এমএফএসের মাধ্যমে এক বছরে লেনদেন বেড়েছে ৪০%
মানুষজনের আস্থা এবং অভ্যস্ততা বাড়ায় গত এক বছরে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত জুনে এমএফএস ব্যবহার করে রেকর্ড ১.৩২ লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এ নিয়ে টানা চারমাস ধরে বিকাশ, রকেটের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে প্রতিমাসে লেনদেন হয়েছে ১ কোটি টাকার বেশি।
২০২২ সালের একই মাসে ৯৪,২৯৪ কোটি লেনদেন হয়েছিল। এমনকি, চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুনে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ২৪,০০০ কোটি টাকা।
বিকাশের কর্পোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম টিবিএসকে বলেন, "পবিত্র ঈদুল আজহা ছিল জুন মাসে। স্বাভাবিকভাবেই ঈদের সময়ে লেনদেন অনেক বেড়ে যায়। মানুষজন কেনাকাটা করে, প্রিয়জনকে টাকা পাঠায়, বেতন-বোনাস, রেমিট্যান্সসহ দৈনন্দিন কাজে বিকাশের মতো এমএফএস ব্যবহার করে। এসব কারণে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।"
"এছাড়া, ঈদ উপলক্ষে আমরা গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের অফার দিয়ে থাকি। ঈদ পরবর্তী সময়েও নতুন নতুন অফার দেওয়া হয়। মূলত গ্রাহকদের লেনদেনে আকৃষ্ট করা ও অভ্যস্ত করাই আমাদের লক্ষ্য," বলেন তিনি।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএফএস চালু হওয়ার পর প্রথম দিকে সার্ভিসটি কেমন হবে, সেটি নিয়ে গ্রাহকেরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বুঝতে পেরেছেন এমএফএসে আস্থা রাখা যায়। এ কারণেই এই খাতে লেনদেন খুব দ্রুত বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, রেমিট্যান্স, এবং স্যালারি ডিসবার্সমেন্টে (বেতন বিতরণ) গত জুন মাসে রেকর্ড লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে এমএফএস ব্যবহার করে স্যালারি ডিসবার্সমেন্ট দ্বিতীয়বারের মতো ৫,০০০ কোটির টাকা অতিক্রম করেছে।
এছাড়া, জুন মাসে এমএফএস ব্যবহার করে ১,০৮১ কোটি টাকার মোবাইল টকটাইম কেনা হয়েছে।
শামসুদ্দিন হায়দার বলেন, অধিকাংশ গ্রাহকই দোকানে গিয়ে ফোন রিচার্জ করার ঝামেলা এড়াতে এখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেন। এরমধ্যে একটি বড় অংশই এমএফএস ব্যবহার করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, সুপারমার্কেট এবং ব্যবসায়ে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ জুন মাসে প্রথমবারের মতো ৬,৫৯৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়, যা আগের বছর ২০২২ সালের একই মাসে ৩,১২৭ কোটি টাকা ছিল। অর্থাৎ গত এক বছরে মার্চেন্ট পেমেন্টে বেড়েছে ১১১ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, "আমরা দেশকে ক্যাশলেস সোসাইটিতে পরিণত করতে চাচ্ছি। এ লক্ষ্যে এমএফএস খাত অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। এমন অনেকে আছেন, যাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে একেবারেই সংশ্লিষ্টতা নেই, তাদেরকেও আমরা এমএফএসের মাধ্যমে ফর্মাল চ্যানেলে নিয়ে আসতে পেরেছি।"
"দেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটি বড় অংশ এই মাধ্যম ব্যবহার করে লেনদেন করছে। এছাড়া, এমএফএস ব্যবহার করে মার্চেন্ট পেমেন্ট বৃদ্ধিকে আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখছি। এতে দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা বেড়েছে," যোগ করেন তিনি।
গত জুন মাসে এমএফএস ব্যবহার করে সরকার ৪,০৬৭ কোটি উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা বিতরণ করেছে। এর আগে, কোভিডকালীন সময়েও এমএফএস ব্যবহার করে এই পরিমাণ টাকা বিতরণ করেনি সরকার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে মোট এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০.৭২ কোটি। কেবল এক মাসের ব্যবধানে গ্রাহক বেড়েছে ৩৩ লাখ। এই গ্রাহকরা শুধু জুন মাসেই ৫৭ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন করেছেন, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএফএসে মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও একক গ্রাহকের সংখ্যা এত বেশি নয়। কারণ একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন, ফলে সংখ্যাটি বড় দেখায়।
দেশে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাইক্যাশ এবং শিওরক্যাশের মতো বিভিন্ন এমএফএস দিচ্ছে বর্তমানে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১৩টি।