কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্র: একদিকে সন্তান, অন্যদিকে বসতঘরে চুরির শঙ্কা
কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী জান্নাত বেগমের ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধু, নাতিসহ পরিবারের সদস্যরা রোববার (১৪ মে) সকালে ফিরে যাচ্ছেন বসতঘরে। সেখানে চুরির শঙ্কা রয়েছে। তাই দেখতে যাচ্ছেন। অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা এগিয়ে আসায় শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় তারা বাহারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিলেন।
জান্নাত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, "রাতে ঘুর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সকালে পরিস্থিতি ভালো থাকায় পরিবারের সদস্যরা বাড়ি গেছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে আবার ফিরে আসবে সবাই।"
জান্নাতের মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই আজ সকাল থেকেই কক্সবাজার শহরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাওয়া-আসার মধ্যে আছেন। ঘুর্ণিঝড়ের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না তাদের। কারণ এমন দুর্যোগকালীন মুহুর্তে যখন সবাই ঘর ছাড়েন, তখন চুরি হয় বেশি।
একই কেন্দ্রে অবস্থানরত নাজিরটেকের বাসিন্দা রিকশাচালক মো. আমিন টিবিএসকে বলেন, "শনিবার রাতে তিন ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এই কেন্দ্রে আশ্রয় নেই। বসতঘরে চুরির শঙ্কা রয়েছে। তবুও সন্তানদের নিয়ে ঝুঁকি নেইনি। বাড়ি যেতে চাইলে সন্তানরাও পিছু নেয়, তাই আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। জিনিসপত্রের আশা ছেড়েই এখানে থাকছি।"
৯ মাসের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করছিলেন কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দা ফাতেমা। হাঁটতে হাঁটতে টিবিএস প্রতিবেদককে জানান, তার স্বামী ট্রলারে কাজ করেন। ৬ নম্বর ঘাটে ট্রলারটি রাখা আছে। ট্রলারে অবস্থান নিয়ে সেটি পাহারা দিচ্ছেন। চার সন্তানের মধ্যে তিন সন্তানসহ ফাতেমাকে এই কেন্দ্রে রেখে গিয়েছেন স্বামী। আরেক মেয়ে ও মেয়ের স্বামী মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রে আছেন। ওই কেন্দ্রে গিয়ে অন্য সন্তানদের বড় মেয়ের কাছে রেখে বসতঘরে ও স্বামীর কাছে যাবেন ফাতেমা।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাইক্লোন প্রোটেকশন প্রোগ্রামের (সিপিপি) পক্ষ থেকে বাহারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা টিম লিডার আবদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "শনিবার রাতে প্রশাসনের লোকজন অনেক মানুষকে জোর করে এই আশ্রয় কেন্দ্রে এনেছিলেন। ভোর থেকে অনেকে চলে যাচ্ছেন। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে তারা আবার আসবে।"
অন্যদিকে রোববার (১৪ মে) মধ্যরাতেও ঘুর্ণিঝড় মোখার খবরে আতঙ্কিত হয়ে কক্সবাজারের কলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় উপকূলীয় এলাকার দুই শতাধিক মানুষ। রাতের ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানার খবর বের হলেও তা ঘটেনি। তাই ভোর থেবকে বসরঘরে ছুটতে শুরু করে লোকজন। সকাল ১০টায় এই আশ্রয়কেন্দ্রটি গিয়ে একেবারে শূন্য পাওয়া যায়। স্থানীয় কেউ কেউ ছিলেন। আর বিজিবির নির্মাণাধীন একটি হোটেলের ২৮ জন শ্রমিক ছিলেন।
এই কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী (ট্যাক্স কালেকটর) মো. শহীদুল করিম টিবিএসকে বলেন, "প্রায় দুই শতাধিক মানুষকে রাতে পৌরসভার পক্ষ থেকে খাবার দেওয়া হয়েছিল। ভোরে তারা আবার বাড়ি ফিরে গেছেন। কারণ এসময়ে বাড়ি ঘরে চুরির শঙ্কা থাকে। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে বা পরিস্থিতি খারাপ হলে তারা আবার ফিরে আসবেন।"
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস জানিয়েছিল, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা রবিবার (১৪ মে) দুপুর থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফসহ কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে পারে।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, রবিবার মধ্যরাত থেকে সেন্টমার্টিনে বৃষ্টিপাত ও হালকা হাওয়া শুরু হয়েছে। সময়ে সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের বেগ বাড়ছে। রবিবার দুপুর নাগাদ সেনটমার্টিনে বাতাগের বেগ বাড়তে শুরু করেছে। অন্যদিকে কক্সবাজার শহরেও সকাল সাড়ে ১০টার থেকে বৃষ্টিপাত ও বাতাস বইতে শুরু করে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যমতে, রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় মোট ৭০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। এতে ৮৫ হাজার ১৪ জন পুরুষ, ৯৯ হাজার ৬০৮ জন নারীসহ মোট দুই লাখ ৩৭৭ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৭ হাজার ৪৫৬ জন শিশু-কিশোর। এছাড়াও ৪ হাজার ১৫৭টি গবাদিপশু নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়েছে। জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে ৮৪টি মেডিকেল টিম।