ইউরোপে প্রথমবারের মতো ৫০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছুঁয়েছে যে কোম্পানি!
ইউরোপের প্রথম কোম্পানি হিসেবে বিলাসবহুল পণ্য নির্মাতা এলভিএমএইচের বাজারমূল্য ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। খবর ব্লুমবার্গের।
ধনকুবের বার্নার্ড আর্নোর এই কোম্পানির অধীনে রয়েছে লুই ভিতোঁ, ক্রিশ্চিয়ান ডিওর, হাবলট, লে পার্সিয়ানের মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো।
করোনা মহামারির পর এলভিএমএইচের অন্যতম বড় বাজার চীনে পণ্য বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, ডলারের বিপরীতে ইউরোর মান সম্প্রতি বেড়েছে।
এই দুটি ফ্যাক্টরকে কোম্পানির বর্তমান সফলতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা।
এছাড়া দুই সপ্তাহ আগে কোম্পানিটি বিশ্বের বৃহত্তম ১০ কোম্পানির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
এমনকি এলভিএমএইচের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কোম্পানিটির সিইও বার্নার্ড আর্নোর সম্পদের পরিমাণও।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনী এই ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ ২১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এক্ষেত্রে আর্নো পেছনে ফেলেছেন বিল গেটস, ইলন মাস্ক ও জেফ বেজসের মতো বড় ব্যবসায়ীদের।
গত সোমবার এলভিএমএইচের প্রতি শেয়ারের দাম ০.৩ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ৯০৩.৭০ ইউরোতে পৌঁছায়। এতে করে কোম্পানির মোট বাজারমূল্য বেড়ে ৪৫৪ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছায়; যা মার্কিন ডলারে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থায়ও বহু মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির মতো ফ্রান্সের বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানিগুলো প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছিল।
বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মাঝেও কোম্পানিটির লুই ভিতোঁর হ্যান্ডব্যাগ, মোয়েত অ্যান্ড শনদোঁর ওয়াইন, ক্রিস্টিয়ান ডিওর এর গাউনের মতো বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ব্যাংক অফ আমেরিকার অ্যাশলি ওয়ালেসের মতে, আগামী বছর কোম্পানিটির প্রতি শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ইউরোতে পৌঁছাতে পারে।
তবে এলভিএমএইচের ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজারমূল্যের পেছনে রয়েছে প্রায় তিন দশকের সঠিক পরিকম্পনা ও কঠোর পরিশ্রম।
১৯৭৮ সালে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ফেরেট-স্যাভিনেল (নির্মাণ সামগ্রীর কোম্পানি)-এর চেয়ারম্যান হন আর্নো।
এর বছর ছয়েক পরে, আর্নো ফরাসি সরকারের কাছ থেকে দেউলিয়া ঘোষিত টেক্সটাইল কোম্পানি বুসাক সেন্ট-ফ্রেস কিনে নেন। দেউলিয়া ঘোষিত এই টেক্সটাইল গ্রুপটি ছিল ফ্রান্সের বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের মালিক।
দেনায় জর্জরিত গ্রুপটি আর্নোর নেতৃত্বে ধীরে ধীরে তীরে উঠতে শুরু করে। এমনকি একসময় গ্রুপটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানি হিসেবে জায়গা করে নেয়।
১৯৮৭ সালে লুই ভিতোঁ এবং মোয়েত হেনেসি নিয়ে এলভিএমএইচ গ্রুপ গঠিত হয়। এর বছর দুয়েক পর, ১৯৮৯ সালে আর্নো এই কোম্পানির শেয়ারের উল্লেখযোগ্য অংশ কিনে নেন। তখন থেকেই তিনি এলভিএমএইচ-এর চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বিশ্বজুড়ে এলভিএমএইচের রয়েছে প্রায় ৫,৬০০ স্টোর। কোম্পানিটির রয়েছে শ্যাম্পেইন, ওয়াইন, ফ্যাশনেবল পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, ঘড়ি, গয়না, প্রসাধনী ও পারফিউম পণ্যের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
আর্নো আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে, বিলাসবহুল পণ্যের জন্য চীন হতে যাচ্ছে বিরাট বড় বাজার। তাই ১৯৯২ সালে তিনি বেইজিং এ লুই ভিতোঁর স্টোর উদ্বোধন করেন।
এলভিএমএইচের মোট শেয়ারের শতকরা ৪৮ ভাগের মালিক আর্নো ও তার পরিবার। ধারণা করা যাচ্ছে যে, সুদূর ভবিষ্যতেও কোম্পানিটি আর্নোর পরিবারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
কিন্তু বর্তমানে ফ্রান্সে কোম্পানির সিইও হিসেবে বয়সসীমা নির্ধারণ ও বিলাসবহুল পণ্যের প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্যাক্স বৃদ্ধির জোরালো দাবি উঠেছে। তবে খুব শীঘ্রই কোম্পানিটির দায়িত্ব থেকে সরছেন না আর্নো।
গত বছর এলভিএমএইচের সিইও পদে থাকার বয়সসীমা বাড়িয়ে ৮০ বছর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে করে আরও ছয় বছর নিশ্চিতভাবেই কোম্পানিটির নেতৃত্ব দিতে পারবেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তি।