দ্রুত দেশে ফিরতে চান কুয়েতে ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশিরা
কুয়েতের সাধারণ ক্ষমায় দেশে আসার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশিরা নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন ক্যাম্পে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইফতার ও সেহরিতে তারা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছেন না। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ক্যােম্প থাকার পরেও কবে তারা দেশে ফিরবেন সেটি অনিশ্চিত। কেউ তাদের খোঁজখবরও করছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা তাদের ক্ষোভের কথা জানানোর পাশাপাশি ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছেও নানা ভিডিও পাঠাচ্ছেন ক্যাম্প থেকে।
গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের কুয়েত ছাড়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে কুয়েত সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এর ফলে অবৈধ অভিবাসীরা জরিমানা ছাড়াই কুয়েত ছাড়তে পারবেন। পাশাপাশি কুয়েত সরকারের খরচে আকামা ছাড়া প্রবাসীদের তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হবে।
কুয়েত সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কুয়েত ছাড়তে অবৈধদের আহ্বান জানায় কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাস। অবৈধদের অবগতির জন্য কুয়েত দূতাবাসের পক্ষ থেকে দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে 'জরুরি বিজ্ঞপ্তি' পোস্ট করা হয়। আগ্রহীদের এপ্রিল ১২ থেকে ১৫-এর মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কুয়েত সরকারের নির্দিষ্ট অফিসে নাম নিবন্ধনের জন্য যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়। এর আওতায় সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশি নাম নিবন্ধন করেন বলে জানা গেছে।
অবশ্য কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, কুয়েতে ১ লাখ ৬০ হাজার অবৈধ অভিবাসী রয়েছে। এবার ২০২০ এর সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছেন ২৫ হাজার অবৈধ অভিবাসী। অর্থাৎ এখনো ১ লাখ ৩৫ হাজার অবৈধ অভিবাসী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশি কতো জানা যায়নি। অবশ্য কুয়েতে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়েছিলেন ৮ হাজার বাংলাদেশি। এবার ২০২০ সালের সাধারণ ক্ষমায় এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশি সাধারণ ক্ষমার আবেদন করেছেন। রাজধানী কুয়েত সিটির বাইরে চারটি ক্যাম্পে তাদের রাখা হয়েছে। ক্যাম্পগুলো হলো, আব্দালীয়া, সেবদি, মাঙ্গাফ ও কসর।
ক্যাম্পে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, সাধারণ ক্ষমার অধীনে যে সব কর্মী দেশে ফিরে আসবে তাদের কোনো জেল বা জরিমানা হবে না। বরং তাদের বিনামূল্যে টিকিট দেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে তারা আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু এখন তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
কুয়েতের আব্দালীয়া ক্যাম্পে থাকা কয়েকজন বাংলাদেশি কর্মী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যেম ভিডিওতে বলেন, আব্দালীয়া ক্যাম্পেই দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশি আছেন। ক্যাম্পে আসার পর দূতাবাসের কোনো প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
মাঙ্গাফ ক্যাম্পে থাকা কয়েকজন কর্মী জানান, সেখানে প্রায় দেড় হাজারের বেশি বাংলাদেশি আছেন। তাদেরও দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এই কর্মীরা দেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে ফেরার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, কুয়েত প্রবাসীরা আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। সাধারণ ক্ষমার বিয়ষটি আমরা অবগত। তবে করোনার এই সংকটকালীন সময়ে যেহেতু ফ্লাইট চলাচল বন্ধ কাজেই হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সবার জন্যই কঠিন। তবে সাধারণ ক্ষমতায় নিবন্ধিতদের মধ্যে গত ২৭ এপ্রিল ১২৬ জন এবং ২৮ এপ্রিল ১২১ জন আল জাজিরা এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। বাকিদের বিষয়েও সরকার ও দূতাবাস অবগত বলেই আমরা মনে করছি। দূতাবাস এই প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের আশ্বস্ত করতে পারে।