আরটিজিএস’র মাধ্যমে ডলার ট্রানজেকশন ১০ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে ৭ মাসেই
বাংলাদেশ ব্যাংকের তাৎক্ষণিক লেনদেন নিষ্পত্তির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রিয়াল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) এর মাধ্যমে ফরেইন কারেন্সি ট্রানজেকশন চালু হওয়ার ৭ মাসের মধ্যেই তা ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চ মাসে আরটিজিএস ব্যবহার করে ১.৭৪ বিলিয়ন ডলার ট্রানজেকশন হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এর পরিমাণ ৭.৭৬% বেশি। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রানজেকশন হয়েছিল ১.৬১ বিলিয়ন ডলার।
শুধু মার্চ নয়, বেশিরভাগ মাসেই আগের মাসের তুলনায় লেনদেনের সংখ্যা ও পরিমাণ বেড়েছে।
আরটিজিএস ব্যবহার করে লোকাল কারেন্সি লেনদেন শুরু হয় ২০১৫ সালে। এর মাধ্যমে ১ লাখ টাকার বেশি অঙ্কের লেনদেন তাৎক্ষণিক নিষ্পত্তি করা যায়।
গত সেপ্টেম্বরে আরটিজিএস-এ ফরেইন কারেন্সি ট্রানজেকশন যুক্ত করা হয়। এর আগ পর্যন্ত ইন্টারব্যাংকে এ ধরনের লেনদেন নিষ্পত্তি হতো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে, যা ছিল সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলাপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে আরটিজিএস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে টাকার পাশাপাশি ইউএস ডলার, পাউন্ড, ইউরো, কানাডিয়ান ডলার এবং ইয়েন এই পাঁচটি বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন নিষ্পত্তি হচ্ছে।
এ ব্যবস্থায় এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে মুদ্রাভিত্তিক তথা ডলারের বিপরীতে ডলার, ইউরোর বিপরীতে ইউরো এভাবে লেনদেন নিষ্পত্তি হয়। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে লেনদেন হয়েছে ১০.৪ বিলিয়ন ডলার।
পূবালী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান টিবিএসকে আরটিজিএস লেনদেনের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে বলেন, এ প্রক্রিয়ায় আমরা সকালে ব্যাংকিং আওয়ার শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা আমাদের নস্ট্রো একাউন্ট থেকে ডলার আরটিজিএস এর একাউন্টে ট্রান্সফার করি।"
"এ পরিমাণটা একেক ব্যাংকের জন্য একেক রকমের, সেটা তারা নিজেরাই ঠিক করে নেয়। দিনের কর্মঘণ্টার মধ্যে কোনো ব্যাংক যদি আমাদের কাছে ডলার ক্লেইম করে, তাহলে আরটিজিএস একাউন্ট থেকে সঙ্গেসঙ্গেই পেমেন্ট করে দেওয়া হয়। আবার আমরা কোনো ব্যাংকের কাছে থেকে একইভাবে পেমেন্ট রিসিভ করি।
"দিনের ট্রানজেকশন টাইম শেষ হলে আরটিজিএস একাউন্টে জমা টাকা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আমাদের নস্ট্রো একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। আগে অনেক ব্যাংক ডলার পেমেন্টের ডিমান্ড ড্রাফট বাউন্স (পেমেন্ট করতে অস্বীকার করা) করতো, এখন সেটি করার সুযোগ অনেক কমে গেছে," বলেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৩,৩২,৬৮৫টি লেনদেন হয়েছে। প্রথম মাস সেপ্টেম্বরে ২০,৫১৮টি লেনদেনের বিপরীতে ৭৭০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ হয়। সর্বশেষ মার্চ মাসে ৬০,৪২০টি লেনদেন হয়েছে।
আরটিজিএস চালু হওয়ার কারণে ব্যাংকগুলোকে এখন আর ডলারের এনালগ লেনদেন করতে হয়না উল্লেখ করে আলফালাহ ব্যাংকের ট্রেজারি হেড সাদিকুজ্জামান খান টিবিএসকে বলেন,
"প্রতিটা ব্যাংকে আগে একজন বা দুইজন মেসেন্জার নিয়োগ দেওয়া ছিল, যাদের কাজ ছিল আমাদের কোনো ডলারের ডিমান্ড ড্রাফট ইস্যু হলে সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়ে যাওয়া এবং সেটি পাশ করানো। পাশ হওয়ার পর আমাদের একাউন্টে ডলার আসতো।"
"বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি করতে আমাদের এক কর্মদিবস সময় প্রয়োজন হতো। এছাড়া কোনো গ্রাহক যদি তার এক্সপোর্ট প্রসিড অন্য ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ডিমান্ড ড্রাফট ইস্যুর মাধ্যমে ডলার ট্রানজেকশন করতে চাইতেন, সেক্ষেত্রে তাদের অনেকসময় ৩/৪ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতো। বর্তমানে ট্রানজেকশন টাইম ক্লোজ হওয়ার ১৫ মিনিট আগেও যদি গ্রাহক আমাদের কাছে ডলার অন্য ব্যাংকে নিতে চান, সেটি আমরা মূহুর্তের মধ্যেই করতে পারি," বলেন তিনি।
ডলার ট্রানজেকশনে আরটিজিএস চালু হওয়ার কারণে ব্যাংকের গতিশীলতা অনেক বেড়েছে ও ট্রানজেকশন সহজ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।