সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে টহল দিচ্ছে পুলিশ রোবট!
সম্পূর্ণ প্রসারিত অবস্থায় এদের উচ্চতা ৭ ফুটেরও বেশি এবং ৩৬০ ডিগ্রি ভিশন, অর্থাৎ চতুর্দিকে দেখার ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিশেষ বস্তুটি যেকোনো আইনভঙ্গকারীকে দুইবার ভাবতে বাধ্য করবে। কিন্তু তারা রোবোকপ নয়। সিঙ্গাপুর পুলিশ বাহিনী এই দুটি রোবট নামিয়েছে দেশটির চাঙ্গি বিমানবন্দরে। পাঁচ বছরের ট্রায়ালের পর অবশেষে তারা রোবট দুটি ব্যবহার করছে।
উল্লেখ্য যে, সিঙ্গাপুর পুলিশ বাহিনীই প্রথম এ ধরনের রোবট ব্যবহার করছে। ভবিষ্যতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটি জুড়ে বিভিন্ন স্থানে ফ্রন্টলাইন পুলিশ অফিসারের সংখ্যা বাড়াতে আরও রোবট নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
গত এপ্রিল মাস থেকে চাঙ্গি বিমানবন্দরে টহল দিচ্ছে এই দুটি রোবট। সিঙ্গাপুর পুলিশ বাহিনী বলছে, এগুলো ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলো বিমানবন্দরে বাড়তি পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং পর্যবেক্ষণকারীর সংখ্যা বাড়ানো। তারা এই রোবটগুলোকে তাদের নতুন 'প্রযুক্তিগত হাতিয়ার' হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আর রোবটগুলোও স্রেফ চটকদার কোনো বস্তু নয়। পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, কোনো ঘটনা ঘটলে রোবটগুলো তাদের ব্লিংকার (সংকেত প্রদানমূলক এক ধরনের আলো), সাইরেন এবং স্পিকার ব্যবহার করে বেষ্টনী তৈরি করতে পারে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সত্যিকার পুলিশ এসে ঘটনাস্থলে পৌছাচ্ছে। সাধারণ জনগণও এই রোবটগুলোর সামনে থাকা একটি বাটন টিপে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে।
শুক্রবার সিঙ্গাপুর পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, শহর ও রাজ্যগুলোতে ক্রমেই এ ধরনের আরও রোবট নিয়োগ করা হবে।
"আমাদের বাহিনীর কাজের সঙ্গে রোবটিকস যুক্ত করায় এটা আমাদের ফ্রন্টলাইন কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের দায়িত্ব পূরণে আরও বেশি কার্যকর হয়ে উঠবেন", বলেন বিমানবন্দর পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট এবং অপারেশনস হেড লিম কে ওয়েই।
জানা গেছে, প্রতিটি রোবটের মধ্যেই অত্যাবশ্যক অংশ হিসেবে স্পিকার রয়েছে যা অডিও ম্যাসেজ সম্প্রচার করে এবং একটি রেয়ার এলসিডি প্যানেল রয়েছে যেখানে ভিজুয়াল ম্যাসেজ প্রদর্শিত হয়। রোবটগুলোর উচ্চতা প্রায় ১.৭ মিটার (৫.৫ ফুট) লম্বা, কিন্তু এগুলো সম্পূর্ণ প্রসারিত করে প্রায় ২.৩ মিটারের (৭.৫ ফুট) মতো লম্বা হতে পারে।
এছাড়াও, রোবটগুলোতে রয়েছে একাধিক ক্যামেরা যা ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ বা সকল দিকে দেখতে সক্ষম করে তোলে। এর ফলে বিমানবন্দর পুলিশের কাছে 'বাধাহীনভাবে' বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রমের চিত্র পৌঁছাবে, যা কর্তৃপক্ষকে বিমানবন্দরের কার্যক্রম আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।
প্রযুক্তি খাতে সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যেই বেশ এগিয়ে। ৫ মিলিয়নের বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে সর্বশেষ এই রোবটগুলোকে নাগরিক কর্তব্য পালনে নিয়োজিত করা হলো।
এর আগের সংস্করণের রোবটগুলোকে ২০১৮ ও ২০২২ সালে পাবলিক প্যারেডে মোতায়েন করা হয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারির সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে 'রোবট ডগ' ব্যবহার করা হয়েছিল। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন মেট্রো স্টেশন ও বিমানবন্দরে ক্লিনার রোবট তো হরহামেশাই চোখে পড়ে।
পরিবহন কর্মকর্তারা আশাবাদী যে আগামী দুই বছরের মধ্যেই 'কমার্শিয়াল ফ্লায়িং ট্যাক্সি'র স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে।
কিন্তু সিঙ্গাপুরের মতো একটি প্রযুক্তিনির্ভর দেশ, যেখানে প্রায়ই রোবট চোখে পড়ে; সেখানেও সর্বশেষ রোবটগুলোর কার্যকলাপের সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছে মানুষের।
আমেরিকান একজন ভ্রমণকারী স্যামওয়েল সোয়ান্ট তাদেরই একজন, যারা চার নম্বর টার্মিনাল দিয়ে যাওয়ার সময় দ্বিতীয়বার ফিরে এসে রোবটের দিকে তাকিয়েছেন! ভিয়েতনামে যাওয়ার ফ্লাইট ধরতে যাচ্ছিলেন তিনি।
"এটা সত্যিই দেখার মতো একটা জিনিস- যেন সিনেমা বা ব্ল্যাক মিরর থেকে উঠে আসা কিছু! এটা চোখ এড়িয়ে যাওয়া কঠিন", বলেন তিনি।
কৌতূহলী হয়েই রোবটটি কাছ থেকে দেখতে সাবধানে এর দিকে এগিয়েছিলেন স্যামওয়েল। আর তখনই তিনি দেখলেন যে একটা ক্যামেরা বেরিয়ে এল এবং ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠল।
"চ্যাটজিপিটি, এআই মিউজিক, রোবট... খুব শীঘ্রই মেশিন এ পৃথিবীকে দখল করে নেবে এবং এই সিকিউরিটি রোবটগুলোকে দেখে মনে হয় এরা খুবই গুরুত্বের সাথে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে", বলেন এই ভ্রমণকারী।