বরগুনায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বরগুনায় নয় হাজার ৮০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়ে গেছে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জেলার ছয়টি উপজেলায় ৪২টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় নয় হাজার ৮০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় কোন বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া পাওয়া যায়নি কোনো প্রাণহানি কিংবা নিখোঁজের খবরও।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জেলা ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে পানি প্রবেশ করে ১৩১টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩০ লাখ টাকা সমমূল্যের ২০ টন মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ায় ২৫০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হেক্টর জমির শাকসবজি, সাতটি আমবাগান ও পানের বরজসহ মরিচের বীজতলা।
বরগুনার কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক রমিজুল রহমান বলেন, অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের তুলনায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে আমাদের কমই ক্ষতিসাধন হয়েছে। এ কম ক্ষতিসাধনের পিছনে আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি একমাত্র কারণ।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলায় উৎপাদিত শতভাগ তরমুজ, বোরো ধান ঘরে তুলে নিয়েছিলো কৃষকরা। এছাড়াও ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছিল জেলায় উৎপাদিত ৫০ ভাগ ভুট্টা এবং ৬০ ভাগ মুগ ডাল।
তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সাধারণত কৃষি ক্ষেত্রেই বেশি ক্ষতি সাধিত হয়। কিন্তু আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি থাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষেত্রে তা হয়নি। কৃষি ক্ষেত্রে আমাদের বেশি ক্ষতিসাধন হয়েছে মুগডাল এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে। এছাড়াও কিছু সূর্যমুখী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ আমরা নিরূপণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, জলোচ্ছ্বাসের কারণে জেলার ২১৮টি মুরগি মারা গেছে। এছাড়াও জেলায় ১৫টি মুরগির খামার এবং ১৯টি গরুর খামারের শেড আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বরগুনায় সাড়ে এগারো ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই পানি নেমেও গেছে। আমরা ভেঙে যাওয়া বাঁধ দ্রুত মেরামত করার জন্য কাজ শুরু করেছি। এই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার এলাকার বেড়িবাঁধ পুনরায় নির্মাণ করতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলেও জানান তিনি।