আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা, তবুও নেই প্রত্যাশিত লেনদেন
ইন্টারব্যাংক বা আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের রেট (এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছে যেই দামে ডলার বিক্রি করে) সর্বোচ্চ ১০৮ টাকায় উঠলেও ডলার সংকটের কারণে লেনদেন হচ্ছে অনেক কম।
এরইমধ্যে দেশের ফরেন কারেন্সি বা বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৯.৭৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, রোববার (৭ মে) সর্বনিম্ন ১০৭.৩০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার কেনাবেচা হয়েছে। এর আগে, ইন্টারব্যাংকে ডলারের রেট এতো বেশি ছিল না; সর্বোচ্চ রেট উঠেছিল ১০৭.৬৫ টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মূলত রেমিট্যান্সের রেট বাড়িয়ে দেওয়ায় ইন্টারব্যাংকে ডলারের রেট বেড়ে গেছে। গত ৩০ এপ্রিল অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএএফইডিএ- বাফেদা) রেমিট্যান্সে ডলারের রেট ১ টাকা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবিবি চেয়ারম্যান এবং ব্রাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হুসাইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ইন্টারব্যাংক মার্কেটে ডলার লেনদেন এখন আগের তুলনায় অনেক কম। এর অন্যতম কারণ, ডলারের বাজার এখনো ফ্রি-ফ্লোট নয়। আর বাজার ফ্রি-ফ্লোট না হলে ইন্টারব্যাংক ইনএক্টিভ হবে এটাই স্বাভাবিক।"
এর আগে, প্রায় ৬ মাস রেমিট্যান্সের ডলারের রেট ১০৭ টাকা ছিল। যদিও মার্চে বেশি রেট দিয়েও রেমিট্যান্স এনেছে বেশকিছু ব্যাংক। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন দুইটি এক্সপোর্ট প্রসিড ও রেমিট্যান্সের ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালের শুরুর দিকে যখন দেশে ডলারের সংকট ছিল না, তখন প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার লেনদেন হতো ইন্টার ব্যাংকে। তবে গত বছরের মাঝামাঝিতে ডলার সংকট শুরু হলে কমতে থাকে লেনদেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেটেই ইন্টারব্যাংকে ডলার কেনাবেচা করতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা থাকায় এক পর্যায়ে লেনদেন প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। পরে সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার সেলিং রেটের বদলে রেমিট্যান্সের ডলারের রেটকে ভিত্তি ধরে ইন্টারব্যাংক লেনদেন করতে পারবে, এমন নির্দেশনা দেওয়ায় আবার লেনদেন শুরু হয় বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, রেমিট্যান্সের ডলারের রেটকে ভিত্তি ধরলেও মার্কেটের এক্টিভ রেট থেকে এটি অনেক কম। যদিও রেমিট্যান্সের রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ০.৫০ টাকা চার্জ যোগ করা যায়।
এছাড়া, ব্যাংকগুলোর হাতে বিক্রি করার মতো পর্যাপ্ত ডলারও নেই। ডলার সংকটের কারণে তারা আমদানি এলসি খোলা কমিয়ে দিয়েছে। তাই ব্যাংকগুলো এখন অন্য ব্যাংকের কাছে থেকে পাওয়া রিকোয়েস্ট বেসিসে ইন্টারব্যাংকে ডলার লেনদেন করছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১.৫ থেকে ২ মিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয় ইন্টারব্যাংকে।
বাফেদার করা একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার ইন্টারব্যাংকে ১০৭.৩০ টাকা রেটে ১ মিলিয়ন ডলার ও ১০৮ টাকা রেটে ৫০ হাজার ডলার লেনদেন করেছে ব্যাংকগুলো।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯.৭৮ বিলিয়ন ডলারে
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মোঃ মেজবাউল হক জানিয়েছেন, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) আমদানি বিল ক্লিয়ার করার পর, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ৭ মে, ২৯.৭৮ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এসিইউ'কে ১.১৮ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে।
আঞ্চলিক আমদানির ক্ষেত্রে এসিইউ'র ৯ সদস্য দেশ - বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হয় এই পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে। প্রতি দুই মাস অন্তর বিল পরিশোধ করা হয়।
এর আগে মার্চের শুরুতে, ১.০৫ বিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধের পর ৩১.১৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে রিজার্ভ।