বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে বাড়তে পারে শুল্ক
সাইকেল ও রিকশায় ব্যবহার হয় এমন দুই যন্ত্রাংশ হলো ফ্রিহুইল এবং স্পোকেট। স্থানীয়ভাবে পণ্য দুটি তৈরির কারখানা গড়ে উঠায় আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই দুই পণ্য আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার চিন্তা করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দেশে ও বিদেশে সাইকেলের প্রচুর চাহিদা থাকায় স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠছে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা। এই কারখানাগুলোকে প্রতিযোগী সক্ষম ও স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি উপযোগী করে তুলতে কিছু যন্ত্রাংশের আমদানিতে আসন্ন বাজেটে বাড়তি কর আরোপ করতে পারে সরকার।
বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় বিভিন্ন সাইজের ৩৫-৪০ লাখ ইউনিট ফ্রিহুইল এবং ৫০-৫৫ লাখ ইউনিট স্পোকেটের চাহিদা রয়েছে, যার প্রায় শতভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।
সম্প্রতি এর চাহিদা বিবেচনায় দেশের কয়েকটি সাইকেল পার্টস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান- আজিজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি, আর এফএল লিমিটেড এবং সিরাজ সাইকেল ইন্ডাস্ট্রি স্থানীয়ভাবে স্পোকেট ও ফ্রিহুইল উৎপাদনের জন্য নিবন্ধন নিয়েছে।
এরমধ্যে মেসার্স আজিজ সাইকেল তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত শুরু করেছে; এর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩০ লাখ ইউনিট ফ্রিহুইল এবং ৬০ লাখ ইউনিট স্পোকেট। অর্থাৎ, তিনটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করলে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে।
এ যন্ত্রাংশ দুটি আমদানিতে বর্তমানে কাস্টম ডিউটি, ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর ও আগাম কম মিলে ৩৭ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয়। এখানে ট্যারিফ কমিশন অবশ্য কাস্টম ডিউটি ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ এবং আমদানির ওপর মোট কর ৩৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৮.৬ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।
তবে এনবিআর শুধুমাত্র কাস্টম ডিউটি ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে বলে জানা যায়।
প্রাণ আরএফএলের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল টিবিএসকে বলেন, "ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের পণ্য উৎপাদনে স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজন হয়। যেহেতু স্থানীয়ভাবে পার্টস উৎপাদন হচ্ছে, সেহেতু সরকার শিল্পের বিকাশে আমদানিতে কড়াকড়ি করলে সেটা ম্যানুফ্যাকচারদের জন্য ভালো খবর। শিল্পের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে।"
আমদানি করা ফ্রিহুইল ও স্পোকেটের শুল্কহার এবং কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার বিশ্লেষণ করে ট্যারিফ কমিশন দেখতে পায়, এ দুটি পণ্য উৎপাদনে স্থানীয় মূল্য সংযোজন প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ। কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার এবং পূর্ণ যন্ত্র আমদানিতে বিদ্যমান যে শুল্কহার, তা স্থানীয় এ উৎপাদনকারীর মূল্য সংযোজন বিবেচনায় যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করে না।
স্থানীয় উৎপাদনকারী ছোট শিল্পসমূহের শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইমেজ না থাকায় আমদানি করা পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে সক্ষমতা হারাচ্ছে। ফলে স্থানীয় উৎপাদনকারীর উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্বেও তা যথাযথ ব্যবহার করতে না পারায় একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, অন্যদিকে প্রতিযোগীতার সক্ষমতা হারাচ্ছে।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প স্পোকেট এবং ফ্রিহুইল উৎপাদনকারী শিল্পের যথাযথ বিকাশ ও আমদানি করা পণ্যের সাথে প্রতিযোগীতা সক্ষমতা অর্জনে আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো বিকশিত হলে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি করারও সুযোগ রয়েছে।