৫ম দেশ হিসেবে চন্দ্রবিজয়ের লক্ষ্যে নভোযান পাঠাল জাপান
চাঁদ নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) নভোযান পাঠিয়েছে জাপান। নিজস্ব এইচ-আইআইএ রকেটে করে এ নভোযান উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। খবর রয়টার্স-এর।
এর মাধ্যমে, সব ঠিক থাকলে, আগামী বছরের শুরুতে চাঁদে অবতরণকারী পঞ্চম দেশ হওয়ার যাত্রা শুরু করল জাপান।
জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সা) জানিয়েছে, পরিকল্পনামাফিক রকেটটি জাপানের দক্ষিণের তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণের পর রকেটটি থেকে স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেটিং মুন (স্লিম) নামক নভোযানটিকে সফলভাবে মহাশূন্যে ছাড়া হয়েছে।
এর আগে গত মাসে আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে এক সপ্তাহে তিনবার উৎক্ষেপণটি স্থগিত করা হয়েছিল।
জাপান তার নভোযানটির নাম দিয়েছে 'মুন স্নাইপার'। জাক্সা চন্দ্রপৃষ্ঠের নির্ধারিত অবতরণস্থলের ১০০ মিটারের মধ্যে স্লিমকে সফলভাবে নামানোর চেষ্টা করবে। ১০০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় এক হাজার ৯৯ কোটি টাকা) এ মিশনের লক্ষ্য আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝে চন্দ্রজয় করা।
বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চন্দ্রযান-৩- মিশনের মাধ্যমে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে নভোযান অবতরণের দুই সপ্তাহ পর জাপান তার চন্দ্রবিজয়াভিযান শুরু করল।
এর আগে গত বছর চাঁদে অবতরণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল জাপান। নভেম্বরে অমোতেনাশি ল্যান্ডারের সঙ্গে জাক্সা'র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে অবতরণের চেষ্টা বাদ দিতে হয়। এছাড়া এপ্রিলে জাপানি স্টার্টআপ আইস্পেস-এর তৈরি হাকুতো-আর মিশন ১ ল্যান্ডারটি চন্দ্রপৃষ্ঠে নামতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়।
বৃহস্পতিবার এইচ-আইআইএ রকেটে করে জাপান এক্স-রে ইমেজিং অ্যান্ড স্পেক্ট্রোস্কপি মিশন (এক্সরিজম) নামক একটি স্যাটেলাইটও পাঠিয়েছে। এটি জাক্সা, নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি'র যৌথ প্রকল্প।
এইচ-আইআইএ রকেটিটি তৈরি ও উৎক্ষেপণের দায়িত্বে ছিল জাপানি কোম্পানি মিতসুবিশি। ২০০১ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৭টি এইচ-আইআইএ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে জাপান। এ রকেটের সাফল্যের হার প্রায় ৯৮ শতাংশ।
এ দশকের শেষের দিকে চাঁদে নিজেদের নভোচারী পাঠাতে চায় জাপান।
পৃথিবীবাসীর চাঁদে অভিযান
এখন পর্যন্ত বিশ্বের মোট চারটি দেশ — রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত — সফলভাবে চাঁদে নিজেদের নভোযান অবতরণ করাতে পেরেছে।
প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৫৯ সালে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সফলভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে নিজেদের লুনা ২ নভোযান অবতরণ করায়। এর মাধ্যমে মানুষের তৈরি কোনো বস্তু প্রথমবারের মতো চাঁদের পৃষ্ঠ স্পর্শ করেছিল।
আর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম সফলভাবে নভোযান অবতরণ করানো দেশ ভারত। এ বছরের ২৩ আগস্ট নিজেদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় চন্দ্রযান-৩ মিশনের মাধ্যমে নিজেদের নভোযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করিয়ে চতুর্থ চন্দ্রবিজয়ী দেশের খেতাব পায় ভারত।
চাঁদে নভোযান অবতরণে দ্বিতীয় দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৬৬ সালের মে মাসে দেশটির সার্ভেয়র ১ নভোযান চাঁদের বুকে অবতরণ করে। এর তিন বছর পর, ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনের মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদে মানুষ পাঠায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণাসংস্থা নাসা। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো দেশ চাঁদে মানুষ পাঠায়নি।
অ্যাপোলো ১১-এর নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং প্রথম মানব হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই চাঁদের বুকে পদার্পণ করেন। চাঁদে পা রাখার মুহূর্তে তিনি তার সেই বিখ্যাত লাইনটি বলেছিলেন — 'মানবের জন্য ছোট্ট একটি পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য বিশাল এক লাফ।'
মিশনটির তিন নভোচারীর মধ্যে আর্মস্ট্রংয়ের পরপরই চাঁদে নামেন এডউইন 'বাজ' অলড্রিন। মিশনের অপর নভোচারী মাইকেল কলিন্স চাঁদে নামেননি, তবে তিনি মূল নভোযান কলম্বিয়ায় চড়ে চাঁদের চারপাশ প্রদক্ষিণ করেছিলেন।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তৃতীয় দেশ হিসেবে চীনের চ্যাংগি-৩ নভোযান চাঁদে অবতরণ করে। এরপর ২০১৯ সালে দেশটির চ্যাংগি-৪ নভোযান প্রথমবারের মতো চাঁদের অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশে (যা পৃথিবী থেকে দেখা যায় না) সফলভাবে নামে।
ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশনের এক সপ্তাহের কম সময় আগে রাশিয়া চাঁদে অবতরণের উদ্দেশ্যে লুনা-২৫ মিশন পরিচালনা করেছিল। কিন্তু দীর্ঘ ৪৭ বছর পর নেওয়া রুশ এ উদ্যোগ ব্যর্থ হয় — লুনা-২৫ অবতরণের কক্ষপথ নিয়ে জটিলতার মুখে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের বুকে বিধ্বস্ত হয়।
সবমিলিয়ে ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মোট ২৪ জন মার্কিন নভোচারী পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন। তবে এদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ নভোচারী চাঁদের বুকে হেঁটেছেন।
তারা সবাই বিভিন্ন অ্যাপোলো মিশনের নভোচারী। অ্যাপোলো ১১ মিশন বাদে অন্য নভোচারীরার হলেন পিট কনার্ড, অ্যালান বিন (অ্যাপোলো ১২); অ্যালান শেপার্ড, এডগার মিচেল (অ্যাপোলো ১৪); ডেভিড স্কট, জেমস আরউইন (অ্যাপোলো ১৫); জন ইয়াং, চার্লস ডিউক (অ্যাপোলো ১৬); এবং জিন সার্নান, হ্যারিসন শ্মিট (অ্যাপোলো ১৭)।
তথ্যসূত্র: নাসা, রয়্যাল মিউজিয়াম গ্রিনিচ