নিষেধাজ্ঞায় ঘাবড়ানোর কিছু নেই, র্যাবের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে না ঘাবড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে (নিষেধাজ্ঞা) কারও মনোকষ্ট হওয়া উচিত নয়। কিছু দিন আগে একটি দেশ র্যাবের ওপর একটি স্যাংশন দিয়েছিল বলে অনেকেই প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, এখানে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।'
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার (১৯ মার্চ) সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরে র্যাবের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'এটা আমাদের দেশ, আমরা রক্ত দিয়ে এর স্বাধীনতা এনেছি। কাজেই আমার দেশে যারা কাজ করে তারা কে কী করে-না করে সেটা আমরা জানি। বিচারটা আমরা করব, সেই আত্মবিশ্বাস রেখেই কাজ করতে হবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'যারা এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশের বদনাম করে, বাংলাদেশের একেকটা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদেরকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা কোন উদ্দেশ্যে করছে সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।' ভালো-মন্দের বিচার বাংলাদেশ সরকার করতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাব এবং এর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কে ভালো করল, কে মন্দ করল সেটার বিচার তো আমরাই করতে পারি, করে যাচ্ছি। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ করে না কিন্তু বাংলাদেশ করে। যেকোনো অপরাধের কিন্তু বিচার হয়।'
তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করে অবশ্যই সেটা আমরা নিজেরাই বলব। পরের কথা শুনে কেউ মন খারাপ করবেন না। নিজের আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলতে হবে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান সুন্দরবনে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ, এবং জলদস্যুতা মোকাবিলায় র্যাবের তৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি আশা প্রকাশ করেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যথাযথ দায়িত্বশীলতা, কার্যকারিতা এবং সক্রিয়তার সাথে এই বাহিনী অতীতের মতো ভূমিকা পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৬ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের দিকে বাংলাদেশের যাত্রাকে নির্বিঘ্ন করার জন্য দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য র্যাবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি রমজান মাসের আগে কেউ যেন খাদ্য মজুদ এবং খাদ্যে ভেজাল দিতে না পারে এবং সমাজ থেকে মাদকের অপব্যবহার, কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি এবং সাইবার অপরাধ নির্মূলে আরও মনোযোগী হতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিশেষ করে র্যাবকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, কিছু লোক থাকবেই সবসময় বিরোধিতা করতে। আর মাঝে মাঝে কিছু উল্টা-পাল্টা কথাও বলবে। এগুলো কানে না নিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে — আমরা দেশের কল্যাণে সঠিক কাজ করছি কি-না, সঠিক পথে আছি কি-না — এ চিন্তাটা নিজেই করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে যদি আমরা এগিয়ে যাই, অবশ্যই বাংলাদেশের এ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আমরা বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই গড়ে তুলব।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ হোসেন বক্তব্য দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে র্যাবের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।