এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব
গত ৩ আগস্ট তামিম ইকবাল ওয়ানডের অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটিই আলোচনা, কে হচ্ছেন নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক। সাকিব আল হাসানের নাম জোরেশোরে শোনা গেছে। নাম এসেছে লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজেরও। শেষমেষ সাকিবকেই অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে অধিনায়ক করা হয়েছে।
ওয়ানডের নেতৃত্ব পাওয়ায় তিন ফরম্যাটেই তিনি এখন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ২০২২ সালে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব পান সাকিব। শুক্রবার গুলশানে নিজ বাসভবনে সাকিবকে অধিনায়ক ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
গত সোমবার বিসিবিতে জরুরি এক সভায় অধিনায়কত্বের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরে জানানো হয়, বোর্ড থেকে অধিনায়ক নির্বাচনের দায়িত্ব বিসিবি সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার তিনদিনের মধ্যেই অধিনায়ক চূড়ান্ত করলেন তিনি।
সাকিবকে অধিনায়ক করার ঘোষণায় বিসিবি সভাপতি বলেন, 'এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে সাকিবকে অধিনায়ক করা হয়েছে। বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের দল আগামীকাল ঘোষণা করা হবে। আপাতত এশিয়া কাপের ১৭ জনের দল দেবেন নির্বাচকরা।'
বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, সাকিব তিন ফরম্যাটেই অধিনায়কত্ব করবেন কিনা, তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সাকিব যদি টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক থেকেই ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে চান, বিসিবি তা সাদরে গ্রহণ করবে।
'আমি মনে করি, ওর (সাকিব) জন্য তিন সংস্করণে একসঙ্গে অধিনায়কত্ব করা কঠিন। এটা ওর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করতে হবে। ও কোন সংস্করণে করতে চায়, কোনটা রাখতে চায়, যদি এক-দুই সংস্করণ চায়, তাহলে একরকম, আবার ও যদি বলে তিন সংস্করণেই করতে চাই, তাহলে তো সমস্যাই নেই। তো ওর ব্যাপারটা জেনে তারপরে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।' বলেন নাজমুল হাসান।
সাকিবকে অবধারিত পছন্দ মনে হয়েছে বিসিবি সভাপতির কাছে। অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'সামনে এখন এশিয়া কাপ, এরপরই বিশ্বকাপ। এত কম সময়ের মধ্যে আমার কাছে মনে হয়েছে, সবচেয়ে সহজ ও অবধারিত পছন্দ সাকিব আল হাসান। আরেকটা অটো চয়েজ আছে। সেটা হলো, ও না খেললে সহ-অধিনায়ক যে আছে, সে হবে, লিটন দাস।'
'আরও দুই-একটি নাম এসেছে, যেমন মেহেদী হাসান মিরাজ। দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করলে কে হবে, সেই আলোচনা থেকে। কারণ এখন তো ধরেন মুশফিক করছে না, তামিমও ছেড়ে দিল, সাকিবও যদি কখনও ছেড়ে দেয় তখন কী হবে...। ওরকম দীর্ঘ মেয়াদে যখন চিন্তা করব, তখন আরও নাম আসবে। এরকম নাম আসতেই পারে, সমস্যা নেই।' যোগ করেন তিনি।
তামিম নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিলেও ওয়ানডের নতুন অধিনায়কের আলোচনা অবশ্য আরও আগে শুরু হয়। জুলাইতে ঘরের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেন তামিম, তখনই অধিনায়কত্বের আলোচনার শুরু।
পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর অবসর ভেঙে ফেরার ঘোষণা দেন তামিম। তবে তখনকারই খবর, অধিনায়কত্বে ফিরতে চান না তামিম। অবশেষে সেটাই হয়েছে। আর বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেওয়ায় যাকে সবচেয়ে যোগ্য মনে করা হয়েছে, সেই সাকিবই পেলেন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফি বিন মুর্তজা চোটে পড়লে তিন ফরম্যাটেই সাকিবকে অধিনায়ক করা হয়। তার নেতৃত্বে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত খেলে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দফায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দীর্ঘ মেয়াদে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পান সাকিব। কিন্তু এ দফায় বেশিদিন অধিনায়কত্ব করা হয়নি তার।
অনৈতিক প্রস্তাব গোপন করায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে সাকিবকে এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাকিব হারানো সিংহাস ফিরে পান ২০২২ সালের জুনে। মুমিনুল হককে সরিয়ে তাকে টেস্টে অধিনায়ক করা হয়। আগস্টে গিয়ে পান টি-টোয়েন্টির নেতৃত্বও।
এবার এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ আসরে ওয়ানডের নেতৃত্বে ফেরানো হলো সাকিবকে। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে সর্বশেষ ২০১১ সালের আগস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন তিনি। তবে এরপরও তিনটি ম্যাচে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। ২০১৭ সালের মাসে চোটের কারণে মাশরাফি না থাকায় নেতৃত্ব দেন সাকিব, অধিনায়ক হিসেবে ওটাই তার সবশেষ ম্যাচ।
টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব, বাংলাদেশ জিতেছে ৪টি ম্যাচে। অধিনায়ক সাকিবের জয়ের গড় ২১.০৫, পাঁচটির বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৫০টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি, বাংলাদেশ জিতেছে ২৩টি ম্যাচে। জয়ের গড় ৪৬.০০, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে ১৬টি জয় এনে দিয়েছেন সাকিব। জয়ের গড় ৪১.০২, পাঁচটির বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কদের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।