উপাচার্যের বক্তব্য সংবাদে বিকৃতভাবে প্রকাশের অভিযোগে কুবিতে শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার
উপাচার্যের বক্তব্যকে ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশের পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সংবাদে উপাচার্যের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অভিযোগ এনে মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বুধবার (২ আগস্ট) সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
ইকবাল মনোয়ার ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি সংবাদপত্রের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।
জানা যায়, গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির মার্কেটিং বিভাগের নবীন বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনের একটি বক্তব্যকে ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ করেন মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ার।
ওই বক্তব্যে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কাছে 'ক্রিটিকাল থিংকিং'-এর বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, "বক্তব্যের এক অংশে উপাচার্য বলেন, 'মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে ক্রিটিকাল থিংকিং চর্চার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান তৈরির জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়োজিত থাকতে হবে। নতুন জ্ঞান তৈরির জন্য প্রচলিত ধারণা ও তত্ত্বের উপযুক্ততা বিচারে প্রশ্ন করতে হবে।'"
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, "ক্রিটিকাল থিংকিংয়ের বিষয়টি আরও পরিষ্কার করতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, 'প্রচলিত ধারণা হচ্ছে দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। এখন কোনো শিক্ষার্থী ভাবতে পারেন এ ধারণা ঠিক কি না! যেমন দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ে ও ক্রয়ক্ষমতা সৃষ্টি হয়।'"
এ সময় উদাহরণ দিয়ে উপাচার্য বলেন, 'যেমন তুমি দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করে পদ্মার পাড়ে গিয়ে ইলিশ খাও, তখন ওই এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। সুতরাং অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। প্রচলিত ধারণার বিপরীতে নতুন একটি ধারণা তখনই তৈরি হয়, যখন তুমি ক্রিটিকাল থিংকিং করতে পারো।'
এরপর উপাচার্য বলেন, 'আমি কিন্তু দুর্নীতির পক্ষে বলছি না। বরং বোঝার জন্য উদাহরণটি দিলাম। আমি নিজে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধ করেছি।'
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, উপাচার্যের এ বক্তব্য গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ইকবালকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বুধবার রেজিস্ট্রোরের দপ্তর থেকে তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
ইকবালের প্রতিবেদনে উপাচার্যের বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়: 'অনেকেই বলে দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উল্টো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলতে পারে। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মা পাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মা পাড়ের গরীব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে।
'তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি কখনো কোনো বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গা থেকে যদি বলি, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাঁধা নয়।'
মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমি উপাচার্যের বক্তব্যের তিন–চার মিনিট হুবহু কাট করে প্রচার করি। ওনার প্রায় সবকথার সারাংশই নিউজে আসে। অন্যান্য ইতিবাচক যেসব কথা বলেছেন, সেগুলোও নিউজে আসে। কিন্তু তারপরও আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।'
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সাংবাদিক সমিতি তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন করেছে বলে জানান ইকবাল।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'ওই শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ এখনো বহাল আছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।'