ভারত স্থানীয় মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় রাশিয়া থেকে মূল্যছাড়ে গম আমদানির কথা ভাবছে
আগামী কয়েক মাসে ভারতে রাজ্য পর্যায়ের কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছরে হবে জাতীয় নির্বাচন। তার আগেই বাজারে জোগান বাড়িয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে চায় নয়াদিল্লি। এজন্য রাশিয়া থেকে গম কেনার চিন্তা করছে।
বিশ্ববাজারে শস্যটির দাম যখন বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে– তখন মিত্র রাশিয়ার থেকে মূল্যছাড়ে গম কিনতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্রের বরাতে এবিষয়ে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ভারতের স্থানীয় বাজারে গমের দাম বাড়ায়, তা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিয়ে গত জুলাইয়ে ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু, আমদানি করা মজুদ থাকলে পরিমাণমতো বাজারে ছেড়ে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রাশিয়া থেকে গম আমদানির বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র রয়টার্সকে বলে, 'সরকার থেকে সরকারের মধ্যে চুক্তি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে আমদানির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে সরকার। খুব সতর্কভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
বেশ কিছু বছর ধরেই কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে গম আমদানি করছে না ভারত। সবশেষ ২০১৭ সালে ভারত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গম আমদানি করে। সেবছর বেসরকারি বণিকেরা ৫৩ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করে।
সংশ্লিষ্ট আরো দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, জালানি, শস্য ও ডালের মতো পণ্যদ্রব্যের দাম কমাতে সরকার এসব পণ্যের জোগান বাড়ানোর যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, তারই একটি হবে রাশিয়া থেকে আমদানি। এর পাশাপাশি গ্রামীণ কিছু কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে, যাতে দরিদ্রদের ওপর মূল্যস্ফীতির আঘাত কিছুটা কমানো যায়।
আমদানি নিয়ে ভারত ও রাশিয়ার সরকারের আলোচনাটি গোপনীয় এবং তা চূড়ান্ত হতে আরো কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে, একারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম না প্রকাশের শর্তে এসব বিষয় জানান।
এবিষয়ে মন্তব্য চেয়ে ভারতের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ইমেইল পাঠায় রয়টার্স। কিন্তু, সরকারের মুখপাত্ররা তার উত্তর দেননি।
গত মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠতম কর্মকর্তা সঞ্জিব চোপড়া বলেছিলেন, রাশিয়া থেকে গম আমদানির কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি।
গমের নিম্ন মজুদ
আরেকটি সূত্র জানায়, ঘাটতি মেটাতে ভারতের ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন গম আমদানির প্রয়োজন হবে। কিন্তু, বাজারে দাম আরো কমাতে নয়াদিল্লি ৯০ লাখ টনের মতো আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মূল্যছাড়ে জ্বালানি তেল বিক্রির মাধ্যমে ভারতের দ্বিতীয় বৃহৎ পণ্য সরবরাহকারী হয়ে ওঠে রাশিয়া।
একজন কর্মকর্তা বলেন, 'বিদ্যমান বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে গম বিক্রির ইঙ্গিত দিয়েছে রাশিয়া। তাছাড়া, দেশটি থেকে খাদ্য আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।'
ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত রাশিয়া থেকে সূর্যমুখীর তেল কিনে তার দাম মেটাচ্ছে মার্কিন ডলারে। গমের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি গ্রহণের পরিকল্পনা আছে।
বৈশ্বিক একটি বণিক সংস্থার মুম্বাইভিত্তিক একজন ডিলার বলেন, 'ভারত খুব সহজে প্রতি টন ২৫ থেকে ৪০ ডলার মূল্যে রাশিয়ান গম কিনতে পারবে। এতে আমদানির পরও এসব চালানের দাম বেশ কমই থাকবে।'
প্রসঙ্গত গত দুই মাসে সীমিত সরবরাহের কারণে ভারতের পাইকারি বাজারে গমের দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি আগস্টে যা সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।
গত ১ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি গুদামগুলোয় ২ কোটি ৮৩ লাখ টন গম মজুদ ছিল, যা ১০ বছরের গড় মজুদের চেয়ে ২০ শতাংশ নিম্ন অবস্থানে আছে।