মার্চ মাসে আমদানি খরচ কমেছে প্রায় ৩৯%
ডলারের সংকট চলায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা বিধিনিষেধের কারণে চলতি বছরের মার্চ মাসে আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় আমদানি খরচ ৩৯% কমেছে, সেইসঙ্গে আমদানি এলসি খোলার পরিমাণও কমে এসেছে ৪৫%।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত কয়েকমাস ধরে ডেফার্ড এলসির পেমেন্টের চাপ ছিল। এসব এলসি খোলা হয়েছিল ৬ মাস থেকে ১ বছর আগে।
বর্তমানে ডেফার্ড এসব এলসির পেমেন্টের চাপ কমে এসেছে। এছাড়া গত কয়েকমাস ধরে নতুন এলসি ওপেনিংও কমে আসছে। ফলে ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতে আছে, পাশাপাশি ব্যাংক চ্যানেলে ডলারের লিকুইডিটিও বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চে ৭.৯৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি সেটেলমেন্ট করা হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে গেল মার্চ মাসে মাত্র ৪.৮৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি সেটেলমেন্ট করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিভাইসড ডেটা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত ৫৭.০৫ বিলিয়ন ডলারের এলসি সেটেলমেন্ট করা হয়েছিল। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি এলসির পেমেন্ট করা হয়েছিল ৬০.৬১ বিলিয়ন ডলারের।
অর্থাৎ, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আমদানি এলসি সেটেলমেন্ট ৫.৮৭% কমেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ক্যাপিটাল মেশিনারিজসহ বাকি পণ্যগুলোর আমদানি খরচ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে একমাত্র পেট্রোলিয়ামের আমদানি খরচ বেড়েছে ৩১%।
এছাড়া গতবছরের মার্চে ৯.৫১ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। গত মার্চ মাসে মাত্র ৫.২১ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। অর্থাৎ, আগের বছর একই সময়ের তুলনায় বিভিন্ন পণ্যের আমদানির জন্য এলসি খোলা কমেছে ৪.৩ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের সবচেয়ে বেশি এমাউন্টে আমদানি এলসি খোলা হয়েছিল গতবছরের মার্চে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন এমাউন্টের এলসি খোলা হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "কোভিডের সময়ে আমাদের বেশিরভাগ ইন্ডাস্ট্রি স্থবির হয়ে যাওয়ায় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গিয়েছিল। দেশের কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে আবার আমদানি শুরু হয়। তখন মার্চের আগে-পরের কয়েকমাসে অনেক বেশি ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল। এসব কারণে গতবছরের মার্চে এলসি ওপেনিং অনেক বেশি দেখাচ্ছে।"
বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এলসি ওপেনিং কমে যাওয়াটা ব্যাংকগুলোর ডলার পরিস্থিতিকে স্বস্তি দেবে, তবে দীর্ঘদিন আমদানি কম হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী এপ্রিল ও মে মাসে আমদানি এলসি খোলা আরো কমবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আমদানি এলসি খোলা এবং ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির সম্ভাব্য দায় ২০২৩ অর্থবছরের মার্চ-মে সময়ের জন্য যথাক্রমে ১৪.২১ বিলিয়ন ডলার এবং ২.৪১ বিলিয়ন ডলার অনুমান করা হয়েছে।
এরমধ্যে এপ্রিলে ৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার এবং মে মাসে ৪.৬৭ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হতে পারে। তবে মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণার চেয়ে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি এলসি খোলা হয়েছে।