লঞ্চ বিল্ডার! প্রথম লঞ্চটা ডুবে যায়, পরেরটাও চলেনি, এখন বানাবেন রকেট স্টিমার
পঞ্চম শ্রেণীতে থাকার সময় প্রথম লঞ্চ (রেপ্লিকা) বানিয়ে ফেলেছিল শুভ। বাড়ি তাদের ঝালকাঠি সদর থানায়। লঞ্চে হরদম যাতায়াত ছিল। পানির ওপর একটা জাহাজ কেমন করে ভাসে তা জানতে ইচ্ছে করত। শুভ পানি কেটে লঞ্চের এগিয়ে যাওয়া দেখত তন্ময় হয়ে, আর মনে মনে ভাবত- যদি নিজের একটা লঞ্চ থাকত!
পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই শুভ খালা, মামাদের ফোনে ইউটিউব আর ফেসবুক ব্যবহার করে লঞ্চ বানানোর কৌশল শিখে নিয়েছিল অনেকটা। সেসঙ্গে টিফিনের টাকাও জমাতে শুরু করেছিল, মায়ের ব্যাগ থেকেও মাঝেমধ্যে টাকা নিত। তবে তাতে টাকা যা জমল তা খুব বেশি নয়। তাই কিছু বুদ্ধিও আঁটতে হয়েছিল। যেমন লঞ্চের মোটর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সে সাড়ে পাঁচশ টাকায় একটা খেলনা মোটর গাড়ি কিনে নিল, কারণ প্রয়োজনমতো মোটর আলাদা করে কেনার সুযোগ ছিল না। এরপর কিনল লোহার পাত, উত্তরার আটিপাড়া বাজার থেকে। তখন লোহার কেজি ছিল ৮০-৯০ টাকা। ৩ ফুট দৈর্ঘ্যের লঞ্চটি বানাতে ৯ কেজি লোহা লেগেছিল। লঞ্চের পুরোটাই লোহা দিয়ে তৈরি করে শুভ।
সেটি ছিল সুন্দরবন-১২ এর রেপ্লিকা। সব কাজ শেষ করে শুভ পানিতে ভাসানোর দিনক্ষণ ঠিক করল। নির্দিষ্ট দিনে পানিতে ভাসিয়ে দিল। লঞ্চটা বেশ কিছুদূর চলে হঠাৎই টুপ করে ডুবে গেল। শুভর তাতে মন খারাপ হয়েছিল খুব, রাতটা জেগেই কাটিয়েছিল। পরে সে জানতে পারে মেকানিক্যাল (যন্ত্র ব্যবস্থাপনা) ত্রুটি থাকার কারণে ডুবে গিয়েছিল লঞ্চটি। দশ বছরের ছোট্ট সেই নাদিম মাহমুদ শুভ এখন বাইশ বছরের দুরন্ত এক যুবক।
বাড়ির পেছনে লঞ্চ ল্যাবরেটরি
বাবা যখন মারা যান তখন শুভ অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। খিলগাঁওয়ের দাশেরকান্দিতে কিছুটা জমি রেখে গিয়েছিলেন বাবা। সেটায় ছোটমোট পাকা একটা বাড়ি তুলে উত্তরার ভাড়া বাড়ি থেকে উঠে আসে শুভরা। জমিটা নিচু বলে পাকা পিলারের ওপর চড়াতে হয়েছে বাড়িটাকে। মা আর ১৫ বছর বয়সী এক ছোট বোন নিয়ে শুভর সংসার। দাশেরকান্দিতে শুভর একটা সুবিধা হলো - বাড়ির পেছন দিকটায় বিস্তীর্ণ বিল, বর্ষায় এটা টইটম্বুর হয়, লঞ্চের ল্যাবরেটরি হয়ে উঠল বিলটা।
