দেশে কর্মক্ষম মানুষ ৬২%, বেড়েছে বয়স্কদের সংখ্যাও
বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬২ শতাংশই কর্মক্ষম মানুষ। তরুণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উঠে এসেছে জনশুমারি ও গৃহগণনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে।
রোববার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশের বর্তমান মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এরমধ্যে ১০ কোটি ৫০ লাখ বা ৬২ শতাংশই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। ২০১১ সালের জনশুমারিতে কর্মক্ষম মানুষের এ সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৮ শতাংশ।
বৃদ্ধি পেয়েছে তরুণের সংখ্যাও। দেশে এখন ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ জনগোষ্ঠী সংখ্যায় ৪ কোটি ৭৪ লাখ। জনগোষ্ঠীর এই অংশও কর্মক্ষম জনসংখ্যার অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতির সুবিধা ভোগ করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, জনমিতির এ সুবিধা খুব বেশি দিন স্থায়ী হবে না। আগামী ২০৩৫ সাল নাগাদ এ সুবিধা ফুরিয়ে আসবে। তাই এর আগেই তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঠিক উপায়ে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান জনসংখ্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতির সুবিধা ভোগ করলেও ২০৩৫ সালের পর তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে; কারণ দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও ক্রমাগত বাড়ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৯.২৯ শতাংশ বয়স্ক, ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী। ২০১১ সালের জনশুমারিতে যা ছিল ৭.৪৭ শতাংশ।
অধ্যাপক সেলিম রায়হানের মতে, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান প্রবীণদের স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের উচিত অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ দেওয়া।
তিনি ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে যথাযথ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। সেইসঙ্গে, এ উদ্দেশ্যে সরকারের প্রতি পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দেরও আহ্বান জানান।
এদিকে, বৃহৎ পরিসরে তরুণ ও কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ক্রমবর্ধমান কর্মক্ষম জনশক্তিকে সঠিক উপায়ে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতাকে বাড়িয়ে তুলতে হবে।
তবে এরসঙ্গে আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সরকারকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ওপরেও জোর দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।