশি, আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যার কাছাকাছি। এতো মানুষ গুম হলো সবার অজান্তে? ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ গায়েব হলো কোনো তথ্য প্রমান ছাড়াই?”
ট্রাম্পের কাছে কি বলেছেন প্রিয়া সাহা?
যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মত আয়োজিত ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক তিন দিনের একটি সম্মেলনে যোগ দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা দেখা করে নিজ নিজ দেশের সমস্যার কথা জানান। সেখানেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ জানান বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা।
ট্রাম্পের কাছে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ আছে। আমার অনুরোধ, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু বিচার হয়নি।”
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানতে চেয়েছিলেন- কারা তার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, জমি কেড়ে নিয়েছে।
জবাবে প্রিয়া বলেন, তারা মুসলিম মৌলবাদী, তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।
ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা তৈরি হয়। বাংলাদেশ সরকারও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
কে এই প্রিয়া সাহা?
প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক।
তিনি ‘শারি’ নামে বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত। প্রিয়া সাহা ‘দলিত কণ্ঠ’ নামে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক।
পিরোজপুরের মেয়ে প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা। তাদের দুই মেয়ে পড়াশোনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রিয়া। থাকতেন রোকেয়া হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
তিনি ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ এনে গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক সংগঠন ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’র কর্মকর্তা জয় ক্যানসারার উদ্যোগে প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে ওই সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন।