তিন মাসে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ কমেছে ২.৩৪ বিলিয়ন ডলার
ডলার রেট বেশি থাকা সত্ত্বেও স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে দেশের বেসরকারি খাত। মূলত উচ্চ সুদের হার ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান এড়াতে এ পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ আগের বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় ২.৩৪ বিলিয়ন ডলার কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যায়, ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের বকেয়ার পরিমাণ ছিল ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু মাত্র তিন মাসের মধ্যে তা কমে ১৪.০৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বর্তমানে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) ৫% এর বেশি আছে। ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন ঋণের জন্য এর সঙ্গে আরো ৩.৫% ইন্টারেস্ট যোগ করতে হয়। ফলে এখন স্বল্পমেয়াদী লোনে প্রায় ৮.৫% ইন্টারেস্ট দিতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো মেজবাউল হক বলেন, "এসওএফআর বেড়ে যাওয়ায় দেনার বেড়েছে, তাই ঋণগ্রহীতারা টাকা পরিশোধ করে দিচ্ছে।"
"এমনকি অনেকে ম্যাচুরিটির আগেই স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করে দিচ্ছে। এটাও কিন্তু আমাদের রিজার্ভকে চাপে ফেলেছে। এই ক্রাইসিসের মধ্যে এটি না করলেও চলতো," টিবিএসকে বলেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ সবচেয়ে বেশি কমেছে বায়ার্স ক্রেডিটে। ডিসেম্বরের ৯.৫৭ বিলিয়ন ডলার থেকে এটি কমে ৮.১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, এখন বায়াররা আগের মতো লং টার্মে লোন দিচ্ছেন না। আগে ১ বছরের জন্য এমন লোন পাওয়া গেলেও এখন সেটি ৬ মাসে নেমে এসেছে। একই প্রবণতা অন্যান্য স্বল্পমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ বা বিলম্বিত পরিশোধের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, "ঋণ কমার কারণে আমাদের পেমেন্ট প্রেশারটা কমে আসছে, বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় এটা ভালো। তবে লং টার্মে এটি খুব বেশি ভালো নয়। কারণ, পেমেন্ট যদি আমরা ডেফার করে দিতে পারতাম, তাহলে আমরা আরো বেশি এলসি খুলতে পারতাম বা এক্সপানশনে যেতে পারতাম।"
এই ব্যাংকার আরো বলেন, "ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিকে এখন অনেক ধরনের অনিশ্চয়তা আছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই লোকাল ইকনোমিতে আমরা এর একটা রিফ্লেকশন পাচ্ছি। আমাদের ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বিভিন্ন রেটিং এজেন্সির নেগেটিভ আউটলুক আছে, সেটাও একটা কারণ। সবদিকের অবস্থা ভালো হলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি হবে।"
নতুন স্বল্পমেয়াদী ঋণ বাড়ছে কম, পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি
চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ বেসরকারি খাতে যে পরিমাণ স্বল্পমেয়াদী ঋণ বেড়েছে, তার তুলনায় পরিশোধ করতে হচ্ছে বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, তিন মাসে দেশের বেসরকারি খাত নতুন ঋণ পেয়েছে ৬.৩৩ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে মূল ও সুদ মিলিয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে ৮.৮৭ বিলিয়ন ডলার।
ইস্টার্ন ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহেদি জামান টিবিএসকে বলেন, "আমরা এমন পরিস্থিতিতে আছি যখন ইমপোর্ট এলসি কম হচ্ছে, আবার বাজারে ডলার লিকুইডিটিও ভালো না। মূলত লিকুইডিটি কম থাকার কারণেই এলসি খোলা কম হচ্ছে।"
"আমার অবজার্ভেশন বলছে, যে মুহূর্তে বাজারে লিকুইডিটি আসবে, তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এলসি খোলার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে," যোগ করেন তিনি।