সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন নিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে প্রতিকার চেয়ে লাভ হয়নি: বিএনপি সমর্থিত প্যানেল
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের সময় পুলিশের হামলা ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের একতরফা নির্বাচনের বিষয়ে সমাধান চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করলেও এতে বিচারপতি কোনো সাড়া দেননি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি সমর্থিত নীল দলের প্রার্থীরা।
রোববার (১৯ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করা হয়।
সম্মেলেনে লিখিত বক্তব্যে নীল দলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দস কাজল বলেন, "সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থী একাধিকবার প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া পুলিশের তাণ্ডবে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের আহত হওয়ার বিষয়ে প্রতিকার প্রার্থনা করেছে।"
"এরপরও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশি তাণ্ডবের কোনো দৃশ্যমান প্রতিকার হয়নি। আমাদের দুঃখ, আইনজীবীদের একটি সমিতির নির্বাচনে পুলিশকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করতে হয়। এটা বড় লজ্জার বিষয়," বলেন তিনি।
'একতরফা' এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের বহিরাগত, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের সভিাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি বলেন, "গত ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৫০০ আইনজীবীও ভোট দেয়নি। এখানে আইনজীবীদের ক্লার্করা ভোট দিয়েছে। এখানে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ভোট দিয়েছে। পুলিশের কারণে কোনো আইনজীবী ভোট দেওয়ার জন্য বুথে ঢুকতে পারে নাই। যিনি ভোট দিতে গিয়েছেন, তিনিই পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন।"
খোকন বলেন, "আমরা সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী দুইজনই পুলিশের হামলার শিকার হয়েছি। সমিতির বর্তমান কার্যকরী পরিষদের সদস্যরাও হামলার শিকার হয়েছে। ভোটকেন্দ্র পুলিশ দখল করে নিয়েছিল, যেখানে আমাদের ক্লার্করা ও কিছু বাইরের লোক ভোট দিয়েছে।"
সংবাদ সম্মেলনে নীল দলের সমর্থক প্রার্থীরা নির্বাচনে আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তারা আইনমন্ত্রী-অ্যাটর্নি জেনারেলকে পুলিশি হামলার নির্দেশদাতা হিসেবেও উল্লেখ করেন।
একইসাথে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে, কার্যকরী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অবিলম্বে একটি নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার জোর দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, "নির্বাচন ঘিরে আইনজীবীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক আগ্রহ ছিল। কিন্তু আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে লক্ষ্য করেছি, দেশের অন্য সব নির্বাচনের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে রাজনৈতিক চরিত্র, তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আইনগতভাবে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও নির্বাচনের নাটক সাজিয়ে একতরফাভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনেও একই ধরনের প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছে।"
আরও বলা হয়, "সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কিছু অতি উৎসাহী আইনজীবী ও পুলিশের নারকীয় তাণ্ডব আইনজীবী হিসেবে সমাজের কাছে আমাদের হেয় করেছে। এটা শুধু আইনজীবী সমাজেরই নয়, পুরো জাতির জন্যই কলঙ্কজনক।"
নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানান বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।
সুপ্রিম কোর্ট বারে একতরফা নির্বাচন হয়নি: আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন 'একতরফা হয়নি' বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নির্বাচনে আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। আর বিএনপি সমর্থিতরা ভোট বর্জনের ঘোষণাও দেননি।
রোববার (১৯ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি। এ সময় সমিতির সম্পাদক আবদুন নূর দুলালসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য তিনি বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী, ভোটবিরোধী, নির্বাচনবিমুখ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং তাদের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মো. রুহুল কুদ্দুসকে দায়ী করেন।
এর আগে, দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাতে ফল ঘোষণা করা হয়। এতে ১৪টি পদের সবকটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়।