সৌদি রোলেক্স ঘড়ি যুক্তরাষ্ট্রে মলে বিক্রির অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে পারেন বলসোনারো
গত বছর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। চলতি বছরের জুনে তাকে আট বছরের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে নিষিদ্ধ করেছেন দেশটির সুপ্রিম ইলেক্টোরাল কোর্ট। কিন্ত ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর জন্য শীঘ্রই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। ব্রাজিলজুড়ে তার সমর্থক এবং সমালোচক, উভয় পক্ষেরই আশঙ্কা- পরবর্তী টুইস্ট হতে পারে বলসোনারোর গ্রেপ্তার।
প্রতারণা এবং নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে সম্প্রতি একাধিক তদন্তের মুখে পড়েছেন ৬৮ বছর বয়সী বলসোনারো। এসব তদন্তের ফলে এরই মধ্যে তার ঘনিষ্ঠ কিছু সহযোগীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বলসোনারোরও একই পরিণতি হওয়ার আভাস দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু যে অভিযোগকে কেন্দ্র করে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট সবচেয়ে চাপে রয়েছেন সেটিকে ছোটখাট একটা মাফিয়া কেলেঙ্কারি বলা যায়: প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় পাওয়া ঘড়ি আত্মসাৎ এবং সেটি পেনসিলভানিয়ার এক শপিংমলে বিক্রি করা।
চলতি মাসে ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ একটি তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযান চালায়। পুলিশের ভাষ্যে, বলসোনারো প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সৌদি আরব ও অন্যান্য দেশ থেকে যেসব মহামূল্যবান উপহার পেয়েছিলেন, তিনি ও তার সহযোগীরা মিলে সেগুলো আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছেন। সেরকমই একটি অভিযোগ এসেছে বলসোনারোর ব্যক্তিগত সহযোগীর বিরুদ্ধে যে তিনি গত বছর হীরা বসানো একটি রোলেক্স ঘড়ি এবং একটি পাতেক ফিলিপ্পে ঘড়ি পেনসিলভানিয়ার উইলো গ্রোভ পার্ক মলের একটি অলংকারের দোকানে বিক্রি করেছেন।
ফেডারেল পুলিশ বলছে, ঘড়ি দুটি বিক্রি থেকে প্রায় ৬৮,০০০ ডলার নগদ আয় করেছেন বলসোনারো।
এক সাক্ষাৎকারে বলসোনারোর আইনজীবী পলা কুনহা বুয়েনো বলেন, বলসোনারো কূটনৈতিক সম্পর্কসূত্রে পাওয়া উপহার বিক্রির চেষ্টা করেছেন কিনা সেই প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক, কারণ এর আগে একটি সরকারি প্যানেল রায় দিয়েছে যে এসব উপহারের অধিকাংশই বলসোনারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি, রাষ্ট্রের নয়। বুয়েনোর ভাষ্যে, "এটা তার অধিকার। এতে কিছু যায় আসে না।"
ব্রাজিলের আইন বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের দামি উপহার অবশ্যই রাষ্ট্রের সম্পত্তি এবং এগুলো নিজে কুক্ষিগত করে রাখলে বলসোনারো আইনি জটিলতায় পড়বেন। ব্রাজিলের সাবেক এক আইনমন্ত্রী মিগুয়েল রিয়ালে বলেন, "আমার মনে হয়, উপহার আত্মসাতের জন্য বলসোনারো ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হবেন না।" এ ধরনের অভিযোগে সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানান তিনি। তার ভাষ্যে, "প্রেসিডেন্টের জন্য এটা খুবই নাজুক একটা পরিস্থিতি।"
বলসোনারোর এই মামলার সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই দুই উগ্র ডানপন্থী নেতা নিজেদের দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমণ করে কথা বলেছিলেন, কিন্তু এখন দুজনের বিরুদ্ধেই প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় পাওয়া বিদেশি উপহার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
হাউজ ডেমোক্রেটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় পাওয়া একশোর বেশি বিদেশি উপহারের যথাযথ নথিপত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনেছেন; যেসব উপহারের মূল্য ২৫০,০০০ ডলারেরও বেশি।
এদিকে বলসোনারোর বিরুদ্ধে শুধু উপহার আত্মসাতেরই নয়, তার বিরুদ্ধে চলছে আরও অনেক অভিযোগের তদন্ত। ব্রাজিলের রাজধানীতে ৮ জানুয়ারির দাঙ্গায় বলসোনারোর সম্পৃক্ততা, কোভিড ভ্যাকসিন রেকর্ড মিথ্যা প্রমাণিত করার জন্য একটি স্কিম, সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারকের পেছনে গুপ্তচরবৃত্তি এবং নির্বাচনের দিন বিরোধী দলের ভোটারদের ধরে আনার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ার মতো অভিযোগগুলোর তদন্ত চলছে।
বলসোনারো অবশ্য প্রতিটি মামলায়ই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি অভিযোগগুলোকে বানোয়াট ও রাজনৈতিকভাবে হেনস্থার চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন।