বেনামী ঋণের বোঝা ব্যবসায়ীদের উপর চাপানো হচ্ছে: বিটিএমএ সভাপতি
দেশে খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। তবে বেনামী ঋণ কত, তা নিয়ে কেউ লেখে না। খেলাপী ঋণের তুলনায় বেনামী ঋণ অনেক বেশি। ড্রাইভার, কর্মচারীদের নামে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। এখন ঋণ নেওয়া লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বেনামী এসব ঋণের বোঝা ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
রোববার রাজধানীর কারওয়ানবাজার সিএ ভবন অডিটোরিয়ামে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ আয়োজনে "মনেটারি পলিসি অ্যান্ড ইটস ইমপ্লিকেশন' শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, "গত বছর দেশে ৮.২ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি আমদানি করা হয়েছিলো। চলতি বছর খরচ হতে পারে ১০ বিলিয়ন ডলার। আমদানিনির্ভর জ্বালানি দিয়ে এদেশের ইন্ডাস্ট্রি খাতের উন্নয়ন হবে না। শিল্পখাতের ওপর অনেক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের অনেক ব্যবসায়ী কিছুদিন আগেও তেমন কিছু ছিলেন না। সেখানে বিদ্যুৎ ব্যবসা শুরু করার পরে তারা অনেক টাকার মালিক হয়েছেন।"
তিনি আরও বলেন, "ইন্ডাস্ট্রিয়াল বন্ড নামে কোনো বন্ড নেই। এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকগুলো ৩ মাসের জন্য ডিপোজিট নিয়ে ৬ বছরের জন্য লোন দিলে সমস্যায় পড়তে হয়।"
ইন্টারেস্ট রেট সস্তা হলে অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকাটা চলে যায় উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ডের পরিচালক মাহবুব আহমেদ বলেন, "ইন্টারেস্ট রেট কম হওয়ার কারণে ব্যাংক খাতে এনপিএল বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার যত কম ধার করবে, তত ভালো। সরকারকে বন্ডের মাধ্যমে টাকা যোগান দিতে হবে।"
"বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৭%, উন্নত দেশগুলোতে এটি ২৫% থাকে। বিষয়টি হাস্যকর এবং লজ্জাজনক", বলেন সাবেক এই আমলা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "আইএমএফের প্রেসক্রিপশন মেনে নতুন মুদ্রানীতি করা হয়েছে। আমার ধারণা তারা সবসময় ভালোর জন্য উপদেশ দেয় না।"
বাড়তে থাকা ল্যান্ডিং রেট এবং ডলারের রেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ডলারের ভিন্ন ভিন্ন রেটের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ডলারের রেট খুব বেশি বাড়ুক আমরা চাই না। রপ্তানিমূল্য আসতে দেরি হওয়ায় ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ফলে ফোর্সড লোন তৈরি হচ্ছে। এসব লোনের জন্যও আমাদের ১০% এর বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি এক্সপোর্ট অর্ডার মিনিমাম ৩০% কমেছে।"
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, "আমরা কখনো চাই না একটা দেশের রপ্তানি খাত একটিমাত্র খাত নির্ভর হয়ে যাক। তবে আমাদের দেশে শুধুমাত্র টেক্সটাইল খাত থেকেই প্রায় ৮৪% রপ্তানি আয় আসে। ভারতে আমরা গত এক বছরে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করেছি। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো নতুন দেশগুলোতে রপ্তানি করছি। ফলে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিতে রপ্তানিতে নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি থাকলেও নতুন দেশগুলোতে রপ্তানির উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে।"
তৈরি পোশাক খাতে আগামী কয়েক মাস নতুন কোনো বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বিনিয়োগ না হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে না। এই সেক্টরে যারা কাজ করছেন তাদের চাকরি টিকিয়ে রাখাটাই কঠিন হবে। আগামী ৬ মাস চ্যালেঞ্জিং হবে আমাদের জন্য।"
গোলটেবিলে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি জামালউদ্দিন আহমেদ, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম, দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের প্রধান শওকত হোসেন মাসুম এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা প্রমুখ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন।