পাকিস্তান: দান চালা হয়ে গেছে, আর পথ খোলা নেই
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে পিটিআই এর ঘোষিত 'রেড লাইন' অতিক্রম করা হয়েছে। রাষ্ট্র শক্তির সাথে তেহরিক-ই-পাকিস্তান (পিটিআই) এর সাম্প্রতিক সংঘাত নতুন মাত্রা নেওয়ায় চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা আলোচনার মাধ্যমে সুরাহার আশাও সুদূর পরাহত হলো। দ্য ডন থেকে অনূদিত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ধনাঢ্য আবাসন ব্যবসায়ী মালিক রিয়াজের কাছে সরকারি জমি বিক্রি সংক্রান্ত এক দুর্নীতির তদন্তে সহযোগিতা না করায় ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী – বিশেষত, ইমরান খানের সাথে সশস্ত্র বাহিনীর নতুনতম বিরোধকেই তুলে ধরে – এতে মনে হচ্ছে, তাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে আটক করা হয়েছে।
ইসলামাবাদের পুলিশ নয়, হাইকোর্টের চত্বর থেকে ইমরানকে উঠিয়ে নিতে আধা-সামরিক বাহিনী পাঞ্জাব রেঞ্জার্সকে পাঠানোর ঘটনাই শেষোক্ত এই তত্ত্বকে প্রমাণ করে।
গতকাল মঙ্গলবার (৯ মে) জনাব খানকে আটকের পর থেকেই দেশব্যাপী যে বিক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছে, তার বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি এই ইঙ্গিত দেয় যে, সামরিক বাহিনীর প্রতিও জনতার ক্ষোভ রয়েছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশের ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এ ইঙ্গিতই মিলছে যে, আগে যে সীমা অতিক্রম করার সাহস কেউ দেখায়নি, রুষ্ট জনতা সেই সীমা অতিক্রম করছে।
গত ১৩ মাসের ঘটনাপ্রবাহ সামরিক বাহিনীর অতীত কর্মকাণ্ড – বিশেষত রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপকে তুলে ধরে – যার সাথে সাথে আরো সংকটাপন্ন হয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট।
সম্প্রতি এক শীর্ষ সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আবারো তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন ইমরান খান। এসময় তিনি ভালোভাবেই অবগত ছিলেন, যে আসলে তিনি বর্তমান সামরিক নেতৃত্বের প্রতিই সরাসরি অঙ্গুলি-নির্দেশ করছেন।
গত এক বছরে ইমরান খানের পেছনে জনসমর্থন যেভাবে বেড়েছে, তাতে তার বক্তব্যের ওজন অনেকগুণ। ফলে খোদ সামরিক বাহিনীও তা আর অবজ্ঞা করা সম্ভব নয় বলে মনে করে।
কিন্তু, রাজনীতির সমীকরণ থেকে ইমরান খানকে বাদ দেওয়া কোনো সমাধান আনবে না। বরং গতকালকের বিক্ষোভ থেকেই প্রমাণিত হয়েছে যে, তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সামরিক বাহিনী ও দেশের নাগরিকদের মধ্যে থাকা ঐতিহাসিক মেলবন্ধনে চিড় ধরেছে।
হিংসা ও সংঘাত কখনো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সমাধান হতে পারে না, বিশেষত যখন অর্থনীতির প্রাণস্পন্দন ধুঁকছে। আর ক্ষুদ্ধ নাগরিকরাও তাদের নিত্য দুর্ভোগের জন্য অসন্তোষ উগরে দেওয়ার উপলক্ষ খুঁজছে।
জনাব খানকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সেই ছাইচাপা আগুনকে উস্কে দেওয়া হলো, আরো বিতর্কিত হলো বর্তমান সরকার ও সেনাবাহিনী। ফলে তাদের নীতির বিষয়ে জনতার অনাস্থা আরো গভীর রূপ নেবে। দেশের গভীর সংকটকালে এমনটা অনাকাঙ্ক্ষিত, যখন দেশ রয়েছে দেউলিয়াত্বের খাঁদের কিনারে।
রাজনৈতিক কারসাজিতে তাদের অতীত ভূমিকা সেনাবাহিনীর বর্তমান নেতৃত্ব যতই ভুলতে চান না কেন – বিগত মাস ও বছরগুলোতে যে ধারণা মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়েছে – তা রাতারাতি উবে যাবার নয়।
বর্তমান সরকারকেও নাগরিকদের আস্থা অর্জন করতে হলে- সে অনুসারে দরকারি পদক্ষেপ নিতে হবে। যতদিন নির্বাচন স্থগিত থাকবে, জনতার বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করা হবে এবং সংঘাত চলবে – তার পরিণতি রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে বিভাজনকে আরো গভীর করবে।