শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে ধরতে পাঞ্জাবে টানা চতুর্থ দিনের মতো ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা
এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গ্রেপ্তারের জন্য ভারতের পাঞ্জাবে টানা চতুর্থ দিনের মতো চলছে ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা। পাঞ্জাবের ২৭ মিলিয়ন মানুষ এই মুহূর্তে ইন্টারনেট পরিষেবা ছাড়া রয়েছেন; খবর সিএনএন এর।
শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর জন্য শনিবার প্রাথমিকভাবে ২৪ ঘণ্টার জন্য রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল পাঞ্জাব সরকার। ভারতে শিখদের জন্য আলাদা সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে খালিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অমৃতপাল সিং।
মঙ্গলবার দিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত ইন্টারনেট শাটডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছে পাঞ্জাব সরকার। যেকোনো ধরনের সহিংসতার উস্কানি দেওয়া ও জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলায় ব্যাঘাত ঘটানো প্রতিরোধে একটি বিশেষ আইনের আওতায় রাজ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করেছেন সরকার।
পাঞ্জাব পুলিশের ভাষ্যে, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং 'ভুয়া সংবাদ' প্রচার রোধে এ পদক্ষেপের দরকার ছিল।
স্থানীয় টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, অমৃতপাল সিং এর শত শত অনুসারী লাঠি-তলোয়ার নিয়ে পাঞ্জাবের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ এবং প্যারামিলিটারি বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে।
অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান চালানোর পাশাপাশি অন্তত ১১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাঞ্জাব পুলিশ।
কয়েক দশক ধরেই কিছু শিখ তাদের সম্প্রদায়ের অনুসারীদের জন্য 'খালিস্তান' নামক একটি আলাদা সার্বভৌম আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। বিগত বছরগুলোতে একাধিকবার এ আন্দোলনের অনুসারী এবং ভারতীয় সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধেছে।
১৯৮৪ সালের জুনে যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ধরতে পাঞ্জাবের বিখ্যাত এবং শিখদের অতি পবিত্র স্থান গোল্ডেন টেম্পল বা স্বর্ণমন্দিরে অভিযান চালায় এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে তখন এই সংঘাত চরমে পৌঁছায়।
এই হত্যাকাণ্ড শিখ সম্প্রদায়কে উত্তেজিত করেছিল এবং ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, যিনি এ অপারেশনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর তার শিখ দেহরক্ষীদের হাতে খুন হন।
খালিস্তান আন্দোলনকে ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং ভারত সরকার এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি বলে বিবেচনা করে। কিন্তু দেশ-বিদেশের কিছু শিখদের মধ্যে এখনও এ আন্দোলনের সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে।
রোববার এক বিবৃতিতে ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশন অব কানাডা অমৃতপাল সিংকে গ্রেপ্তার করার এই 'কঠোর' অভিযানের নিন্দা জানায় এবং বলে, 'সিং এর আটক একটি মিথ্যা এনকাউন্টার সাজানো ও তাকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার সুবিধার্থে ব্যবহৃত হতে পারে'।
সপ্তাহজুড়ে অমৃতপাল সিং এর কিছু সমর্থক লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছে, ফলে যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে।
ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালেক্স এলিস এ ঘটনাকে 'লজ্জাজনক' ও 'সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
রোববার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, "তাদের প্রত্যাশা যে যুক্তরাজ্য সরকার এ ভাংচুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আটক করতে তাতক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে।"
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান রোববার এক টুইট বার্তায় বলেন, "আমাদের শহরে এ ধরনের কর্মকান্ডের কোনো সুযোগ নেই। আজকের ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।"
ভারতে ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা
ভারতে ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা বর্তমানকালে অতি পরিচিত একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। দেশটিতে ৮০০ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন- চীনের পরেই যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডিজিটাল জনসংখ্যা।
চলতি মাসের শুরুতে নিউইয়র্কভিত্তিক এডভোকেসি গ্রুপ একসেস নাও-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে ভারতে সব মিলিয়ে ৮৪টি ইন্টারনেট শাটডাউন আরোপ করা হয়েছে। এ ধরনের ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞার ফলে লাখ লাখ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপর এর প্রভাব পড়েছে।
ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের জন্য সামাজিক এবং অর্থনৈতিক লাইফলাইন হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। দেশটির বিচ্ছিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলগুলোকে ক্রমবর্ধমান শহরগুলোর সাথে সংযুক্ত রাখতে ভূমিকা রাখে ইন্টারনেট।
এর আগেও অনেকবার জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা ও সহিংসতা প্রতিরোধের দোহাই দিয়ে ভারতে ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, এসব নিষেধাজ্ঞা ভারতীয়দের বাকস্বাধীনতা ও তথ্যপ্রাপ্তির স্বাধীনতার ওপর আরও একটি আঘাত।