বগুড়ায় কর্মহীন ১৫ হাজার শ্রমিক
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বগুড়ায় ওয়ার্কশপ বন্ধ থাকায় প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা। আর এ অবস্থায় আর্থিক সংকটে থাকা ওয়ার্কশপ মালিকরা তাদের প্রায় ১৫ হাজার কর্মচারির বেতন দিতে পারছেন না। অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ মালিকদের সংগঠন 'বাংলাদেশ আটোমোবাইল ওয়ার্কশপ মালিক সমিতি বগুড়া জেলা শাখা'র নেতৃবৃন্দ এসব তথ্য দিয়ে বলেছেন, তাদের জন্য সরকারি অনুদান প্রয়োজন।
সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আইনুল হক তরফদার পাইলট জানান, শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি জায়গার ভাড়াসহ অন্যান্য খরচও মেটাতে পারছেন না মালিকেরা।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আমাদের গ্যারেজগুলো বন্ধ রয়েছে প্রায় দুই মাস। গাড়ি না চললে আমাদের আয়ও থাকে না। তাই খুব কষ্টে আছি। আমরা তো ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারছি না। কাউকে বলতেও পারছি না। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। সরকার আমাদের কিছু সাহায্য করলে ভালো হতো।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি গ্যারেজে দিনে গড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হতো। সেই হিসাবে ৭০০ গ্যারেজের আয় ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা। দুই মাস বন্ধ থাকলে আমাদের কত লোকসান হচ্ছে, একবার হিসাব করুন!
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, সংখ্যার হিসাবে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ রয়েছে বগুড়ায়। শুধু সদরেই প্রায় ৭০০টি ওয়ার্কশপ রয়েছে। দক্ষ শ্রমিকের কারণেই এই সেক্টর উন্নতি করেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এত বড় সেক্টর এতদিন ধরে বন্ধ থাকার কারণে অর্থনীতির বিশাল ক্ষতি হচ্ছে বলেও আশঙ্কা করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির ওয়ার্কশপগুলোর অবস্থা তুলনামূলক বেশি খারাপ। যেহেতু গাড়ি বের করার প্রয়োজন পড়ে না, তাই ওয়ার্কশপেরও দরকার পড়ছে না।
বিসমিল্লাহ মটরসের সত্ত্বাধিকারী ও শাজাহানপুর অটোমোবাইল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ স্বপন জানান, এ অবস্থায় ছোট ওয়ার্কশপগুলোর কর্মচারিদের দুর্ভোগ আরও বেশি। 'আমরা তো তাদের বেতনও দিতে পারছি না। খুব খারাপ অবস্থায় দিন পার করছে তারা', বললেন মোঃ স্বপন।
বগুড়ায় ছোট-বড় এই ৭০০ ওয়ার্কশপে কাজ করেন প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক। কাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে তারা। অবস্থা দেখে মালিককে কিছু না বললেও দিন চলাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাদের।
শহরের জামিল নগরের অধিবাসী ফারুক হোসেন কাজ করেন ট্রাক ও বাসের বডির। জানালেন, করোনাভাইরাসের কারণে তাদের জীবনযাপন দুরূহ হয়ে গেছে। সরকারের কাছে সুনজরের আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
ইঞ্জিন মিস্ত্রি মাসুদ রানা বললেন, 'এতদিন তো মালিক আমাদের বেতন দিছে। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকলে সবাই শেষ হয়ে যাব। তাই আমাদের দিকে সরকার যেন নজর দেয়।'