সিলেট সিটি নির্বাচন: ‘আরিফের দিকে তাকিয়ে’ তারা ৩ জন
সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবারও প্রার্থী হবেন কি না তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না। নিজের অবস্থান খোলাসা না করায় এখনো সবাইকে অপেক্ষায় রেখেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই নেতা।
আরিফের সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই 'বিলম্বের' কারণে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তিন প্রভাবশালী নেতা। আরিফের প্রার্থী হওয়া বা না হওয়ার ওপর নির্ভর করছে তাদের প্রার্থিতা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এ তিন নেতা হলেন — বিএনপির সাবেক সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান জামান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, ও মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।
এদের মধ্যে আরিফ প্রার্থী না হলে জামান ও আনোয়ার এবং আরিফ প্রার্থী হলে বদরুজ্জামান সেলিমও প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। এছাড়া তারা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও এই তিনজন বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি। সময় হলে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলছেন তারা।
আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যের দায়িত্বে রয়েছেন। বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ১ মে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দেন আরিফ।
ওইদিন আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, যৌক্তিক কারণে বিএনপি সিটি নির্বাচনে যাবে না। তবে সিলেটের প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনে যাব।
আরিফের এমন বক্তব্যের পর থেকেই তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা শুরু হয় — যদিও এমন গুঞ্জন চলছে দীর্ঘদিন থেকেই।
তবে আরিফুল হক জানিয়েছেন, ২০ মে নগরের রেজিস্ট্রার মাঠে সমাবেশ করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন তিনি। ফলে ২০ মে পর্যন্ত অপেক্ষায়ই থাকতে হচ্ছে সবাইকে।
স্পষ্ট করে প্রার্থিতার ঘোষণা না দিলেও ফয়জুল আনোয়ার নগরে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারিং করেছেন। সামসুজ্জামান জামান বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে তৎপর রয়েছেন। আর সেলিম বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও নিজের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে প্রার্থিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বিশেষত আরিফকে 'ঠেকাতে' প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন সেলিম। সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে আরিফ ও সেলিমের বিরোধ দীর্ঘদিনের। গত নির্বাচনেও বিএনপির মনোয়ন চেয়েছিলেন সেলিম। দল আরিফকে মনোনয়ন দিলে সেলিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তবে শেষ মূহূর্তে দলের হাইকমান্ডের মধ্যস্থতায় আরিফকে সমর্থন জানান সেলিম।
প্রার্থীতার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বদরুজ্জামান সেলিম হোয়াটসঅ্যাপে বলেন, 'এই সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। তাই বিএনপি এ নির্বাচনে যাবে না। তবে দলের কেউ যদি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেন তাহলে আমাকেও নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ প্রার্থী হওয়ার জন্য আমাকে অনেকেই চাপ দিচ্ছেন। শীঘ্রই দেশে এসে আমি নিজের সিদ্ধান্ত জানাব।'
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদকের পদে থাকা সামসুজ্জামান জামান সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ তুলে ২০২১ সালে দল থেকে পদত্যাগ করেন। তবে দলে না থাকলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনে জামানের অনেক অনুসারী রয়েছেন। সিলেটের রাজনীতিতে যারা 'জামান গ্রুপ' নামে পরিচিত।
বিএনপি থেকে পদত্যাগের পর নিজের অনুসারীদের নিয়ে সামাজিক সংগঠন গড়ে নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছেন জামান। গত রমজান মাসেও তার তৎপরতা দেখা যায়। এর আগে ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামান বিএনপির বিদ্রোর্থী প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃতীয় হন জামান। এবার আরিফুল হক প্রার্থী না হলে জামান প্রার্থী হতে পারেন বলে তার অনুসারীরা জানিয়েছেন।
প্রার্থিতা প্রসঙ্গে জামান বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য বিভিন্ন সেক্টরের লোকজন চাপ দিচ্ছেন। আমিও এ নিয়ে ভাবছি। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়জুল আনোয়ার আলাওর সিটি করপোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। ঈদের আগে নগরজুড়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার সাঁটিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। আরিফুল চৌধুরী প্রার্থী না হলে তিনি আওয়ামী লীগের 'বিদ্রোহী' প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এ ব্যাপারে ফয়জুল আনোয়ার আলাওর বলেন, সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয় একজনকেই সবাই প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন। অনেকেই আমাকে প্রার্থী হতে বলছেন। তবে আমি এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এর আগে ২০১৩ ও ২০১৮ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। দুইবারই তার কাছে পরাজিত হন সিলেটের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ইভিএমে ভোট হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন।
২০০২ সালে সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। এই মহানগরের আয়তন ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার, ওয়ার্ড ৪২টি। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এবার পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন হতে যাচ্ছে সিলেটে।