দুই দফা সময় বাড়ানোর পরেও এমডি নিয়োগে ব্যর্থ ডিএসই
দুই দফা সময় বাড়ানোর পরেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
পদত্যাগজনিত কারণে গত বছর সেপ্টেম্বরে এমডি পদ শূন্য হওয়ার পর পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ডিএসইকে দুই দফা সময় দিয়েছে।
প্রথম দফায় এক মাস সময় দেওয়া হলেও এমডি নিয়োগে দ্বিতীয় দফায় সময় দেওয়া হয় তিনমাস (৯০ দিন)।
গত ৮ এপ্রিল কমিশনের দেওয়া সময় শেষ হয়েছে, তারপরও নতুন এমডি পায়নি দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জটি।
তবে মেয়াদ বাড়াতে নতুন করে আর আবেদন করেনি ডিএসই। ফলে এখন এমডি নিয়োগে বিএসইসির সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জ।
বিএসইসির এক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, সময় বাড়ানো হলেও এমডি নিয়োগে ব্যর্থ হয়েছে ডিএসই। এখন নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে, তাদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশন নতুন সিদ্ধান্ত নেবে।
ডিএসইর বর্তমান বোর্ডের একজন সদস্য এমডি নিয়োগের বিষয়টি জটিল আখ্যা দিয়ে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত বছরের ডিসেম্বরে এমডি নিয়োগে ৮ জন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হলেও কাউকেই সুপারিশ করেনি ডিএসইর নমিনেশন এন্ড রেমিউনারেশন কমিটি (এনআরসি)।
এনআরসির এক সদস্য টিবিএসকে জানান, আগ্রহী প্রার্থীদের মধ্যে ডিএসই পরিচালনার মতো যোগ্য কাউকে পাওয়া যায়নি, যার কারণে কাউকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করা হয়নি।
বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশন্স, ২০১৩ অুনযায়ী, এনআরসির সুপারিশের ভিত্তিতে এমডি নিয়োগে অন্তত তিনজন প্রার্থীর তালিকা কমিশনে পাঠাতে হয়। কমিশন ওই তালিকা থেকে একজনকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেয়।
ভাইভা নেওয়ার পর প্রথমে এনআরসির কোনো সুপারিশ না থাকায় কারো নাম পাঠাতে পারেনি ডিএসই।
তবে দুইমাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে যাদেরকে যোগ্য মনে করা হয়নি, তাদের মধ্য থেকেই তিনজনের নাম কমিশনে পাঠায় ডিএসই।
যাদের নাম প্রস্তাব করা হয় তারা হলেন- ডিএসইর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ তবারক হোসেন ভূঁইয়া এবং বিডি ভেঞ্চারস লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন।
এনআরসি কাউকে নিয়োগের সুপারিশ না করায়, ডিএসই ডিসেম্বরে বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে তিন মাসের সময় চেয়েছিল।
ডিএসইর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার সোমবার টিবিএসকে বলেন, "সময় শেষ হওয়ার মধ্যেই একটা তালিকা কমিশনে পাঠানো হয়েছে, এখন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।"
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিএসইর এমডি পদটি শূন্য রয়েছে, চলছে ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে।
পর্ষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে সাবেক এমডি তারিক আমিন ভূঁইয়া ডিএসইর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
গত বছরের আগস্টে তিনি পদত্যাগ করেন, যা কার্যকর হয় সেপ্টেম্বর থেকে।
সাধারণত, পদত্যাগ কিংবা মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদ শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এমডি নিয়োগ দিতে হয় পারে ডিএসই।
এই সময়ে ডিএসই নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চাইলে প্রতিষ্ঠানটির এমডি নিয়োগ দিতে পারে।
কেন ডিএসইর এমডি মেয়াদ শেষ করতে পারে না
ডিএসইর আগের দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালক গত দুই বছরে তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, পর্ষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে পদত্যাগের ঘটনা ঘটছে। ডিএসইর প্রভাবশালীদের আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রণের কারণে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে না পারায় পদত্যাগ করছেন এমডিরা।
প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালনের পর, সর্বশেষ এমডি তারিক আমিন ভূঁইয়া গত আগস্টে বোর্ডের সঙ্গে 'দ্বন্দ্বের' জেরে পদত্যাগ করেন।
ডিএসইর কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ঘিরে পর্ষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে তিনি পদত্যাগে করেন বলে জানান যায়।
এর আগে, তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া কাজী সানাউল হক দায়িত্ব নেওয়ার ১০ মাসের মাথায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্ষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে না পারায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করতে হয়েছে সাবেক এডিদের। ফলে ডিএসই নিয়ে তৈরি হয়েছে নেতিবাচক ধারণা। এ কারণে অনেক যোগ্য ব্যক্তিই এখন এই পদে আসতে চাননা।
ডিএসইতে ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের প্রভাব কমাতে ২০১৪ সালে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করা হয়, যা ডিমিউচুয়ালাইজেশন নামে পরিচিত।
কিন্তু কার্যত এখনও ব্রোকারেজ হাউস বা ডিএসইর প্রাথমিক শেয়ারহোল্ডারদের প্রভাব বলয় রয়েই গেছে সেখানে। স্বতন্ত্র পরিচালকরা নিয়োগ পেলেও ডিএসই পরিচালনায় তেমন ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারেন না তারা।
আগের পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালকদের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিএসইসি ডিএসইর পর্ষদের চারজন নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে। এই পর্ষদে আরও দুইজন নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক যুক্ত হবেন।
ডিএসইর বোর্ড ১৩ সদস্যবিশিষ্ট। এখানে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালককে নিয়োগ দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আর ডিএসইর প্রাথমিক সদস্য বা ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের পাঁচজন প্রতিনিধি পর্ষদে পরিচালক নির্বাচিত হন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকও (এমডি) এক্স-অফিসিও হিসেবে বোর্ডের সদস্য হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নতুন পর্ষদের এক সদস্য জানান, যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য কাজ করছেন তারা।
এমডি পদ শূন্য হওয়ায় গত ৬ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে যোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চায় ডিএসই।
নির্ধারিত সময়ে ডিএসইর এমডি হতে ১৮ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এরমধ্যে ৮ জন প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।