ডুবে যাওয়া লঞ্চটির কিছু পোস্ট ফেসবুকে দিয়েছিল শুভ। সেসব পোস্ট নজরে আসে ইতালি প্রবাসী লঞ্চ লাভার মুয়ীদুল ইসলাম মুয়ীদের। নিজে থেকেই যোগাযোগ করেন শুভর সঙ্গে। বলেন, 'আমি দেশে থাকতে রিমোট কন্ট্রোলড লঞ্চ বানাতাম, তোমার আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে তবে এমন লঞ্চ বানাতে তোমাকে কারিগরিভাবে দক্ষ হতে হবে। যদি চাও আমি পরামর্শ দিতে পারি।'
একজন শিক্ষাগুরু পেয়ে শুভর আনন্দ আর ধরে না। একেক দফায় ফোন করে তিন-চার ঘণ্টা ধরে মুয়ীদ ভাই শুভর ক্লাস নিতেন। তাতে শুভ জানতে পারে ব্যাটারি থেকে কিভাবে জ্বালানি তৈরি হয়, ওই জ্বালানি থেকে ইঞ্জিন কীভাবে শক্তি তৈরি, করে আর তারপর সেটা পাঠায় গিয়ারে; গিয়ার সে শক্তি দিয়ে প্রপেলার চালায় এবং লঞ্চে গতি তৈরি হয়। আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহারের কলাকৌশল এবং লঞ্চকে টেকসই করার উপায় মুয়ীদ ভাইয়ের কাছ থেকেই বেশি শিখেছে শুভ।
তলাটা এয়ার টাইট ছিল না
কিছুদিন পরে আরেকটি লঞ্চ বানানোর কাজ হাতে নেয় শুভ। গুরুর শিক্ষা ঝালাই করা ছিল উদ্দেশ্য। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল, তবে তলাটা এয়ার টাইট (বায়ুনিরোধী) ছিল না বলে ফেটে যায়। এতে শখ তো বটেই, টাকাও গচ্চা যায় অনেক। স্কুল ছাত্র শুভর তখন এত খরচ পুষিয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না। তাই বলে আশা ছেড়ে দেয়নি সে। ভবিষ্যতের জন্য শখটা তুলে রাখল। সাহস দিয়ে রাখলেন মুয়ীদ ভাইও। বললেন, এটা (এয়ার টাইট করা) শেখাই তার বাকি ছিল, সামনে আর অসুবিধা হবে না।
পিতার মৃত্যুর পর সংসারের বড় ছেলে হিসাবে শুভর দায়িত্ব বেড়ে যায়। লঞ্চ বানানোর প্রায় সব দক্ষতা আয়ত্ত্বে আনার পরও শুভ কাজে হাত দিতে পারছিল না। কারণ মিনিমাম স্কেলের একটা লঞ্চ বানাতেও ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে যেত। ২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেন শুভ। 'এনএফএস প্রোডাকশনস লিঃ' নামে একটি ফেসবুক পেইজও খোলেন যার স্লোগান 'নতুন গন্তব্যে পৌঁছাতে আমরা কখনোই ক্লান্ত হই না'। প্রথম একটি জাহাজ বানানোর অর্ডার (ফরমায়েশ) পান উনিশ সালেই। গ্রাহক বলেছিলেন, কীর্তনখোলা-১০ নামের লঞ্চটির অনুকৃতি তাকে গড়ে দিতে হবে। মূল্য নির্ধারিত হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে লঞ্চ তৈরির কাজে নামেন শুভ।
প্রথমে ফোম দিয়ে তলার ছাঁচ বানালেন। তারপর ছাঁচের ওপরভাগ প্লাস্টিক টেপ দিয়ে মুড়ে দিলেন। ফাইবারগ্লাস গলিয়ে তার সঙ্গে রেজিন ও হার্ডনার (শক্তপোক্ত করার উপকরণ) মেশালেন। তারপর পুরো মিশ্রণ ঢেলে দিলেন ছাঁচের ওপর, এরপর রোলার দিয়ে টানতে থাকলেন। একপর্যায়ে ফাইবারগ্লাস শক্তপোক্ত হয়ে উঠল। তলার যাবতীয় ফাঁকফোঁকর বন্ধ করার জন্য এমসিল ব্যবহার করলেন। তারপর ফেন্ডার (লঞ্চের দুই ধারের বাড়তি অংশ, দুই লঞ্চ ধাক্কা খেলে যেন বডিতে সরাসরি আঘাত না লাগে) বানালেন। বডি বানালেন প্লাস্টিক দিয়ে। ভিতরের ইন্টেরিয়র- অর্থাৎ ডেক, কেবিন, কিচেন, রেস্টুরেন্ট, চায়ের দোকান, বারান্দা ইত্যাদি সবই হুবহু কীর্তনখোলা-১০ এর মতো বানিয়ে দিলেন। ইঞ্জিন, গিয়ার, প্রপেলার, ব্যাটারিও বসালেন ঠিকঠাক। লঞ্চটা ট্রায়াল রানে উতরে গেল। গ্রাহক খুশি হলেন। সবমিলিয়ে খরচ হলো ১১ হাজার টাকা। ৪০০০ টাকা লাভ পেলেন শুভ।
ফাইবারগ্লাস নিয়ে একটা শারীরিক ঝুঁকির কথা বলছিলেন শুভ, 'এর মধ্যে এমন সব সূক্ষ্ম আঁশ থাকে যেগুলো একবার হাতে লাগলে সারাক্ষণ চুলকায় আর তা ২-৩ দিনও চলতে পারে। তবে সুবিধা হলো, ফাইবার দিয়ে বানালে লঞ্চ ওজনে অনেকটাই হালকা হয়ে যায়।'
তৌসিফ এখন পাকা বিল্ডার
ফকিরেরপুলের বাসিন্দা তৌসিফ। কৈশোর অতিক্রম করেছেন সদ্য। ফেসবুকে কীর্তনখোলার ভিডিও দেখে শুভর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। জানালেন, একটা লঞ্চ তিনি কিনতে চান। তৌসিফ যে একজন সত্যিকারের লঞ্চ লাভার তা আলাপেই বোঝা হয়ে গেল শুভর। তাই লাভ না রেখে কেবল বানানোর খরচটাই নিলেন তৌসিফের কাছ থেকে। সেটুকুর জন্যই অবশ্য তৌসিফকে নিজের সাইকেলটা বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। তারপর থেকে তৌসিফের সঙ্গে শুভর এমন বন্ধুতা হলো যে তারা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে থাকলেন। আরো কিছুদিন পর ইয়াসিন আর রাতুলও যোগ দিলেন দলে। ইয়াসিন অবশ্য আগে থেকেই নৌযান বানাতেন, তবে কেবল স্পিডবোট।
লঞ্চ বানাতে ধৈর্য্য লাগে অনেক। এক মাস তো বটেই দুই মাসও লেগে যায় একেকটা লঞ্চ বানাতে। যেখানে ২৪ ঘণ্টায় একটা স্পিডবোট বানিয়ে ফেলা যায়। কারণ লঞ্চে ডিটেইলিং অনেক বেশি, তাই সহযোগী পেলে কাজ এগোয় দ্রুত।
শুভ বলছিলেন, 'লাইটিংয়ের কথাই ধরুন, এখনকার সব লঞ্চ আলো ঝলমলে হয়। আমি কোনো লঞ্চেই কোনো ফাঁক রাখতে চাই না। অর্থাৎ হুবহু না হওয়া পর্যন্ত থেমে যাই না, তাই এ কাজটাও অনেক সময় নিয়েই করি।' এখনো প্রধান প্রধান কাজগুলো শুভ নিজেই করেন কিন্তু রং করা বা জোড়া দেওয়ার কাজে অন্যদের সাহায্য নেন।
শুভ বলছিলেন, 'আমাদের দেশে খুব বেশি মানুষ এই শখের সঙ্গে যুক্ত নেই। তবে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ব্রাজিল, সুইডেন, ডেনমার্ক, থাইল্যান্ড বা ইন্দোনেশিয়ার অনেক লোক মিনিয়েচার লঞ্চ বানায়। আর বিল্ডারদের বেশিরভাগই হন বৃদ্ধ। ৭০-৮০ বছর বয়সে তাদের তেমন কাজ থাকে না, তাই বাড়িতে বসে লঞ্চ বানিয়ে চলেন। বিশেষ করে থাইল্যান্ড আর ইন্দোনেশিয়ার বিল্ডাররা খুবই দক্ষ। আমাদের তৌসিফ কিন্তু গেল চার বছরের মধ্যে পাকা বিল্ডার হয়ে উঠেছে। তার ফিনিশিং আমার চেয়েও ভালো হয়। আরেকজন বড় ভাইয়ের কথা বলি, তরিকুল ভাই, ভোলায় থাকেন। অনেক আগে থেকেই লঞ্চ বানান। বিশেষ করে লেদ মেশিনের কাজে তার বিশেষ পারদর্শিতা আছে। আমাদের এখানে অবশ্য একটা অসুবিধা আছে। লঞ্চ তৈরির সব উপকরণ এখানে সহজলভ্য নয়- বিশেষ করে ইঞ্জিন, রিমোট কন্ট্রোল ট্রান্সমিটার, ব্যাটারি ইত্যাদি। সেগুলো আমাজন বা আলিবাবা থেকে অর্ডার দিয়ে আনাই।'
২০১৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত শুভ ২৭টি লঞ্চ প্রি-অর্ডার নিয়ে তৈরি করে দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে আছে প্রিন্স আওলাদ, গ্রিন লাইন, শতাব্দি বাঁধন, মানামী, পারাবত, কীর্তনখোলা ইত্যাদি।
শুভর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আপনার গ্রাহক বেশি কোন এলাকার?
শুভ বলেছিলেন, বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের গ্রাহকই বেশি।
ধনী বা বিখ্যাত কোনো ব্যক্তি আপনার কাছ থেকে লঞ্চ নিয়েছেন?
শুভ: ধনী হলেও সে পরিচয় আড়ালেই রাখে। দাম কিছু কমানোর কথাই বলে সবাই।
আকার ভেদে কি দামের বেশ হেরফের হয়?
শুভ: শুধু আকার নয়, যন্ত্রপাতির ভালো মন্দের ওপরও দাম কম বেশি হয়। লো কোয়ালিটির লঞ্চ বানাতে ১২-১৫ হাজার লাগে। মিড কোয়ালিটির হলে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। আর হাই কোয়ালিটি যেমন আমি পারবত-১৮ বানিয়েছি, এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ। এরকম লঞ্চের খরচ ৭০ হাজার থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত হতে পারে।
কখনো লঞ্চ মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো ফোন পেয়েছিলেন?
শুভ: হ্যা একবারই। প্রিন্স আওলাদ শিপিং লাইন্সের মালিকের ছোট ছেলে মহারাজ সাহেব একদিন ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, আপনার বানানো লঞ্চগুলো দেখে আমার ভালো লেগেছে। যদি সদরঘাটে আসেন একবার দেখা করে যাবেন।
শুভর পারাবত-১৮
দৈর্ঘ্যে ১০ ফুট আর প্রস্থে ২ ফুট শুভর পারাবত-১৮। লঞ্চটি লাইনে আসার আগে শুভ চড়তেন বেশি পারাবত এগারোয়। সেখানকার একজন স্টাফ নাজমুল ভাই শুভর লঞ্চ বানানোর কথা জানতেন। তার মাধ্যমে লঞ্চের আরো কিছু কর্মীর সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে সব স্টাফই শুভর ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। পরে যখন আঠারো লাইনে আসে তখন এগারোর সব স্টাফকে মালিক আঠারোয় দিয়ে দেয়। এটাকে সৌভাগ্য মানেন শুভ। এরপর থেকে আঠারোয় শুভ কম করেও ৫০ বার ভ্রমণ করেছেন। এতে করে লঞ্চটির সবকিছু তার মনে গেঁথে গেছে। তাছাড়া প্রচুর ছবিও তুলেছেন। তারপর লঞ্চটি বানানোর কাজে হাত দেন। আর এই লঞ্চটি কোনো গ্রাহকের জন্য নয়, নিজের শখ পূরণেই বানাচ্ছেন শুভ। দুই বছর হতে চলল, এখনো কাজ চলছে।
শুভ বলছিলেন, 'রওনক ভাই নামের এক বড় ভাই কিছু আর্থিক সাপোর্ট দিয়েছেন আর বাকি সবই নিজের পকেট থেকে। যখন ১০০ টাকা হাতে এসেছে তখন ১০০ টাকা ঢেলেছি, যখন ১০ হাজার টাকা এসেছে তখন ১০ হাজার টাকা। লঞ্চটির ওজন ৬০ কেজি। মধ্যম গতিতে চালালে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। ভয়েস কন্ট্রোলড রিমোট দিয়ে চালানো যায়। এর দুটি ইঞ্জিন। একটি বন্ধ করে দিলে এক অক্ষের ওপরই এটি বাঁক নিতে পারে। ১২ ভোল্ট করে ২টি ব্যাটারি এতে লাগানো হয়েছে। একবার চালিয়েছিলাম লঞ্চটি, ভালোই চলেছিল, বেশ কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর এর গিয়ার বক্স বার্স্ট করে। সেটা সারাতে ভোলায় তরিকুল ভাইয়ের কাছে পাঠিয়েছি। এটা সারানো হয়ে গেলে কুরবানীর ঈদের পর নতুন করে রান দিব।'
লঞ্চটার খরচের বহর জানা যাবে নিচের তালিকা থেকেই- রেডিওট্রান্সমিটার ২৪০০০ টাকা, ইলেকট্রনিক স্পিড কন্ট্রোল (ইএসসি) এক জোড়া ১০ হাজার টাকা, ইলেকট্রিক মোটর ২৫০০ টাকা করে ২টি ৫০০০ টাকা, ফাইবারগ্লাস লেগেছে ১৫০০০ টাকার, প্লাস্টিক ৫০০০ টাকার, স্টিল ১৫০০০ টাকার, ১২ ভোল্টের একজোড়া লিথিয়াম ফসফেট ব্যাটারি ২৪ হাজার টাকা। প্রপেলারের প্লাস্টিক ছাঁচ তৈরি করিয়েছেন থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে, পরে তা পিতলে রূপান্তরিত করেছেন। এক জোড়া প্রপেলারের খরচ পড়েছে ৫৪০০ টাকা। পারাবত আঠারোর শুধু লাইটিংয়ে খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা। বাকি আর যেসব যন্ত্রপাতি যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর কথা প্রকাশ করতে চান না শুভ।
আগামীর পরিকল্পনা
ইতালি থেকে মুয়ীদ ভাইয়ের দেশে ফেরার কথা দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে। তখন পরিচিত সব বিল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে ২০০ কেজি ক্যাপাসিটির একটি লঞ্চ বানানোর কথা ভাবছেন শুভ। সেটা হবে একটা উৎসবমতো ব্যাপার।
শুভর একটি রকেট স্টিমার বানানোরও আগ্রহ আছে। তিনি বলছিলেন, 'মাহসুদ, লেপচা, টার্ন নামের রকেট স্টিমারগুলো আমাদের ঐতিহ্য। এখন তো সবগুলোকেই ঘাটে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলোতে সুভাষ বসু, জীবনানন্দ দাশ চড়েছেন। বঙ্গবন্ধুও অনেকবার যাতায়াত করেছেন স্টিমারগুলোয়। এগুলো হারিয়ে গেলে আমাদের ইতিহাসের অনেক উপাদান হারিয়ে যাবে। আমি চেষ্টা করব, অন্তত একটার রেপ্লিকা বানিয়ে স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে।'